নিজস্ব সংবাদদাতা: পুজোর আগেই চাকরি পেয়ে যাবেন অন্তত ৩০ হাজার যুবক। দিন কয়েক আগেই প্রথম দফার নিয়োগপত্র কলকাতা থেকে বিলি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় ১০ হাজার যুবক যুবতী পেয়েছিলেন সেই নিয়োগপত্র। আজ বৃহস্পতিবার খড়গপু্র থেকে আরও ৮ হাজার নিয়োগপত্র দেওয়ার ঘোষনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুই মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামের যুবক যুবতীদের জন্য এই কর্ম সংস্থান। নিশ্চিত ভাবেই পুজোর আগে এটা হতে পারত বাঙালি বেকার যুবক যুবতীদের জন্য আনন্দের খবর কিন্তু বৃহস্পতিবারই একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশ করা খবর চমকে দিয়েছে বাঙালিকে। ওই সংবাদপত্রটি জানাচ্ছে সরকারের দেওয়া এই নিয়োগপত্রের অনেকগুলিই ভুয়ো এমনটাই জানাচ্ছে বেশ কয়েকটি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে সেই খবর কাগজের একটি কাটিং।
এই সংবাদপত্রের ভাইরাল হওয়া কাটিংটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি কেজিপি বাংলার পক্ষে। জানা গেছে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর একটি নিয়োগকারী সংস্থায় ফোন করেছিলেন এক অভিভাবক। টেলিফোনের অপরপ্রান্তে দিলেন নিয়োগ সংস্থার সেন্টার ম্যানেজারের সঙ্গে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/09/IMG-20220915-WA0002.jpg)
সেই সেন্টার ম্যানেজার স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কোনও কথাই হয়নি তাঁদের। তারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাউকেই নিয়োগ করছেন না। এরপর গত ১২ই সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সেই অফার লেটারের স্ক্রিন শট পাঠান অভিভাবক। এরপরই সেন্টার ম্যানেজার বলেন, “দেখুন আমি আপনাকে একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই। যে অফার লেটার বলছেন, সেটা ফেক (ভুয়ো)। আবার বলছি, এটা ফেক। তবে আমি যে ফানফার্স্ট কোম্পানি থেকেই বলছি এটা সত্যি । গুজরাটে সুজুকি কোম্পানির সঙ্গে আমাদের আইটিআই নিয়ে প্রশিক্ষণের কর্মসূচী চলে। এটাও ঠিক । গুজরাটে যারা আসে তাদের কাছে এই অফার লেটারই যায়। আমার নামেই যায়। আমার নাম্বারই দেওয়া। কারণ, আমি এখানকার সেন্টার ম্যানেজার। সবটা ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের অফার লেটারকে নিপুণভাবে ‘গলত তারিকা’ সে ব্যবহার করা হয়েছে।”
জানা গেছে ওই কোম্পানির নাম ফানফার্স্ট স্কিলার প্রাইভেট লিমিটেড। বহুদিন ধরেই স্কিল ডেভলমেন্টের কাজ করে যাচ্ছে ওই কোম্পানি। ওদের হেড অফিস মুম্বাই। আহমেদাবাদ থেকে একশ দশ কিলোমিটার দূরে মারুতি সুজুকি কোম্পানিকে তারা গত দু’বছর ধরে মানব সম্পদ সরবরাহ করে আসছে। সংস্থার সেন্টার ম্যানেজারের নাম বেদ প্রকাশ সিং। তিনি বলছেন, “পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোনও ছেলেকে আমাদের কাজ দেওয়ার কথা নেই। আমাদের অফার লেটার নিয়ে ভুয়ো করে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।” ওই ম্যানেজার আরও বলেন, ” ওই অফার লেটারে যা আছে সেই মত ১১-১৫ ই সেপ্টেম্বর মধ্যে যাদের আমরা (বাংলা নয়)যোগাযোগ করতে বলেছিলাম তারা সবাই এসে গেছে। আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুধু একের পর এক ফোন এসেই যাচ্ছে।” এরপরই ফোন কেটে দেন ওই অভিভাবক। এখন প্রশ্ন কে বা কারা এই নিয়োগপত্র জাল করল আর তা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মারফত বেকার যুবক যুবতীদের কাছে পৌঁছালো কী করে? উৎকৃষ্ট বাংলার নামে নিকৃষ্ট বাংলার এই কাজটি করল কে?
এদিন খড়গপু্র থেকে ৫ জেলার প্রায় ৮ হাজার যুবক যুবতীর চাকরি হবার কথা বলার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী যুবক যুবতীদের তেলেভাজা, কচুরিপানার থালা, কাশফুলের বালিশ সহ নানা ধরনের কাজ করে উপার্জনের সুবর্ণ সুযোগ গ্রহন করার কথাও বলেন। তিনি আরও বলেন ক্ষুদ্র শিল্পই আসল সোনা। যার থেকে ধারনা করা হচ্ছে যে রাজ্যে বড় ও ভারী শিল্পের বিকাশ বোধহয় আর খুব বেশী কিছু হওয়ার নয়। প্রতিবছর যে ধুমধাম করে বিশ্ব বাংলা বানিজ্য সম্মেলন করা হয় এবং বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগের কথা বলা হয় তার প্রকৃত অবস্থা কী তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। খড়গপু্রের জন্য আশার আলো একটাই যে এদিন টাটা মেটালিকস মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে তাঁদের একটি সম্প্রসারিত ইউনিটের উদ্বোধন করিয়েছে। যদিও এই উদ্বোধন আবার মনে করিয়ে দিয়েছে টাটাদের সিঙুর থেকে তাড়িয়ে কী ভাবে নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছে বাংলা বিশেষ করে আজকের শাসকদল।