Saturday, July 27, 2024

National Awarad: দুই দূর্গার হাত ধরে এবার জোড়া রাষ্ট্রপতি (জাতীয়) পুরস্কার পাচ্ছে সবং! গৌরীর গর্বে গর্বিত বালিচকও

- Advertisement -spot_imgspot_img

নরেশ জানা: আর এক আধটা নয় একেবারে জোড়া রাষ্ট্রপতি পুরস্কার আসছে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে। আসছে সবংয়ের দুই দূর্গা গৌরী জানা ও গৌরী দাসের হাত ধরে। করোনা পরিস্থিতির জন্য বিলম্বিত হচ্ছে সমস্ত প্রক্রিয়া। প্রায় ২বছর পিছিয়ে গেছে হস্তশিল্পে (হ্যান্ডলুম) জাতীয় পুরস্কার দান প্রক্রিয়া। জানা গেছে ২০১৮ সালে বুননশিল্প জন্য জাতীয় পুরস্কার দানের আবেদন পত্র পাঠানোর জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল ২০১৯ সালে। এরপরেই করোনা পরিস্থিতির জন্য পিছিয়ে যায় সমস্ত প্রক্রিয়া। অতি সম্প্রতি এসেছে এই শুভ সংবাদটি। কেন্দ্রের ডেভলপমেন্ট কমিশনার (হস্তশিল্প) সূত্রে জানা গিয়েছে ২০১৮ সালের জাতীয় হস্তশিল্প পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন সবং থানার সারতা গ্রামের দুই গৃহবধূ গৌরী দাস ও গৌরী জানা। স্বাভাবিক ভাবেই খুশির হাওয়া দুই পরিবারেই।
খবরটি এখনও সরকারি ভাবে সম্প্রচারিত হয়নি। ফলে প্রকাশও পায়নি সেই ভাবে। যদিও ডেভলালমেন্ট কমিশনারের নিজস্ব সূত্র থেকে এই খবর নিশ্চিত করেছে ‘কেজিপি বাংলা’র নিজস্ব সূত্র।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

পাশাপাশি একই ভাবে সবংয়ে হস্তশিল্পের উন্নতি ও প্রসার নিয়ে নিরন্তর কাজ করে যাওয়া কলকাতার একটি সংগঠন ‘বাংলা নাটক ডট কম’ সূত্রেও নিশ্চিত করা হয়েছে এই সংবাদ। নয়া দিল্লির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের পরিচিত আধিকারিকদের কাছ থেকে দুটি পরিবারই জেনেছে এই খবর। আর জানার পরই খুশির বন্যা দুই পরিবারে।
১৯৯২ সালে এই সারতা গ্রাম থেকে মাদুর শিল্পের ওপর প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন পুষ্পরানী জানা। সবংয়ের মাদুরের বিশ্ব পরিচিতি ছিল আগেই। পুষ্পরানী জানা জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর তা আরও বেশি সমাদৃত হয়। যেহেতু ভারতের রাষ্ট্রপতি স্বয়ং এই পুরস্কার প্রদান করেন তাই এই পুরস্কার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার নামেও পরিচিতি লাভ করে।

এরপর বিভিন্ন সময়ে পুরস্কার পেয়েছেন অলক জানা ও মিঠু জানা সহ আরও অনেকে । ২০১৬ সালে এই মাদুরের ওপর জাতীয় পুরস্কারটি পেয়ে ছিলেন তাপস জানা। ঘটনাক্রমে তাপস জানা হলেন এবারে পুরস্কার প্রাপক গৌরী জানার স্বামী। আর তার ২বছর পর একেবারে জোড়া রেকর্ড সবংয়ের মাটিতে। একই সঙ্গে জোড়া জাতীয় পুরস্কার। সারা দেশ থেকে মোট ২২ জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন। নগদ ১লক্ষ টাকা পুরস্কার মূল্য ছাড়াও রয়েছে স্মারক, সম্মানপত্র, শাল ইত্যাদি।

এবারের প্রতিযোগিতায় গৌরী দাস এবং গৌরী জানা দু’জনেই পাঠিয়েছিলেন তাঁদের হাতে বোনা মসলন্দ (Mashland) যা স্থানীয় ভাষায় মছলন্দি বলেই পরিচিত। গৌরী দাস তাঁর মসলন্দটির দু’পাশে যে নকশা বুনেছেন তাই মন কেড়ে নিয়েছে বিচারকদের। তার চেয়েও বড় কথা মাত্র ২৫০গ্রাম ওজনের এই মাদুর কেউ অনায়াসে তার পার্সে ভরে নিতে পারেন। অন্যদিকে গৌরী জানার মসলন্দটিতে মাদুর কাঠি দিয়ে এঁকেছেন রামায়ণের সীতা হরনের পালা। চেরা মাদুরের কাঠি দিয়ে বোনা সেই অনুপম শিল্প সৌন্দর্য জিতে নিয়েছে বিচারকদের মন।

গৌরী জানা অবশ্য ব্যবসায়িক স্বার্থে বর্তমান বালিচকে থাকেন আর সেই কারণে সবংয়ের সাথে গর্বিত বালিচকও।
বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক শিক্ষক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, “এটা জেনে খুবই ভালো লাগছে যে আমাদের এলাকার একজন শিল্পী জাতীয় স্তরে তাঁর গুণের মর্যাদা পেতে চলেছেন। আরও গর্বের কথা এর আগেও এই পুরস্কার এসেছে তাঁর স্বামী আরেক গুনী শিল্পীর হাতে। বালিচকবাসী হিসাবে এই গর্ব আমাদেরও।”

‘কেজিপি বাংলা’র পক্ষে যোগাযোগ করেছিল গৌরী দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমার ৪৫বছরের সাধনার স্বীকৃতি পেলাম। ১৮বছর বয়সে নারায়নগড় থানার দুরিয়া গ্রাম থেকে আমার স্বামী নিশিকান্ত দাসের হাত ধরে গৃহবধূ হয়ে এসেছিলাম। বাপের বাড়ি থেকে শিখে এসেছিলাম দোহারা মাদুর বোনা। আমার শাশুড়ি আমাকে হাতে ধরে শিখিয়ে ছিলেন এই মসলন্দ বোনা। আমার এই পুরস্কার যেদিন হাতে আসবে তাঁকেই প্রণাম হিসাবে নিবেদন করব।”

রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা সবং বিধায়ক মানস রঞ্জন ভূইঁয়া জানিয়েছেন, “আমি কৃতজ্ঞ সবংয়ের শিল্পীদের প্রতি। বারেবারে সবংকে জাতির দরবারে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। এর আগেও ৮জন এই রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। সবংয়ের মাদুর শিল্প ও শিল্পীদের জন্য আমরা নিবেদিত। ভারতের মোট মাদুরের ৫২% উৎপন্ন করে সবং। এখানকার মসলন্দি বিশ্ব বিখ্যাত। সবংয়ের ২লক্ষ ৯২হাজার মানুষের মধ্যে ১লক্ষ ৩৫হাজার মানুষ মাদুর শিল্পের সঙ্গে জড়িত। যাঁরা মাদুর কাঠির চাষ থেকে মাদুর তৈরি এই গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।”

মন্ত্রী শ্রী ভূঁইয়া আরও বলেন, “সবংয়ের প্রাক্তন বিধায়ক গীতা ভূইঁয়া তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন এখানে মাদুর হাব তৈরির জন্য। রুইনানে সেই হাবের জমি চিহ্নিত হয়েছে। সেখানে মাদুরশিল্পের পাশাপাশি মাদুর গাছের গোড়া থেকে নির্যাস সংগ্ৰহ করে সুগন্ধি ও ধুপ ইত্যাদি নানা প্রকার কর্মকান্ড হবে। মাদুরের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ব্যক্তি যাদের মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা তাঁদের আমরা শ্রমিক হিসেবেও পরিচিতি দিতে চাইছি যাতে শ্রমদপ্তরের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তাঁরা পেতে পারেন।

- Advertisement -
Latest news
Related news