![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/11/IMG-20211129-WA0013.jpg)
নিজস্ব সংবাদদাতা: পরনে স্কুল ইউনিফর্ম, হাতের সিগারেট থেকে উড়ছে ধোঁয়া। মাঝে মাঝে সেই ধোঁয়া গলায় চালান করে অবলীলায় উগরে দিচ্ছে নাকের দুই রন্ধ্র দিয়ে। কেউ আবার ধোঁয়া কয়েক সেকেন্ড রেখে দিচ্ছে শ্বাসনালীতে। তারপর খেলিয়ে খেলিয়ে তা বের করে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এই ১৬/১৭বছরের মেয়েরা সখে সিগারেট খাচ্ছেনা, এরা রীতিমত অভ্যস্ত। প্রথম ধূমপান করার মত গলায় ধোঁয়া আটকে কেউ ভিরমি খাচ্ছেনা। লকডাউন কাটিয়ে স্কুল খোলার পর ক্লাশ ইলেভেনের ছাত্রীদের এই ‘বিন্দাস’ কীর্তি দেখে ভিরমি খাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা।
না, এই পর্যন্ত হয়ত দেখা যায় কিন্তু এরপর যা দেখা গেল তাতে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। এক ছাত্রী মুখে ধোঁয়া নেওয়ার পর নিজের ঠোঁট দুটো চুবিয়ে দিল এক সহপাঠীর দুই ঠোঁটের ভেতর। নিজের সারা শরীর চেপে সহপাঠীর দুই ঠোঁটে প্রবেশ করিয়ে দিল নিজের মুখের ধোঁয়া।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/11/IMG-20211129-WA0012.jpg)
তারপর নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিতেই সহপাঠী পরম তৃপ্তি নিয়ে নিজের ঠোঁট দিয়ে উগরে দিল সেই ধোঁয়া! এই কীর্তি যখন চলছে তখন বাকিরা আউড়ে চলেছে অশ্রাব্য সব খিস্তি। লকডাউনের পর স্কুল খোলার দ্বিতীয় সপ্তাহের শুক্রবার এমনই ঘটনা ঘটল চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের জাড়া হাইস্কুলে ( উচ্চমাধ্যমিক)।
একটা প্রান্তিক গ্রামের ১৪০বছর আগে প্রতিষ্ঠিত স্কুলের এই ঘটনায় মুখ পুড়েছে জাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। ইংরেজ আমল থেকেই বিদ্যায় আর জ্ঞানে বর্ধিষ্ণু গ্রাম জাড়া। বিখ্যাত আ্যন্টনি কবিয়াল এই জাড়া গ্রামেরই ময়রা ‘ভোলা ময়রা’র সাথে কবিগানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাঁর কাছে পরাজিত হন। ভোলা ময়রা নিজের গ্রামের গরিমা ব্যক্ত করতে গিয়ে সেই কবি গানে বলেছিলেন, ‘ জাড়া গোলক বৃন্দাবন!’
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/11/IMG-20211129-WA0011.jpg)
জাড়ার বিখ্যাত জমিদার রায় বংশের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এই হাইস্কুলের। এই বংশের অন্যতম ব্যক্তি সাতকড়ি পতি রায় ছিলেন রাজা রামমোহন রায়ের বন্ধু। এঁদের কাছেই নিজের জমি জায়গা বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করে বিলেত গিয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়। স্বাধীনতা আন্দোলনেও ভূমিকা ছিল এই পরিবারের। ড: বিধান চন্দ্র রায় অতিথি হয়েছেন এই পরিবারের। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ রায় পরিবার এরজন্য দায়ী করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে।
জাড়ার রায় পরিবারের সদস্য ঘাটাল মহকুমা আদালতের আইনজীবী তপন রায় বলেছেন, ‘ এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমাদের। আমাদের আফসোস যে জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে নিয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষ এই স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই জায়গায় এ কী ভয়ানক বিশৃঙ্খলা। স্কুল চলাকালীন স্কুলের ভেতরে ছাত্রছাত্রীরা সিগারেট খাচ্ছে, অভব্যতা করছে। আমার মনে হয় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককেই সাসপেন্ড করা উচিত।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে জাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিরন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। আমরা ইতিমধ্যেই চার ছাত্রীকে সাসপেন্ড করেছি। কিভাবে এটা হল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিচালন সমিতির সভাপতি প্রশান্ত বারিক বলেন এরা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। শাস্তি স্বরুপ এদের ক্লাস সাসপেন্ড করা হয়েছে। ওরা আর ক্লাশ করতে পারবেন। যদিও এদের রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করা বা পরীক্ষা দেওয়া আটকানো হবেনা বলেই পরিচালন সমিতির সভাপতির তরফে জানানো হয়। স্কুল পরিচালন সমিতির তরফে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় স্কুলের ঐতিহ্য ও সম্মান খুন্ন হয়েছে,আগামী দিনে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।