নিজস্ব সংবাদদাতা: শনিবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে খড়গপুর শহর এবং সংলগ্ন এলাকায়। শুক্রবারও শহরের কিছু অংশে বৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু শনিবার বৃষ্টির পরিমান অনেকটাই বেশি। শনিবার বিকালের পর থেকে বৃষ্টির সাথে শুরু হয়েছে মেঘের গর্জন, যা বলে দিচ্ছে আকাশে বর্জ্রগর্ভ মেঘের উপস্থিতি। অনুমান করা হচ্ছে এদিন রাতভোর বৃষ্টি হতে চলেছে। আবহাওয়া দপ্তরের অনুমান রবিবার ভারী বৃষ্টির মুখে পড়তে চলেছে খড়গপুর সহ গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাই। বাদ পড়বেনা পূর্ব মেদিনীপুরও। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস রবি এবং সোমবার (১৯ এবং ২০শে সেপ্টেম্বর) ভারী বৃষ্টি হতে পারে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং নদীয়ায়।
কারন হিসাবে বলা হচ্ছে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। শনিবার এই ঘূর্ণাবর্ত পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। রবিবার থেকে যা ক্রমেই উত্তর ওড়িশা ও বাংলা উপকূলে প্রভাব ফেলবে। একইসঙ্গে মৌসুমী অক্ষরেখা জামশেদপুর থেকে দিঘা হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই দুইয়ের সাঁড়াশি আক্রমণে ভুগবে বাংলা। আবহাওয়া দপ্তরের হিসাব মিলিয়েই শনিবার থেকেই দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার পরিবর্তন শুরু হয়েছে। মেঘলা আকাশের সাথে ধিরে ধিরে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করেছে। শনিবার মূলত বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। যার চরিত্র বদলে যেতে চলেছে কয়েকঘন্টার মধ্যে।
বৃষ্টি আরও বাড়লে ফের বিপদ বাড়বে ঘাটাল এবং সবং, পিংলা,নারায়নগড় ও সন্নিহিত পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের দুটি ব্লকে। এমনিতেই গত সোম, মঙ্গল ও বুধ মিলিয়ে আড়াই দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে ওই ৬টি থানা এলাকা। সবং লাগোয়া ডেবরা ও ঘাটাল লাগোয়া চন্দ্রকোনার দুটি ব্লক এলাকার অবস্থাও খুব ভালো নয়। জলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে কেশপুরেরও। সবং, পিংলা, নারায়নগড় ও পটাশপুরের ২টি ব্লক ধরলে ৫লক্ষ মানুষ জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। সঙ্গে ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, কেশপুর ধরলে সংখ্যাটা ১০ লক্ষের কাছাকাছি। দেড় লক্ষেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। ঘাটাল এলাকায় জলের পরিমান বাড়ছে। এরই মধ্যে নতুন করে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস তাই আতঙ্ক জাগিয়েছে মানুষের মনে।
ওদিকে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ মিলছেনা বলে অভিযোগ আসছে বিভিন্ন বিপর্যস্ত এলাকা থেকে। সবংয়ের নওগাঁ, চাউলকুড়ি, দশগ্রাম প্রভৃতি এলাকা থেকেই বেশি অভিযোগ আসছে ত্রাণ নিয়ে। পুলিশের পক্ষ থেকে কমিউনিটি কিচেন খুলে কিছু জায়গায় রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার। যদিও মানুষের অভিযোগ প্রয়োজনের তুলনায় তা অত্যন্ত কম। ভয়াবহ সঙ্কট রয়েছে পানীয় জলের। মিলছেনা গো-খাদ্য। ফলে সঙ্কটে গবাদি পশুরাও।
এদিকে ডেবরা থানার বালিচক লাগোয়া অঞ্চলের অবস্থাও খুবই করুন। কোনও নদীর উপস্থিতি ছাড়াই কেবলমাত্র জল নিকাশি ব্যবস্থার অভাবে প্রবল বৃষ্টিপাতের জন্য বালিচক স্টেশনের উত্তরদিকে ভোগপুর পূর্ব পশ্চিম, গোটগেড়িয়া, রঘুনাথপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা ব্যাপকভাবে প্লাবিত। পাকা বাড়ির একতলায় জলের তলায়। ছোট বাড়িগুলি প্রায় পুরোপুরি জলে ডুবে গিয়েছে। অসহায় অবস্থায় মানুষ যে যেখানে পারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ঘরের জিনিসপত্র অনেক কিছুই জলের তলায় চলে গিয়েছে। রাস্তার উপরে প্রায় এক মানুষ জল। এলাকায় হাহাকার পড়ে গিয়েছে। স্থানীয় বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে প্রশাসনের দপ্তরে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। প্রশাসনের এই নির্বিচার ভূমিকার জন্য এলাকার মানুষ প্রচন্ড ক্ষুব্ধ।এই এলাকায় মন্ত্রী হুমায়ুন কবির ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ প্রদীপ কর কিছু ত্রাণ পাঠালেও তা পর্যাপ্ত নয়, পানীয় জলের মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
মানুষ জানিয়েছেন,কয়েকদিন আগেই তাঁরা ডেবরা থানার বিডিও নবনির্বাচিত বিধায়ক হুমায়ুন কবির সহ প্রশাসনকে কাছে দাবি জানিয়েছিলেন বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় আগাম কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিডিও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। রেলের পাওয়ার স্টেশনের প্রাচীর ভেঙে গিয়ে জল নিকাশি ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়া স্বত্ত্বেও সেখানে সংস্কার হয়নি বলেই এই দুর্দশা। এরই মধ্যে নতুন করে বৃষ্টির পূর্বাভাসে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সেখানকার মানুষ।