নিজস্ব সংবাদদাতা: অবিশ্বাস্য! নিজের মা কে ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খুন করেছে মেয়ে! তাও সে মেয়ে নাবালিকা, সিবিএসসি বোর্ডের এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী! প্রেমের কাঁটা উপড়ে ফেলতে প্রেমিকের সাথে এই ঘৃণ্য চক্রান্তের দায়ে প্রেমিক ও নাবালিকাকে গ্রেফতার করেছে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ। সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছে প্রেমিকের মা ও বাবা! স্ত্রীকে খুন করার দায়ে নিজের নাবালিকা মেয়ের এবং তার প্রেমিক ও প্রেমিকের বাবা মার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন মেদিনীপুর শহরের এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় ওই চারজনকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে ১৫ই এপ্রিল ১লা বৈশাখের দিন। পাটনাবাজার এলাকার এক স্বর্ণব্যবসায়ীর পরিবারের নববর্ষ উপলক্ষ্যে হালখাতার ব্যবস্থা ছিল। যৌথ পরিবারে আনন্দ হৈ-চৈ, খাওয়া দাওয়া। এসবের মধ্যেই কোল্ড ড্রিংক্স খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ব্যবসায়ীর মধ্য তিরিশের যুবতী স্ত্রী। কয়েক ঘন্টা প্রচণ্ড অস্বস্তির পর আচমকা প্রাণ হারান তিনি। স্থানীয় চিকিৎসক জানান হার্ট আ্যটাক। আনন্দের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাহও করে দেওয়া হয় দেহ। ওই ব্যবসায়ীর দুই কন্যা। ১৫ এবং ১০ বছরের ওই কন্যা ছাড়াও পরিবারে ব্যবসায়ীর ভাই ও তাঁর পরিবার থাকেন। বড় মেয়ে সিবিএসসি বোর্ডের অন্তর্গত মেদিনীপুর শহরের একটি অভিজাত স্কুলের ছাত্রী, মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। একটি পরীক্ষা হয়েছে সবে মাত্র।
মা মারা গেছে, পরীক্ষা চলছে কিন্তু মেয়ের যেন সে সবে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। দামি স্মার্টফোনে সর্বদাই চ্যাটে মশগুল থাকে সে। বিষয়টি বিরক্তিকর হয়ে উঠত পরিবারের কাছে। বৃহস্পতিবার বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে দেখে ওই নাবালিকার কাকা এক চড় কষিয়ে তার হাত থেকে মোবাইলটা ছাড়িয়ে নেয়। নাবালিকা কার সাথে এত কথা বলে, কী কথা বলে জানতে মোবাইলের চ্যাট পড়তে গিয়েই চক্ষু চড়কগাছ! সেই চ্যাটে দেখা যায়, মা কে কী খাওয়ানো হবে, কিভাবে খাওয়ানো হবে, খাওয়ানোর পর মায়ের কী অবস্থা ইত্যাদি নানা বিষয় আদান প্রদান করা হচ্ছে একটি তরুনের সাথে। এরপর একটা লেখা দেখে স্তম্ভিত কাকা। লেখা আছে, ‘তুমি যেটা দিয়েছিলে সেটা খাইয়ে দিয়েছি। কাজ সাকসেসফুল হয়ে গেছে’।’ সাথে সাথে বিষয়টি নিজের দাদা বা মেয়ের বাবাকে জানায় মেয়ের কাকা। এরপরই মেয়ের বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ করে মেয়ে তার প্রেমিক ও প্রেমিকের বাবা মা র বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানিয়েছে মেয়েটি নাবালিকা বলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তার নাম পরিচয় প্রকাশ করা যাবেনা। গ্রেফতার হওয়া প্রেমিক শহরেরই মহাতাবপুর এলাকার জিৎ আঢ্য, বাবা রঞ্জিত আঢ্য, মা লেখা সরকার আঢ্য। নাবালিকার বাবার অভিযোগ মত ছেলের সাথে তার বাবা-মাও এই খুনের ষড়যন্ত্রের শরিক কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, ব্যবসার কারনে বাবা সারাদিন দোকানে ব্যস্ত থাকায় মাকেই দেখতে হত সংসার। আর সে কারণেই পড়াশুনা ছেড়ে মেয়ের সারাদিন ওই প্রেম ব্যস্ততায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। আর সেই কারণেই প্রেমিকের সঙ্গে মিলে মা কে দুনিয়া থেকে পাকাপাকি ভাবে সরানোর ছক কষে ছিল মেয়ে। সম্ভবতঃ ঠান্ডা পানীয়তে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিষ জাতীয় কিছু। সেই পানীয় ২গ্লাস মাকে মেয়ে খাইয়ে ছিল আবদার করে।
কী মেশানো হয়েছিল ঠান্ডা পানীয়তে তার তদন্ত করছে পুলিশ। চিকিৎসকের হার্ট আ্যটাক মনে হওয়ায়, কোনও অভিযোগ না হওয়ায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাহ করা হয়েছিল। ফলে মেয়ে ও তার প্রেমিককে জিজ্ঞাসাবাদ, পারিপার্শ্বিক তল্লাশি ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে সেই বিষের সন্ধান করছে পুলিশ। একটি ট্যাবলেটের খালি স্ট্রিপ পুলিশের সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। ঘটনায় হতবাক মেদিনীপুর শহরের ওই অভিজাত পাড়া।