Saturday, July 27, 2024

TMC Infighting Debra: ডেবরা টোল প্লাজাকে ঘিরে আগুন তৃনমূলেরই অন্দরে, স্বজন পোষনের অভিযোগ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি প্রাক্তন বিধায়কের, অভিযোগ অস্বীকার মন্ত্রীর

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: শাসকদলের অন্দরে আগুন লাগল সেই ডেবরাতেই যেখানে গত ১০বছর ধরেই গোষ্ঠীবাজির চূড়ান্ত নজির রয়েছে। তবে এবারের আগুন আরও মারাত্মক। খোদ মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই স্বজন পোষনের অভিযোগ এনেছেন তৃনমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লক সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক। অভিযোগ হাওড়া-মুম্বাই ১৬ নম্বর (সাবেক ৬নম্বর) জাতীয় সড়কে ডেবরা টোল প্লাজায় জোর করে এজেন্সি পরিবর্তন করেছেন ডেবরার বর্তমান বিধায়ক তথা রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা মন্ত্রী হুমায়ূন কবীর। এবং এটা করা হয়েছে বকলমে মন্ত্রী নিজের পছন্দের একটি কোম্পানিকে টোল আদায়ের এজেন্সি পাইয়ে দেওয়ার জন্য।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

শুধু তাই নয় পুরানো এজেন্সিতে কর্মরত কর্মীদের কর্মচ্যূত করার অথবা তাঁদের পারিশ্রমিক কমিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হয়েছে এমন অভিযোগে আন্দোলনও শুরু করেছেন ওই প্লাজার ৮৬জন কর্মী। যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টির মধ্যে চক্রান্ত রয়েছে বলে দাবি করেছেন মন্ত্রী। কারও কাজ যাবেনা, এমনও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চিঠিও লিখেছেন প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূলের ডেবরা ব্লক সভাপতি রাধাকান্ত মাইতি।

রাধাকান্ত মাইতির অভিযোগ মন্ত্রী নিজের প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসন ও দলকে কাজে লাগিয়ে এজেন্সি পরিবর্তন করিয়ে টোল প্লাজায় নিজের অনুগামীদের নিযুক্ত করছেন। প্রতি মুহুর্তে সেই নতুন এজেন্সির কর্মীরা পুরানো কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন চাকরি খেয়ে নেবে বলে। আর এই টানাপোড়েনের জেরে এই টোল প্লাজায় কর্মরত ৮৬ জন কর্মী কাজ হারানোর মুখে। এই ৮৬ জন কর্মীরা পরিবার পরিজন নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছেন। শুধু তাই নয় প্রতিনিয়ত তাঁদের এখন শাসকদলের নেতা ও কর্মীদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। রাধাকান্ত মাইতির এই অভিযোগের সমর্থনে নেমেছেন টোলপ্লাজার পুরানো কর্মীরা।

তাঁরা অভিযোগ করেছেন, বর্তমান টোলপ্লাজার এজেন্সি কারা তাই নিয়েই বিভ্রান্তি রয়েছে। গত ৩১ দিন এই টোলপ্লাজা চালিয়েছে স্কাইহুপার নামে একটি কোম্পানি আর আজ শুক্রবার আমরা যখন ওই কোম্পানির হুমকি আর স্বেচ্চাচারিতার বিরুদ্ধে অবস্থান করছি তখন সন্ধ্যাবেলায় আমাদের বেতন মেটানো হচ্ছে গোল্ডলাইন স্বেচ্ছাসেবী নামে একটি সংস্থার নামে। এতে বারবার আমাদের পিএফ ও ইএসআই নম্বর পরিবর্তিত হওয়ার আশঙ্কা করছি যার ফলে ওই সুযোগ সুবিধা আমরা নাও পেতে পারি।

কর্মীদের আরও অভিযোগ,” নতুন এজেন্সি প্রতিমুহূর্তে আমাদের ধমকাচ্ছে, এতলোক রাখার কী প্রয়োজন, এত বেশি বেতন দেওয়া হয় কেন? ইত্যাদি প্রশ্ন তুলে, আমাদের সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে চাকর বাকরের মত। এমনকি অশ্লীল গালাগালি করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমরা মন্ত্রীর লোক যা পারিস করে নে!” তাঁরা আরও বলেন, বৃহস্পতিবার আমরা যখন এই বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করতে যাই তখন ধুলাগড়ে পুলিশ আমাদের আটকে দেয় মন্ত্রীর নির্দেশেই।” যদিও পুলিশের তরফে বলা হয়েছিল কোভিড বিধির কারণেই অতজনকে একসাথে যেতে দেওয়া হয়নি। কর্মীদের দাবি, তাঁরা পুরানো এজেন্সিকেই চান কারন ওই কোম্পানি স্থানীয় এবং বেতন ও নানা সুবিধার বাইরেও তাঁদের বিপদে আপদে লোন দিয়ে সাহায্য করত।আর এই কোম্পানিতো শুরু থেকেই বেতন এবং কর্মী ছাঁটাই করতে উদ্যত।

যদিও এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডেবরার বিধায়ক তথা মন্ত্রী হুমায়ুন কবির। তিনি সাফ জানিয়েছেন, “একজনেরও কাজ যাবে না। কারও বেতন কমবেনা বরং যাতে বেতন বাড়ে সেই চেষ্টাই আমি করব।” এজেন্সি পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ” গত সাত বছর ধরে এই টোল প্লাজায় এজেন্সির দায়িত্বে ছিলেন অমিত মাইতি নামে এক যুবক। এই যুবক আবার বর্তমানে তৃণমূলের ডেবরা ব্লক সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতির ছেলে। দীর্ঘ সাত বছর ধরে অমিত মাইতি বর্তমানে টোল প্লাজার দায়িত্বে ছিলেন। এখন রাধকান্তবাবু নিজের ছেলের স্বার্থেই এসব করছেন। তাঁর সঙ্গে দলেরও একটি অংশ রয়েছে।” মন্ত্রীর আরও অভিযোগ এই চক্রান্তের পেছনে আসলে রয়েছে বিজেপি। এই বিজেপির মদতেই রাধাকান্ত মাইতি এবং দলের কয়েকজন এই সব করছে। মন্ত্রীর অনুমান গত ১৫ই আগষ্ট এই ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হয়েছে।

রাধকান্তবাবু ইতিমধ্যেই বিষয়টি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন একজন মন্ত্রী টোলপ্লাজায় কোন এজেন্সি নিযুক্ত হবেন তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন কেন? প্রাক্তন বিধায়কের আশা শুক্রবার রাতেই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সিদ্ধান্ত কী হয় তার দিকে তাকিয়ে দু’পক্ষই। মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, সমস্ত সমস্যা মিটে যাবে। শনিবার বেলা ১টায় জেলার নেতাদের নিয়ে কর্মীদের সঙ্গে বসবেন তিনি। তাঁদের আশ্বস্ত করবেন। এদিকে বিষয়টি নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছে অমিত মাইতির কোম্পানি।

তাঁদের বক্তব্য চলতি বছরের ২৩ মার্চে এই টোল প্লাজার মূল এজেন্সি অশোকা কোম্পানি অমিত মাইতির দায়িত্বে থাকা মেঘমালা এজেন্সির অনুমোদন পুনর্নবীকরণ করেছে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। অথচ গত পয়লা আগস্ট সেই এজেন্সিকে বাতিল করা হল কোন যুক্তিতে। ঘটনা যাইহোক না কেন গোটা বিষয়কে কেন্দ্র করে ফের ডেবরায় তৃনমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চাগাড় দিয়ে উঠল এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

- Advertisement -
Latest news
Related news