নিজস্ব সংবাদদাতা: একটা নয়, দুটো নয়, চারচারটে গুলি! তিনটি পেটে, একটা পায়ে। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে বাড়ির জানলা ভেঙে এক ৫০ বছর বয়স্ক ব্যক্তিকে গুলি করল দুস্কৃতি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে দ্রুত চিকিৎসা চলছে তাঁর যদিও শেষ অবধি কী হতে চলেছে এই মুহূর্তে বলা খুবই মুশকিল। প্রচুর রক্তপাতে প্রৌঢ়ের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক। খড়গপুর শহরের রেল কলোনী এলাকায় ঘটেছে এই ঘটনা। ঘটনাস্থল মহাবীর পেট্রোলপাম্প সংলগ্ন বাংলো সাইড এলাকায়। জানা গেছে মারাত্মক আহত ওই ব্যক্তির নাম সুনীল গুপ্তা। বাংলোসাইডে রেলের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে বসবাস করে গুপ্তার পরিবার। পুলিশ এই ঘটনায় এক মহিলা সমেত ২জনকে গ্রেফতার করলেও মূল অভিযুক্ত পলাতক বলেই জানা গেছে।
জানা গেছে এই ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাত্রি বেলা। গুলিবিদ্ধ সুনীল গুপ্তার মেয়ে বেলা জানিয়েছেন, ‘ বুধবার রাত্রি ৮ নাগাদ প্রতিবেশী দীননাথ সিংয়ের মেয়ে লক্ষী পাণ্ডে এসে তার ভাই আদিত্যকে অযথা গালাগালি করতে থাকে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/05/IMG-20220512-WA0004.jpg)
তার প্রতিবাদ করতে গেলে দীননাথ সিংয়ের ৪ ছেলে ছোটু, গুড্ডু, গণেশ, রামলাড্ডু এবং জামাই অখিলেশ পাণ্ডে মিলে সুনীল গুপ্তার ছেলে আদিত্যকে বেধড়ক মারধর করে। আদিত্যকে মারের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে মার খান আদিত্যর মা এবং দিদিও। রাতেই এরা হাসপাতালে যান। পরে সেখান থেকে টাউন থানায় যান। টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করে বাড়িতে ফেরেন রাত দেড়টা নাগাদ।
বেলা জানান, “এরপরই রাত ৩ নাগাদ প্রায় ৫০জন মিলে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তার মধ্যে ৬/৭ জন জানলা ভেঙে ঢুকে পড়ে বাড়ির ভেতরে। অবাধে লুটপাট চালায় তারা। নগদ ৫ হাজার টাকা ছাড়াও সোনার গহনা ইত্যাদি লুট করে দুস্কৃতিরা। বাধা দিতে গিয়ে ফের আক্রান্ত হই আমরা। এই সময় আমার বাবা সুনীল গুপ্তা তাদের সরাসরি বাধা দিতে গেলে ছোট্টু সিং সরাসরি বাবাকে রিভলবার থেকে গুলি করতে থাকে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/05/IMG-20220512-WA0003.jpg)
বাবার পেটে ৩ টা ও পায়ে একটা গুলি লাগে।” রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন সুনীল। তাঁকে প্রথমে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে এবং সেখান থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। পালিয়ে যায় দুস্কৃতিরা। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। এখনও অবধি এই ঘটনায় দীননাথ সিং ও তাঁর মেয়ে লক্ষী পাণ্ডেকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও ছোট্টু সিং সহ বাকি দুস্কৃতিরা পলাতক।
জানা গেছে রেলের পরিত্যক্ত এই আবাসনকে ঘিরে গড়ে ওঠা বস্তির মধ্যেই গাড়ি ভাড়া দেওয়া, গরুর দুধ ইত্যাদি ব্যবসা করে ওই অভিযুক্ত পরিবার। সংলগ্ন মাঠ ও রাস্তার ওপর ভাড়ার গাড়ি, গরু ইত্যাদি রাখে তারা। বস্তিবাসীর যাতায়াতের অসুবিধা হলে প্রতিবাদ করলেই সিং পরিবার এই ধরনের দাদাগিরি চালিয়ে যায়। কিন্তু ঘটনা শুধু এখানেই থেমে নেই তা প্রমাণ হয়ে গেছে গুলি চালানোর ঘটনায়। সিং পরিবারের কাছে লাগাতার গুলি চালানোর মত স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র কেন? তা’হলে গাড়ি, গরুর আড়ালে রেলের পরিত্যক্ত আবাসনগুলি থেকে খড়গপুর শহরে দুস্কৃতি রাজও চলে? উঠছে এই প্রশ্নও। বেলা আক্ষেপ করে বলেছেন, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর যদি একবার পুলিশ এসে ঘটনাস্থল ঘুরে যেত তা’হলে আমার বাবাকে গুলি খেতে হতনা।