নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রেমিকার আচার আচরণ না পসন্দ হয়ে উঠেছিল তাই শেষ অবধি বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন প্রেমিককে গুলি করে তারই প্রতিশোধ নিল প্রেমিকা। অবশ্য গুলি করার আগে শেষবারের মত একটি ঘনিষ্ঠ চুম্বন এঁকে দিয়েছিলেন প্রেমিকের ঠোঁটে। বুধবার রাতের এমনই অবাক করা কান্ডে রীতিমত স্তম্ভিত বর্ধমানের কাটোয়া থানার সার্কাস ময়দান এলাকার বাসিন্দারা। জানা গেছে প্রেমিককে গুলি করার পর মাঠেই বসে ছিলেন প্রেমিকা । পুলিশ খবর পেয়ে তার কাছে যেতেই হাত তুলে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। উদ্ধার হয়েছে ওয়ানসাটার পিস্তলটি। অস্ত্র আইন ও খুনের চেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তরুণীকে।
আহত ওই ‘প্রাক্তন’ প্রেমিক লালচাঁদ সাংবাদিকদের বলেছেন, “ আমাকে দেখা করার জন্য সার্কাস ময়দানে ডেকেছিল। ও আসে ওড়নায় মুখটা ঢেকে । কাছে এসেই ওড়না খুলল। তারপর কথা বলতে বলতেই আমার গালে একটা চুমু খেল। আর হাতে ৫০ টাকা দিয়ে বলল, দুটো সিগারেট নিয়ে এসো। আমি সিগারেট আনতে যেই না ফিরেছি ও ওড়নার তলা থেকে বন্দুক বার করে গুলি চালিয়ে দিল। আমার পেটে লেগেছিল। পেট ধরে বসে পড়ি। কানে তখন তালা লেগে গিয়েছিল। ও দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিল।”
জানা গেছে সার্কাস ময়দান এলাকার বাসিন্দা লালচাঁদের সঙ্গে বেশ কয়েক বছরে সম্পর্ক ছিল ওই তরুণীর । দুই পরিবারই সে কথা জানত। বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত এক বছর ধরে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। লালচাঁদের মতে অন্য একটি ছেলেটির সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন তরুণী। যাতে লালচাঁদ আপত্তি জানান। এদিকে, আবার কাজের নাম করে ঝাড়খণ্ড চলে গিয়েছিলেন তিনি। লালচাঁদ খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁর আসলে সেখানে নাচ করতেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে নাচ করার বিষয়টি মেনে নিয়ে পারেননি লালচাঁদ। লালচাঁদ তরুণীর বাবা-মাকেও গোটা বিষয়টি জানান। কিন্তু কাজ হয়নি। এরপরই তরুণীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন লালচাঁদ।
এরপর ফের কাজে চলে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। কিছুদিন আগেই ফেরত এসেছিলেন। বুধবার ফের লালচাঁদকে দেখা করতে ডেকেছিলেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে, সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার পরও কেন লালচাঁদ দেখা করতে গিয়েছিলেন? লালচাঁদের বক্তব্য, তাঁর টান এখনও রয়েছে। তাই তাঁর ডাক অস্বীকার করতে পারেননি। তাই তার ডাকে তিনি সার্কাস ময়দান এলাকায় চলে গিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে প্রেমিকা ফোন করে রাত্রি সাড়ে আটটা নাগাদ কাটোয়ার সার্কাস ময়দানের একটি গলিতে প্রেমিককে ডাকেন। কিছুক্ষণ তাঁদের কথাবার্তা হয়। সেখান থেকে কথা কাটাকাটি। তার পরই প্রেমিককে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রেমিকা।
প্রেমিকের গালে চুম্বন দিয়েই ওড়নার পিছন থেকে ঝট বের করপেন ওয়ান শাটার বন্দুক। তার পর প্রেমিকের বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করতে উদ্যত হন তিনি। এবার প্রেমিক পালানোর চেষ্টা করলে তরুনী লাল চাঁদ নামে ওই যুবককে কে লক্ষ্য করে একটি গুলি চালায়। প্রেমিকের জ্যাকেট ফুটো করে পেট ঘেঁষে বেরিয়ে যায় সেই বুলেট। অল্পের জন্য বেঁচে যান লাল চাঁদ।
কিন্তু অবাক করা কান্ড যে ওই তরুণী আগ্নেয়াস্ত্র পেলেন কোথা থেকে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে মনে করছে, কারোর কাছ থেকে ওয়ান শাটারটি ভাড়া করেছিলেন । সেক্ষেত্রে ঝাড়খণ্ড থেকেই তিনি বন্দুকটি এনেছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। লালচাঁদের অবস্থা তেমন গুরুতর না হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।