নিজস্ব সংবাদদাতা: শুক্রবার রাতেই ‘KGP বাংলা’য় প্রথম প্রকাশিত হয় খড়গপুর শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে জোরালো শব্দবাজিতে একটি কুকুরের পা ও ল্যাজ উড়ে যাওয়ার ঘটনা। রাতেই খড়গপুর ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এই বর্বর ঘটনার কথা। সমাজের সর্বস্তর থেকে ধিক্কার উঠে আসে। তোলপাড় হয় খড়গপুর শহরও। দোষির শাস্তি দাবি করে ঝড় বয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘটনার খবর পেয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন খড়গপুর টাউন থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ তথা IC বিশ্বরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, খড়গপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক SDPO দীপক সরকার এবং খড়গপুরের দায়িত্ব প্রাপ্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায়। পাশবিক বর্বরতার বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ঘটনায় ইতিমধ্যে ৭জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে।
শনিবার সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান খড়গপুর IC এবং SDPO. আহত কুকুরটিকে দেখেন তাঁরা। এরপর এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে কারা কারা এই কাজ করতে পারে তার সম্ভব্য তালিকা তৈরি করা হয়। এদিনই খরিদা গুরুদুয়ারার যে অংশে কুকুরটিকে আহত অবস্থা পাওয়া যায় তার আশপাশ থেকে ৭জনকে তুলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এরা দোষি নাও হতে পারে কিন্তু ওই এলাকায় অনেক রাত অবধি এরা ঘোরাফেরা করে থাকে। আমরা এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনাটির সূত্রে পৌঁছাতে চাইছি। কুকুরটি ওই এলাকারই। আমাদের ধারণা এলাকারই কেউ বা কারা এটা করে থাকবে। আমরা আসল দুষ্কৃতিকে সনাক্ত করবই।’
এদিকে এলাকার মানুষদের কাছে খবর পেয়ে যে ব্যক্তি প্রথম কুকুরটিকে উদ্ধার করে শুশ্রূষা শুরু করেছিলেন খড়গপুরের পশুপ্রেমী সংগঠন STREET PAWS কর্ণধার কমলজিৎ সিং জানিয়েছেন, কুকুরটি এই মুহূর্তে ভালো রয়েছে। শনিবার দুপরে তিন পায়েই ঘোরাঘুরি করেছে। তবে সামান্য রস ঝরছে ক্ষতস্থান দিয়ে। রবিবার ফের ড্রেসিং করা হবে এবং আ্যন্টিবায়োটিক চালু করা হবে। পুলিশের তরফে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। IC সাহেব আমাদের একটি অভিযোগ দায়ের করতে বলেছেন। আমরা শনিবার সন্ধ্যাবেলায় টাউনথানায় অভিযোগ দায়ের করব। পুলিশের তৎপরতায় আমরা আসার আলো দেখছি। আশা করছি প্রকৃত দোষিকে পুলিশ ধরতে পারবে।’
শুক্রবার কুকুটির অপারেশন করে বাঁ পা জানু থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে ল্যাজের সিংহভাগ। অপারেশন করেছিলেন ভেটনার অসীম দে। খড়গপুর শহরের ওই পশুচিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে কুকুরটি। অসীম দে ও জানিয়েছেন, ‘পুলিশের তৎপরতায় খুব ভালো লাগছে। রবিবার সকালেই SDPO সাহেব আমার সঙ্গে কথা বলে কুকুরটির আহত হওয়ার ধরন ও ক্ষতের পরিমাণ জানতে চেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন প্রকৃত দোষিকে খুঁজে বের করবেই পুলিশ। যদি সত্যি সত্যি এই কাজে পুলিশ সফল হয় তবে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। পথের পশুদের সংগে এই ধরনের বর্বরতা করতে সাহস পাবেনা কেউ।’
উল্লেখ্য কয়েকদিন আগে শব্দবাজিতে ওই কুকুরটির বাঁ পা ও লেজ উড়ে গিয়েছে। ক্ষত হয়েছে বাঁ চোখের নিচেও। মনে করা হচ্ছে হয় কুকুরটির শরীরে বাজি আটকে দেওয়া হয়েছিল অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় তার ওপর বাজি পোড়ানো হয়েছে। এলাকার মানুষের অভিমত বিস্ফোরণ থেকে পালানোর কোনও সুযোগ পায়নি কুকুরটি। খড়গপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মামলাও দায়ের করতে চলেছে পুলিশ। এই ধরনের বর্বরতা যে বা যারা ঘটিয়েছে তাদের কোনও ভাবেই রেয়াৎ করা হবেনা।’ আইনজীবীরা জানিয়েছেন, যদি অপরাধীকে সনাক্ত করে তাকে আদালতে দোষি সব্যস্ত করা যায় তবে প্রথম অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীর ২বছরের জেল ও ২৫হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।