নিজস্ব সংবাদদাতা: এতদিন বলা হচ্ছিল প্যানেলের নিচের দিকে নাম থাকার পরেও চাকরি দেওয়া হয়েছে কিন্তু এবার যা সামনে এল তা আরও মারাত্মক! জানা গেছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (West Bengal Central School Service Commission (SSC) )পরীক্ষাতেই বসেননি এমন ২২২জনকে নিয়োগপত্র দিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন! স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমনই নজিরবিহীন দুর্নীতি সামনে আসায় শুক্রবার তোলপাড় রাজ্য । শুক্রবার আদালতে এই সম্পর্কিত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন আদালতেরই নিযুক্ত করা রঞ্জিত বাগ কমিটি। সেই রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে যে ৩৮১ জনকে মেয়াদ শেষের পরেও নিয়োগ করা হয়েছিল তারমধ্যে ২২২ জনই পরীক্ষাতেই বসেনি আর বাকিরা পরীক্ষায় বসেও পাশ করতে পারেননি।
রঞ্জিত বাগ কমিটির ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মেয়াদ শেষের পরেও ৩৮১ জনকে সুপারিশপত্র! তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুমোদন প্রাপ্ত উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক শান্তিপ্রসাদ সিনহা ভুয়ো সুপারিশপত্র কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে দিতেন। সেই সুপারিশপত্রের ভিত্তিতে নিয়োগপত্র তৈরি করাতেন কল্যাণময়। এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি আনন্দ কুমার মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানিতেই বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের কমিটি গ্রুপ সি নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট জমা দেয়। উল্লেখ্য প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পেন্ডিং রিক্রুটমেন্ট শেষ করতে বলেন। তাঁর নির্দেশেই পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়।
কারা কারা এই দুর্নীতিতে জড়িত তার নামও প্রকাশ করেছে কমিটি। বলা হয়েছে আট জনের নাম। এঁরা হলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রোগ্রামিং অফিসার সমরজিৎ আচার্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিব অশোককুমার সাহা, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, বোর্ডের টেকনিক্যাল অফিসার রাজেশ লায়েক এবং কমিশনের আঞ্চলিক চেয়ারম্যানের পদে থাকা শর্মিলা মিত্র, শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শেখ সিরাজউদ্দিন, মহুয়া বিশ্বাস, চৈতালি ভট্টাচার্য।
এঁদের মধ্যে সৌমিত্র সরকার, অশোক কুমার সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিনহা, সমরজিৎ আচার্যর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এফআইআর করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই রিপোর্টে বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, চৈতালি ভট্টাচার্য, শর্মিলা মিত্র, মহুয়া বিশ্বাস, শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শেখ সিরাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এদিনের শুনানিতে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য ও অরুণাভ ঘোষ বলেছেন,এই কমিটির রিপোর্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিরাট বড় দুর্নীতি হয়েছে এই নিয়োগে। আর উপর মহলের নির্দেশ ছাড়া এটা সম্ভব নয়। বলা বাহুল্য ইঙ্গিত প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই। নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির এই রিপোর্ট প্রকাশ করতে গিয়ে বাগ কমিটি তার রিপোর্টে বলেছেন, সর্বোচ্চ স্তরের আধিকারিকদের পাশাপাশি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীও জড়িত। আগামী বুধবার এই মামলার রায় ঘোষণা করতে চলেছে আদালত।
ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে রাজ্য জুড়ে। অনেকের মতে পশ্চিমবাংলায় এই ধরনের দুর্নীতি আর কোনও সরকারের আমলে কোনও দিনই হয়নি। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ” শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ধারাবাহিক চক্রান্তের এটি একটি প্রক্রিয়া।’ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষক সংগঠনগুলিও। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলছেন, ” শিক্ষাক্ষেত্রে এই চূড়ান্ত দুর্নীতি আমাদের চরম লজ্জার। কোনভাবেই তা বরদাস্ত করা যায় না। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের অবিলম্বে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।”