নিজস্ব সংবাদদাতা: কোনও জায়গার ঠিকানা যদি কেউ আপনাকে জানতে চায় তাহলে সাবধান হতে হবে। কারন এখন এটাই নয়া কায়দা ছিনতাইবাজদের। কোনও একটি জায়গা কোথায় এটা জানতে চেয়ে ওরা আপনার কাছাকাছি চলে আসবে এবং তারপরই মুহূর্তের অসতর্কতায় আপনার গলায় থাকা মূল্যবান হারটি ছিনিয়ে নিয়ে পালাবে। শুক্রবার ঠিক এই কায়দাতেই দু’দুটো ছিনতাই হয়ে গেল খড়গপুর শহরে। ছিনতাইবাজদের এই নয়া ‘তরিকা’ বা পদ্ধতিতে চক্ষুচড়কগাছ পুলিশের।
খড়গপুর টাউন থানা সূত্রে জানা গেছে প্রায় আধঘন্টার ব্যবধানে ঘটেছে ঘটনা দুটি। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে সকাল ৭টা নাগাদ রেলের MS টাইপ কোয়ার্টারের কাছেই বজরংবালি মন্দিরের কাছে আলফা গ্রাউন্ড সংলগ্ন একটি শিবমন্দির লাগোয়া রাস্তায়। এ. উমা নামক এক বৃদ্ধা শিবমন্দিরে পূজা দিয়ে ফিরছিলেন। তাঁকে দাঁড় করায় এক যুবক যার মুখে মাস্ক পরা ছিল।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/11/IMG-20211112-WA0015.jpg)
মহিলাকে দাঁড় করিয়ে তাঁর একেবারে কাছে গিয়ে একটা ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে ওই যুবক। অন্য যুবক হেলমেট পরে অদূরেই বাইক চালু করেই দাঁড়িয়েছিল। বৃদ্ধা জানান তিনি ওই ঠিকানা বলতে পারবেননা। মুহুর্তেই ওই যুবক তার নাগালে চলে আসা বৃদ্ধার গলার হার ছিনিয়ে নিয়ে বাইকে গিয়ে ওঠে। তারপর উধাও হয়ে যায়।
এ উমার নাতনি কীর্তি জানিয়েছেন, ঘটনার সময় আলফা গ্রাউন্ডে অনেকেই মর্নিং ওয়াকিং করছিলেন। বাচ্চারা খেলছিল। আমাদের বাড়িও ওখানেই। আমরা ভাবতেই পারছিনা এত লোক সমাগমের মাঝখানে কেউ এভাবে কৌশল করে হার ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কীর্তি জানিয়েছেন সাড়ে তিন ভরি সোনার হার ছিল তাঁর ঠাকুমার গলায়। চিৎকার চেঁচামেচি করার মধ্যেই পালিয়ে যায় ওই দুই যুবক।
পরের ঘটনাটি ঘটেছে একেবারে এক গৃহস্থ বাড়ির সামনে। মথুরাকাটির যেখানে দুর্গাপূজা হয় তারই লাগোয়া স্ক্র্যাপ ইয়ার্ড লাগোয়া রেল আবাসনে। দৈনন্দিনের মতই বাড়ির সামনে আল্পনা দিচ্ছিলেন বাড়ির এক গৃহবধূ। পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন আরেক গৃহবধূ। ঠিক একই কায়দায় বাইক তাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়ায় একজন মাস্ক পরা যুবক। অন্য হেলমেট পরিহিতা যুবক একটু দূরে দাঁড়ায় বাইক চালু অবস্থায়। মাস্ক পরা যুবক জানতে চায় এখানে আ্যপার্টমেন্ট কোথায় আছে। ওই গৃহবধূ জানিয়ে দেন আ্যপার্টমেন্ট এখানে নেই আছে মালঞ্চ এলাকায়। ওই গৃহবধূর গলায় কোনও হার ছিলনা। যুবক পাশের গৃহবধূর গলায় হার লক্ষ্য করেন এবং তাঁর কাছে গিয়ে একই প্রশ্ন করেন। গৃহবধূ জানান তিনি জানান যে তিনি জানেননা। বলেই গৃহবধূ পেছন ফিরতেই ওই যুবক তাঁর গলায় হাত দিয়ে হার ছিনতাই করে পালান।
দুই পরিবারের বর্ননা অনুযায়ী একই দুষ্কৃতিদলটি কাজটি করেছে বলেই মনে হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের মধ্যে যে যুবক হার ছিনতাই করেছে সেই যুবক বেশ লম্বা এবং সুবেশী। ওই যুবক কোট পরেছিল। একটি হালকা রঙের বাইক ব্যবহার করেছিল তারা। পুলিশ জানিয়েছে, এটি একটি নয়া কায়দা দুষ্কৃতিদের। রাস্তাঘাটে প্রাতঃভ্রমনকারীরা অনেকেই এখন ছিনতাইবাজদের সম্পর্কে সচেতন। সাধারণভাবে তাঁরা এখন গয়না নিয়ে প্রাতঃভ্রমন করতে বের হননা। হলেও সচেতন থাকেন। তাই কোনও কিছু জানতে চেয়ে সরাসরি সামনে চলে যাচ্ছে তারা। আর কথা বলার ফাঁকে অন্যমনষ্কতার সুযোগ নিয়ে ছিনতাই করছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশের এক অধিকারিক জানিয়েছেন, ‘ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি আমরা। দুই মহিলার বর্ননা অনুযায়ী অপরাধীদের সনাক্ত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। কিন্তু যদি কেউ কিছু প্রশ্ন বা ঠিকানা জানতে চেয়ে মানুষের কাছে আসে তবে কী করবে মানুষ? ওই আধিকারিকের বক্তব্য, এক্ষেত্রে অপরিচিত কেউ কোনও কিছু জানতে চাইলে তাকে দুরে দাঁড়িয়েই কথা বলতে হবে। বলতে হবে কাছে আসবেননা। দূর থেকেই উত্তর দিতে হবে। এরপরও যদি কেউ কাছে আসতে চায় তবে আগেই চিৎকার করে তাকে সতর্ক করতে হবে। এতেই কাজ হবে কারন ওই চিৎকারে আশপাশের লোকেরাও সচেতন হয়ে যাবে এই ভেবেই দুষ্কৃতিরা পালাবে।’