নিজস্ব সংবাদদাতা: এই কী তবে কুঁজোর চিৎ হয়ে শোয়ার শখ? একে গরীব হাভাতে, তায় আবার তফসিলী উপজাতি পরিবারের মেয়ে। স্বপ্ন দেখেছিল নার্সিং পড়ার। আর সেই স্বপ্নের ডানা ভেবেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের প্রকল্প স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড। কিন্তু বিজ্ঞাপন আর বাস্তবের মধ্যে ফারাক যে কতখানি তা নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়ে গেলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের তিথি দোলই।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/08/Screenshot_20220816-210355_WhatsAppBusiness.jpg)
চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভের বাজারের বাসিন্দা ১৯ বছরের তিথি মারা গেলেন বৃহস্পতিবার গভীর রাতে। ১৪ই আগস্ট, দেশের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তির ঠিক আগের দিন। দেশ তখন ‘ ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উদযাপন করছে! কিন্তু চন্দ্রকোনার ওই হতদরিদ্র দম্পতির একমাত্র সন্তানের কণ্ঠে তখন আজাদির অমৃতের বদলে গরল। যে গরল পান করার সে আগে জানতে পেরেছিলেন তাঁর জন্য স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড নয়।
দিনমজুর জয়দেব দোলই ও রিঙ্কু দোলই এর একমাত্র মেয়ে তিথি শুরু থেকেই মেধাবী ছাত্রী। বাবা-মা দিনমজুরি করে মেয়েকে পড়াশুনা করিয়েছিল বটে কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করার বাবা-মা পড়াতে পারবেননা। কিন্তু তিথির জেদ সে নার্সিং পড়বেই। ব্যাঙ্গালুরুর একটি নার্সিং কলেজে ভর্তি হয়। জানাযায় তিথি নার্সিং কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয় তার পড়া কমপ্লিট করতে খরচ পড়বে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। বাবা-মা ধার দেনা ও এলাকাবাসীর সাহায্য নিয়ে এক লক্ষ টাকা জমা দিয়ে কলেজে ক্লাস শুরু করে। ছ’মাস পরে বকেয়া টাকা চায় এবং জানিয়ে দেয় ওই টাকা না দিলে সেপ্টেম্বর মাসের ২তারিখ থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষা দিতে পারবেনা সে। তিথির মা রিঙ্কু দোলই বলেন” ক্রেডিট কার্ডের জন্য তিথি ব্যাঙ্গালুরু থেকে বাড়ি চলে আসে। তারপর নবান্ন থেকে শুরু করে বিকাশ ভবন একাধিকবার যাওয়া আসা করেছে। একটার পর একটা ব্যাঙ্ক ঘুরছে। শেষ অবধি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের স্মরণাপন্ন হয় সে। প্রথম দিকে আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু করে শেষমেশ ব্যাঙ্ক জানিয়ে দেয় যে তারা ঋণ দিতে পারবেনা। এরপরই ভেঙে পড়েছিল আমার মেয়ে। ব্যাঙ্গালুরু থেকে বন্ধুরা বারবার ফোন করছিল কবে যাবে জিজ্ঞাসা করে। আর চাপ নিতে পারছিলনা মেয়েটা। তারপরই এই কান্ড করে বসে।”
তিথির প্রতিবেশীরাও জানিয়েছেন, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাকে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পরই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত তিথি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তিথি বিষ পান করার পরই স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পরিবারের সদস্যরা, দ্রুত তাকে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয় তিথিকে। মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার হয় তিথি কে। তারপর থেকে লড়াই শুরু, সেই লড়াই থেমে গেল বৃহস্পতিবার রাতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারও জনিয়েছেন,স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড জোগাড়ে ব্যর্থ হওয়ার পরই তিথি আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ একটি তদন্ত শুরু করেছে। প্রশ্ন সেই তদন্তে উঠে আসবে তো সরকার স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড চালু করার পরও কেন স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড পেলনা তিথি? মুখ্যমন্ত্রী অনেকবারই বলেছেন ব্যাঙ্কগুলি সহযোগিতা করছেনা। প্রশ্ন হল সেক্ষেত্রে সরকার কী কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে? ওই ব্যাঙ্কটির ম্যানেজার সান্টু কুমারের বক্তব্য, তথ্য সংক্রান্ত কিছু ত্রুটি থাকার জন্যই তাকে স্টুডেন্ট ক্রেডিট পরিষেবাটি দেওয়া হয়নি। যদি তাই হয় তবে সেই ত্রুটি কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যঙ্কের তরফে কী পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল? আদৌ কোনও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল কী?