![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/04/Screenshot_20220408-214744_Chrome.jpg)
নিজস্ব সংবাদদাতা: আগের বনধ ছিল মঙ্গলবার, ৫এপ্রিল। মাওবাদী নেতা কিষানদার গ্রেফতারের প্রতিবাদে কয়েকটি রাজ্যের সাথে পশ্চিম বাংলাতেও বনধের (Strike) ডাক দিয়েছিল মাওবাদীরা (Maoist)। যে বনধ মূলত ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়িতেই আটকে ছিল। ৩ দিন পর আজ, ৮ এপ্রিল ফের বাংলা বনধের ডাক দিয়েছিল মাওবাদীরা যে বনধ বেলপাহাড়ির সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ল জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ অংশে। এমনকি বনধের আংশিক প্রভাব পড়ল ঝাড়গ্রাম শহরেও, যা দেখে রীতিমত চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পুলিশ কর্তাদের।
শুক্রবার আত্মসমর্পন করে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসা মাওবাদীদের স্পেশাল হোমগার্ড হিসেবে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বাংলা বনধের ডাক দিয়েছিল মাওবাদীরা। জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম সহ বেলপাহাড়ি, বাঁশপাহাড়ি, লালগড়, শিলদা, দহিজুড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় মাওবাদীদের ডাকা বনধের ভালোই সাড়া মিলেছে। বনধের জন্য কার্যত বেসরকারি বাস তুলেই নিয়েছিল বাস মালিকরা।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/04/IMG-20220408-WA0018-1.jpg)
পাশাপাশি দোকানপাট, বাজারহাট বন্ধ রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরাও। রাস্তাঘাটও কার্যত জনশূন্যই । মাত্র ৩দিনের ব্যবধানে বনধের এই গুনগত বিস্তারের পেছনে বৃহস্পতিবার শিমুলপাল এলাকায় উদ্ধার হওয়া তাজা ল্যান্ডমাইনকেই কারন হিসাবে মনে করছেন অনেকেই। লবনী সিআরপিএফ ক্যাম্পের অদূরে উদ্ধার হওয়া সেই মাইন জঙ্গলমহল জুড়ে আতঙ্ক ছড়াতে সফল হয়েছে বলেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান।
২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে এই শিমুলপাল অঞ্চলেই লবনী যাওয়ার রাস্তায় মাওবাদীদের পেতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন বেলপাহাড়ি হাসপাতালের চিকিৎসক ধনিরাম মান্ডি, নার্স ভারতী মাঝি আর আ্যম্বুলেন্স চালক প্রণয় মিশির। আর এই বিস্ফোরণের মাত্র দিন দশেকের ব্যবধানে নভেম্বরের গোড়াতেই শালবনীর জিন্দাল ইস্পাত কারখানার (JSW) ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করতে গিয়ে মাওবাদীদের মাইন নিশানায় পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর কনভয়।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/04/IMG-20220408-WA0017-2.jpg)
যদিও সঠিক সময়ের আন্দাজ না করতে পারায় রক্ষা পায় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়টি। পরিবর্তে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাশওয়ান ( Rambilash Paswan)ও সজ্জন জিন্দালের ( Sajjan Jindal)কনভয়। তাঁদের কনভয়ের সামনে থাকা পাইলট ভ্যানের দুই পুলিশ কর্মী গুরুতর আহত হন। আর এই ঘটনার পরেই শুরু হয়ে যায় সেই রক্তক্ষরা, প্রাণনাশক লালগড় আন্দোলন। যার জের চলেছিল পরবর্তী ৩বছর।
বৃহস্পতিবার লবনীর জঙ্গলে উদ্ধার হওয়া ল্যান্ডমাইনটি তাজা এবং যথেষ্ট শক্তিশালী বলেই জানিয়েছেন ঝাড়গ্রামের শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকরা। ঝাড়খন্ড ঘেঁষা এই এলাকা দিয়েই কী তবে আবারও মাওবাদীরা ফিরিয়ে আনতে তৈরি হচ্ছে সেই ভয়ঙ্কর দিন গুলো? এই প্রশ্ন উঠছে। এদিকে এই বনধকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে বিনপুরের কাঁকো সহ বিভিন্ন এলাকায় যে পোস্টার মাওবাদীরা (CPI Maoist) যে পোষ্টার দিয়েছিল তাতে এই প্রথম বনধ না মানলে ‘ মৃত্যুদন্ড’ ঘোষণা করা হয়। সবমিলিয়ে ভয়ের বাতাবরনেই বনধ ‘সফল’ হয়েছে। যদিও বনধে সাড়া দেয়নি এই জেলার সাঁকরাইল কিংবা গোপীবল্লভপুর এলাকা। ঝাড়গ্রামের পাশাপাশি বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলেও মাওবাদীদের ডাকা বনধের বেশ প্রবাব পড়েছে বলেই জানা যাচ্ছে। বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া লাগোয়া রানিবাঁধ, রাইপুর ও সারেঙ্গা ব্লকে ভালো সাড়া মিলেছে। এই জায়গাগুলিতেও দোকান, বাজারের পাশাপাশি যান চলাচলও বন্ধ ছিল।