নিজস্ব সংবাদদাতা: সান্ধ্য কিংবা প্রাতঃভ্রমন প্রায় বন্ধ করেই বসে রয়েছেন নিউ সেটেলমেন্ট, ইন্দা থেকে শুরু করে শহরের দক্ষিণে ডিভিসি হিজলী এলাকার সেই সব বাসিন্দারা। বিপদে পড়েছেন বিশেষ করে সেইসব নাগরিকরা যাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাঁটাটা খুব প্রয়োজন। শহরের বিভিন্ন অংশ জুড়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাইক গ্যাংকের একাধিক ব্যক্তি। কখন কোথায় ধূমকেতুর মত হাজির হচ্ছে এই দুষ্কৃতিরা এবং নিমেষের মধ্যে অপারেশন সেরে পালাচ্ছে তা বোঝার উপায় নেই। মুশকিল হচ্ছে অনেকেই আবার পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন না।
সোম এবং মঙ্গলবার ফের ৩টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে খড়গপুর শহরে। ৩টি ঘটনাতেই ভুক্তভোগী হয়েছেন মহিলারা। সোমবার ১৮নম্বর ওয়ার্ডের নিউসেটেলমেন্ট এলাকায় সান্ধ্য ভ্রমন করে বাড়ি ফেরার পথে দুই মহিলা। ওই সময় তাঁদের পেছন থেকে একজনের গলা ২ ভরি সোনার হার ছিনতাই করে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতিরা! ওই দিনই ইন্দা গোয়ালাপাড়া ত্রিনাথ মন্দিরের কাছে ফের দুষ্কৃতি হামলা হয়। ফাঁকা গলিতে স্কুটি চালিয়ে যাচ্ছিলেন মা ও মেয়ে। এক যুবক তাঁদের দাঁড় করিয়ে একটি ঠিকানা জানার নাম করে যায় এবং মহিলার গলায় থাকা হারে হাত ঢুকিয়ে মহিলাকে পেছন দিকে ঠেলে দেয় বলে জানিয়েছেন এক পথচারী। এরপরই পাশে ইঞ্জিন চালু অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা বাইকে উঠে চম্পট দেয় তারা। দ্বিতীয় ঘটনাটি হিজলি সংলগ্ন ডিভিসি এলাকায়। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সকালে খড়গপুর শহরের দক্ষিণে ডিভিসি মোড়ের কাছে। যেখানে এক মহিলার কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনতাই হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও শেষ ২টি ক্ষেত্রে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়নি।
২সপ্তাহ আগে প্রথম খবরে আসে এই বাইক দুষ্কৃতিদের উপস্থিতি। মথুরাকাটি ও এমএসটাইপ রেল আবাসন এলাকায় দু’দিনে ৩মহিলার হার ছিনতাই হওয়ার ঘটনায় হৈচৈ পড়ে যায় শহরে। পুলিশের কাছে ওই তিন মহিলা জানিয়েছিল কোনও একটি ঠিকানা জানার নাম করে দুষ্কৃতিরা মহিলাদের কাছাকছি যাচ্ছে এবং গলার নেকলেস ছিনিয়ে নিয়ে পালাচ্ছে অপেক্ষমান সঙ্গীর ইঞ্জিন চালু করে রাখা বাইকে। ঘটনার ৮দিনের মাথায় পুলিশ গেটবাজার থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে এবং দাবি করে যে সেই মূল পান্ডা এবং তাকে ধরে দুই দুষ্কৃতিকে ধরা সম্ভব হবে। পুলিশ সেই বাইকটিও উদ্ধার করেছে বলে দাবি জানায়। এই ঘটনার পর অনেকেরই ধারণা ছিল যে খড়গপুর শহরে এই ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনার অবসান ঘটল। কিন্তু আবারও নিউ সেটেলমেন্ট, ইন্দা ও ডিভিসির ছিনতাইয়ের ঘটনা সেই ধারণা বদলে দিল।
এখন অবশ্য পুলিশ জানাচ্ছে, লিঙ্কম্যান সহ ওই ৩ দুষ্কৃতি নয় বরং শহর জুড়ে সক্রিয় রয়েছে ৮/১০জন দুস্কৃতির দল যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বাইক নিয়ে ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি নারায়নগড়-খড়গপুর সীমান্তে পথচারী বাইক আরোহীদের চোখে লঙ্কাগুঁড়ো জাতীয় কিছু স্প্রে করে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে চলেছে। সেই অপারেশনও এই দুষ্কৃতিদল করছে কীনা তাও ভেবে দেখার। সব মিলিয়ে কী ছিনতাইবাজদের দাপটে ঘুম মাথায় উঠতে পুরো খড়গপুর শহরটার?
খড়গপুর পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘সমস্ত ক্ষেত্রেই অভিযোগ নথিভুক্ত না হওয়া একটা বড় সমস্যা। দুষ্কৃতিরা দুষ্কর্মের সময় কিছু না কিছু সূত্র রেখে যায় নিজের অজান্তে। তদন্তের জন্য সেটা খুবই উপযোগী। হয়ত আমরা একটা ক্ষেত্রে কোনও সূত্র পেলামনা কিন্তু অন্যক্ষেত্রে পেতে পারি। অভিযোগ না হলে তো তদন্ত করতে পারছিনা। আমরা অনুরোধ করছি কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশে অভিযোগ করুন। পুলিশ বসে নেই। সর্বোত ভাবে চেষ্টা করছে। কিছু সূত্র পাওয়া গেছে। চলতি বাইক দুষ্কর্মের সঙ্গ জড়িত কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। আমরা পুরো গ্যাংটাকেই ধরতে চাই তাই মানুষের সহযোগিতা দরকার।’