নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুরের হোটেলে দেওয়া হচ্ছে আইআইটির (IIT Kharagpur) চাকরি! আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসে নিয়ে গিয়ে হচ্ছে ইন্টারভিউ। তারপর মেডিক্যাল টেস্ট। হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটার। প্রথম ৬ মাস প্রবেশনাল পিরিয়ড। হাতে মিলবে মাসিক ১১,৭০০ টাকা স্টাইপেন্ড। ৬ মাস পরেই ২৪ হাজার টাকার পাকা চাকরি। পদের নাম মেডিক্যাল টেকনোলজি ল্যাবরেটরি আ্যসিস্টেন্ট এবং সিকিউরিটি গার্ড। কাজ করতে হবে আইআইটি খড়গপুরের ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স এন্ড রিসার্চ ( Dr. Shyama Prasad Mukherjee Institute of Medical Sciences and Research is a super specialty hospital)
বা সোজা কথায় আইআইটি খড়গপুরের নব নির্মিত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সিকিউরিটি গার্ডের জন্য নেওয়া হচ্ছে ৩ লাখ আর ল্যাব (Junior Technician/Junior Laboratory Assistant) আ্যসিস্টেন্ট পদের জন্য ৫লাখ। প্রথমে কিছু টাকার বিনিময়ে হাতে আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটার তুলে দেওয়ার পরই আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষের নাম করেই নিয়ে নেওয়া হচ্ছে সমস্ত পাশ সার্টিফিকেটের অরিজিনাল কপি। এরপর ৩ কিংবা ৫ লাখ টাকার বকেয়া অংশ দিলেই ফেরৎ দিয়ে দেওয়া হবে ওই কপি। ওই সমস্ত কপির সাথে আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে হাসপাতালে গেলেই জয়েন্ট করানো হবে চাকরিতে!
একেবারে ঝকঝকে তকতকে আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটার! আইআইটি খড়গপুরের ওয়াটার মার্কিং করা লেটার হেডে আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটার। নিচে সই করা রেজিস্টার আইআইটি খড়গপুর এবং হেড অফ দি ডিপার্টমেন্ট,ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স এন্ড রিসার্চ। জালিয়াতির নিখুঁত ছক, চট করে ধরার উপায় নেই। মঙ্গলবার সকালে খড়গপুর শহরের ইন্দা এলাকার আশীর্বাদ লজ থেকে এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে খড়গপুর শহর ও গ্রামীণ থানা এলাকার তিন পান্ডাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/07/Screenshot_20220712-235544_PicsArt.jpg)
ধৃতরা হল ইন্দা বিদ্যাসাগরপুরের বাসিন্দা রবিশঙ্কর দাস। হিজলী কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাগর রাউৎ, তালবাগিচা এলাকার অভিজিৎ দাস এবং খড়গপুর গ্রামীন থানার চামরুসাইয়ের বাসিন্দা তপনজ্যোতি মান্না। জানা গেছে, খড়গপুর শহরের ইন্দা এলাকার আশীর্বাদ লজে উত্তরবঙ্গের আলিপুর দুয়ার ও মালদা থেকে প্রায় ৮ জন এসে উঠেছিল। পদ অনুযায়ী টাকার চুক্তি হয় এঁদের সঙ্গে। মালদার হবিবপুর থানার উজ্জ্বল বর্মন পুলিশকে জানান ল্যাব আ্যসিস্টেন্ট পদের জন্য ৫লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল। তিনি ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে আলিপুরদুয়ার থেকে আসা কৌশিক রায়, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস সহ ৩জন ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন। গার্ডের পদের জন্য তাঁদের আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা দিতে হত।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/07/Screenshot_20220713-000023_WhatsAppBusiness.jpg)
খড়গপুরের ওই চার জালিয়াত আলিপুর দুয়ারের এক দালাল ভিকি হাজারি মারফৎ এই চাকুরী প্রার্থী বেকার যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। গত জুন মাসে এঁদের আইআইটি ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একটি জাল ইন্টারভিউর ব্যাবস্থাও করা হয়। বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ( Kharagpur Sub-divisonal Hospital) ২ টাকার টিকিট কাটিয়ে মেডিক্যাল টেস্টের নাটকও করা হয় মাস খানেক আগে।
এরপর এঁরা বাড়ি চলে যান। সেই সময় এঁদের অরিজিনাল মার্কশিট, সার্টিফিকেট ইত্যাদি রেখে দেওয়া হয়। ৫০ হাজার থেকে সাড়ে ৩লাখ টাকা অবধি এঁরা দেয় ভিকি হাজারিকে। সেই টাকার ভাগ পৌঁছে যায় খড়গপুরের জালিয়াতদের কাছে। জালিয়াতরা আবার আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটার পাঠায় প্রত্যেকের নামে। আজ, ১২ই জুলাই তাঁদের জয়েনিং করার তারিখ ছিল। সেই মত গতকালই এঁরা আশীর্বাদ লজে এসে পৌঁছায়। মঙ্গলবার সকালে ওঁদেরকে দালালরা আইআইটিতে জয়েন করারোর জন্য হাজির হয় এবং অবশিষ্ট টাকা দাবি করে কিন্তু আপত্তি জানায় আলিপুর দুয়ারের তিনটি ছেলে। তাঁরা জানায়, আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটারের সই গুলি কেন লাল কালিতে করা? কেন একেকটা সই একরকম?
ওই ৩ জন বলে তাঁরা এই চাকরি করবেননা। তাঁরা যে ৫০ হাজার টাকা করে অগ্রিম দিয়েছে তা ফেরৎ দিয়ে দেওয়া হোক এবং তাঁদের সমস্ত অরিজিনাল সার্টিফিকেট ফেরৎ দেওয়া হয়। এরপরই দালালদের আসল রূপ বেরিয়ে আসে। দালালরা এবার হুমকি দিতে থাকে বাকি টাকা না দিলে, সার্টিফিকেট তো দেওয়াই হবেনা উল্টে মেরে লাশ গুম করে দেওয়া হবে। দীর্ঘ টানা পোড়েনের পর আলিপুর দুয়ারের ওই তিনজন তাঁদের পরিচিত এক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেন সালুয়াতে। সালুয়ার বাসিন্দা সমাজসেবি রওশন লামা সরাসরি খড়গপুর টাউন থানায় যোগাযোগ করেন আর তারপরই পুলিশ হানা দেয় আশীর্বাদ লজে।
আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ গোটা বিষয়টিকেই একটি জালিয়াতি বলে উল্লেখ করে বলেছেন, তাঁদের তরফে ওই পদের জন্য কোনও ধরনের আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটার ছাড়া হয়নি। ওই পদের জন্য আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটার রেজিস্টারের অফিস থেকে ছাড়া হয়না, ছাড়া হয় ডিরেক্টটারের অফিস থেকে। এই ব্যাপারে ‘KGP বাংলা’-র তরফে যোগাযোগ করা হয় ‘ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স এন্ড রিসার্চ’ এর এক আধিকারিকের সঙ্গে। তিনি জানান, ৩০০ শয্যার এই আধুনিক হাসপাতাল কাম মেডিক্যাল কলেজের ‘জুনিয়র টেকনিশিয়ান’ ও ‘জুনিয়র ল্যাবরেটরি আ্যসিস্টেন্ট’ পদের জন্য গত মে মাসের ২৫ তারিখ আইআইটি খড়গপুরের নালন্দা ক্লাসরুম কমপ্লেক্সে (Nalanda Classrooms Complexe) লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। সেখানে যাঁরা উর্ত্তীণ হবেন তাঁদের আবার ভাইভা টেস্ট হবে। তার দিনক্ষণই এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ফলে আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটার ছাড়ার কোনও প্রশ্নই ওঠেনা। যা হয়েছে তা পুরোটাই জালিয়াতি।