নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের গর্বিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। একই সাথে শিক্ষারত্ন পেতে চলেছেন জেলার ৩জন শিক্ষক যার মধ্যে মেদিনীপুর শহর ও দাঁতন ছাড়াও রয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক। উল্লেখ্য শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য প্রতিবছর রাজ্যসরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর শিক্ষক দিবসের দিন রাজ্যজুড়ে বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে “শিক্ষারত্ন” সম্মানে ভূষিত করা হয়।প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয় স্তর থেকে শিক্ষক- শিক্ষিকাদের বেছে নেওয়া হয় এই বিশেষ সম্মানের জন্য।
প্রতিবছর ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিন মনোনীত শিক্ষকদের হাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় “শিক্ষারত্ন” পুরস্কার তুলে দিতেন। অতিমারির কারনে তার কিছু ব্যতিক্রম হয়েছে। এবছর “শিক্ষারত্ন” সম্মান প্রাপকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। দেখা যাচ্ছে সেই তালিকায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে স্থান পেয়েছেন তিন শিক্ষক। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই ত্রিরত্ন হলেন ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী, শিক্ষক স্বপন দাস প্রধান এবং অধ্যাপক ড. অজয় কুমার মিশ্র।
ডঃ বিবেকানন্দ চক্রবর্তী মেদিনীপুর শহরের বিপ্লবীদের অন্যতম পীঠস্থান মেদিনীপুর টাউন স্কুলের(বয়েজ) প্রধান শিক্ষক। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পরিচিতির বাইরেও তাঁর অন্য পরিচয় বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক হিসাবে। মাধ্যমিক বিভাগ থেকে তিনি এবার নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে জেলায় প্রাথমিক বিভাগ থেকে এই পুরস্কারে এবার সম্মানিত হচ্ছেন দাঁতন ১ নং ব্লকের দোয়াস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন দাস প্রধান। অপর দিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়স্তর থেকে এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড.অজয় কুমার মিশ্র।
মেদিনীপুর টাউন “হেরিটেজ” উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিনে জাতীয় স্তরে শিক্ষক হিসেবে “রাষ্ট্রপতি পুরস্কার”-এ ভূষিত হন। ইংরেজি সাহিত্যের এই বিদগ্ধ ও পন্ডিত এই মানুষটি সারা বিশ্বজুড়ে তাঁর জ্ঞান ও গরিমার স্বাক্ষর রেখেছেন বিভিন্ন বক্তৃতা ও শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠানে। ইতিমধ্যেই তাঁর ১৪ টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে । ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং মালয়েশিয়ার মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়ে পেয়েছেন সম্মাননা পত্র। একাধিক আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ফেলোশিপ পেয়েছেন। শ্রীলংকা থেকে আমন্ত্রিত হয়ে পেয়েছেন ‘ইন্টার্নেশনাল পিস অ্যাম্বাসেডর’ সম্মান।
দাঁতনের মোহনপুর ব্লকের পুরুনীয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া মেদিনীপুরের কৃতি ভূমিপুত্র ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী ২০০৬ সালে মেদিনীপুর টাউন স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১০ সালে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মেদিনীপুর টাউন স্কুল “হেরিটেজ” ঘোষিত হয়। বর্তমানে, জেলা শহর মেদিনীপুরের বাসিন্দা ড. চক্রবর্তী একজন বিশিষ্ট “রবীন্দ্র গবেষক” এবং লেখক রূপেও সর্বজনবিদিত।বিদগ্ধ পণ্ডিত্যের অধিকারী ডঃ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “এই সম্মান শুধু আমার নয়, আমার বিদ্যালয়েরও। আমার বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী-কে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে এই সম্মান। সর্বজন শ্রদ্ধেয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর-কে অন্তরের অন্তর্স্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই।”
অন্যদিকে, মেদিনীপুরের দাঁতনেরই ভূমিপুত্র তথা বাসিন্দা স্বপন দাস প্রধান এবারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এবার জেলা থেকে একমাত্র এই সম্মান প্রাপক। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত দোয়াস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়-কে তিনি জেলার অন্যতম একটি “মডেল স্কুল”-এ এ রূপায়িত করেছেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পরিবেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে এই বিদ্যালয় জেলার অন্যতম গর্ব। তাঁর এই সম্মান শুধু বিদ্যালয় নয়, সমগ্র দাঁতন বাসীকে গর্বিত করেছে বলে তাঁর সমাজ মাধ্যম অ্যাকাউন্টে একাধিক ব্যক্তি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সদাহাস্যময় ও বিদ্যালয়ের জন্য নিবেদিত প্রাণ স্বপন দাস প্রধান বাবু তাঁর নিরলস পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই বিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন ঘটিয়ে “শিক্ষারত্ন- ২০২১” সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি,রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ছাড়াও, তাঁর পাশে থাকার জন্য বিদ্যালয়ের সহকর্মী বৃন্দ থেকে শুরু করে এলাকাবাসীর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
এছাড়াও এবারে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় “শিক্ষরত্ন” সম্মান পাচ্ছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. অজয় কুমার মিশ্র। তিনি তাঁর বিদগ্ধ পাণ্ডিত্য,শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এই সম্মানে সম্মানিত হচ্ছেন। ফলিত রসায়নবিদ্যায় অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী গবেষক মিশ্রের একাধিক জার্নাল প্রশংসিত হয়েছে দেশ বিদেশে। এবার অতিমারি আবহের কারনে গত বছরের মতো এবারও কলকাতার রাজ্যস্তরীয় অনুষ্ঠানের পরিবর্তে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের দপ্তর থেকেই আগামী ৫ সেপ্টেম্বর এই তিন জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক ডাঃ রশ্মি কমল।
