শশাঙ্ক প্রধান: বছর ঘুরলনা ফের মদের নেশায় চুর হয়ে মাতাল স্বামীকে খুন করল স্ত্রী। রবিবার সাত সকালে ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার অন্তর্গত
টুঙুর গ্রামে। আর এই নিয়ে তিন বছরে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটল এই এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন গোটা পিংলা জুড়েই চোলাই মদের কারবার বেড়েছে দশ বছরে দশগুন। এলাকায় এলাকায় মদের ভাটিতে চোলাই কাটানোর কারবার যেমন বেড়েছে তেমনই মদ ঢুকছে পাউচ আর টিউবে করে। মদের জ্বালায় ঘরে ঘরে অশান্তির আগুন। ঘটি বাটি অবধি বিক্রি হয়ে যাওয়ার জোগাড় এক একটি পরিবারের।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে রবিবার সকালে নিহত ব্যক্তির নাম মনসা দন্ডপাট। ৪৫বছরের মনসা দিনমজুরের কাজ করতেন। মনসার স্ত্রী ৩৮ বছরের জবা লোকের বাড়িতে কাজকম্মের পাশাপাশি একটি চোলাই কারবারির ভাটিতে চোলাই তৈরির কাজ করত। তাদের একটি ১৬ বছরের ছেলে এবং ১২বছরের মেয়ে রয়েছে। ছেলেটি বাইরে কাজ করে আর মেয়েটি বাড়িতেই থাকত। স্বামী স্ত্রী ২ জনেই মদে আসক্ত। শনিবার রাতে পরিবারে টাকা পয়সা নিয়ে ঝগড়াঝাটি শুরু হয়। পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকে যে তার মদ খাওয়ার জন্য সংসারে টাকা পয়সা জমছেনা। তুমুল অশান্তির পর দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে। ফের অশান্তি শুরু হয় রবিবার সকাল থেকে।
মনসার দাদা জানিয়েছে, সকালে ফের ২ জনে মদ খায় এবং ঝগড়া শুরু হয়। কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি তারপর পৌঁছায় লাঠালাঠিতে। দুজনই দুজনকে ব্যাপক মারতে থাকে। শুরু হয় ঠেলাঠেলি। এই সময় মনসা ভারসাম্য না রাখতে পেরে পড়ে যায়। এরপরই সামনে পড়ে থাকা একটি লাঠি নিয়ে জবা সজোরে মনসাকে মারতে থাকে। লাঠির একটি আঘাত পড়ে মনসার মাথায়। মনসা জ্ঞান হারায়। স্থানীয় এক চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মনে করা হচ্ছে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল মনসার।
এদিকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মারফৎ ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। মৃতদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি তারা আটক করে নিয়ে যায় জবাকে। জবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাঁকেও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে কারন তাঁর শরীরময় মারধরের আঘাত রয়েছে। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শিবাশিস হাজরা জানিয়েছেন একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে এই এলাকায় এবং সবই হচ্ছে মাদকাসক্তি বেড়ে যাওয়ার জন্য। মাত্র ৭মাস আগেই এলাকার এক যুবক প্রতাপ দন্ডপাট খুন হয়েছিল সামান্য একটা সাইকেল নিয়ে বচসার কারনে। এক যুবক নিজের সাইকেল প্রতাপের কাছে বন্ধক রেখে মদের টাকা মিটিয়েছিল। সেই টাকা ফেরৎ চাইতে গিয়ে খুন হতে হয় প্রতাপকে।
শিবাশিস আরও জানিয়েছেন সাড়ে তিনবছর আগে ডলি মল্লিক নামক এক মহিলা খুন হয়েছিলেন তাঁর ছেলের হাতে এই গ্রামেই। ছেলে বাড়ির সবকিছু বিক্রি করে দিত মদের জন্য। তারই প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছেলের হাতে খুন হন ওই মহিলা। টুঙুর এবং তার আশেপাশের এলাকা জুড়ে চোলাইমদের দাপটে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে একেকটি পরিবার। বহু স্ত্রী নাবালক সন্তান নিয়ে স্বামীকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। পঞ্চায়েত সদস্য জানিয়েছেন, একজন দিনে ১৭০টাকা রোজকার করলে ১৫০ টাকাই ব্যয় করছে মদের পেছনে। প্রশাসনকে বারংবার জানানোর পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।