নিজস্ব সংবাদদাতা: পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপু্র গ্রামীণ থানার অন্তর্গত অকড়া বসন্তপুর এলাকায় এক ব্যাক্তির মৃতদেহ উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ওই গ্রামে। পঞ্চাশোর্ধ ওই ব্যাক্তির রক্তাক্ত দেহটি উদ্ধার হয়েছে অকড়া গ্রামের একটি চোলাই মদের ঠেকের অদূরেই। মৃতের দেহের বিভিন্ন অংশে কালশিটে দাগ দেখা গেছে। মুখমন্ডলে আঘাতের লক্ষন রয়েছে। নাক থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তেও দেখা গেছে। খড়গপু্র গ্রামীণ থানার পুলিশ শনিবার রাত আটটা নাগাদ অকড়া গ্রাম থেকে ওই মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খড়গপু্র মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। রবিবার সেই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম শুকদেব ঘোড়াই বাড়ি ওই গ্রামেই।
স্থানীয় তৃনমূল কংগ্রেস নেতা সুশান্ত পাল জানিয়েছেন, ” শুকদেববাবুকে দুপুরের পর থেকে খোঁজ মিলছিল না । বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি তাঁকে। সন্ধ্যাবেলায় খবর পাওয়া যায় গ্রামের একটি জায়গায় এক ব্যাক্তির সংজ্ঞাহীন দেহ পড়ে রয়েছে। আমরা গিয়ে দেখতে পাই ওই ব্যক্তিই শুকদেব ঘোড়াই । স্থানীয় চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরই আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানাই। দেখে মনে হচ্ছে মারধরের ফলেই মৃত্যু হয়েছে শুকদেবের। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। আমরা চাই দোষীকে চিহ্নিত করে তাদের যাতে কঠিন শাস্তি হয় পুলিশ সেই ব্যবস্থা করুক।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ঘটনার দিন মৃত শুকদেব ঘোড়াইয়ের স্ত্রী কল্পনা ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন না। তিনি বাপের বাড়ি পাশের থানা ডেবরার খানামোহন গ্রামে গেছিলেন ছেলেকে নিয়ে। বাড়িতে ছিলেন শুধু মৃতের বৃদ্ধা মা ছিলেন। সকাল ১০ টা নাগাদ যখন পারিবারিক কাজে বাড়ির বাইরে ছিলেন সেই সময় তাঁর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে গ্রামেরই এক টোটো চালক গৌতম প্রধান কে দেখা যায় স্থানীয় একটি ব্যাঙ্কের পথে নিয়ে যেতে। বৃদ্ধা যেহেতু পেনশন ভোগী তাই শুকদেবের আশংকা হয় যে তাঁর মাকে দিয়ে পেনশন তোলানোর পর গৌতম সেই পেনশন আত্মসাৎ করতে পারে। শুকদেব গৌতমকে আটকান এবং প্রশ্ন করেন কেন সবার অনুপস্থিতিতে তার মা কে নিয়ে ব্যাঙ্কে যাচ্ছে গৌতম। দুজনের মধ্যে বচসা শুরু হয়। অভিযোগ এই বচসার সময় গৌতম ও তার ছেলে রাহুল শুকদেবকে বেধড়ক মারধর করে।
মৃত শুকদেবের স্ত্রী কল্পনা অভিযোগ করেন, “শুধু ওখানেই নয়, ওই ঘটনার পর আমার স্বামী বাড়ি চলে আসে। বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ ফের গৌতম ও রাহুল মিলে আমার বাড়িতে যায়। এবার লাঠি আর রড দিয়ে মারধর করা হয় আমার স্বামীকে। মারধর করার পর তারা হুমকি দিয়ে যায় বাড়ি থেকে আমার স্বামী যদি বের হয় তবে প্রাণে মেরা ফেলা হবে। দুপুর ৩ টা নাগাদ আমার স্বামী ওষুধ আনার জন্য বসন্তপুর বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান তারপর আর বাড়ি ফেরেনি। পরে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। আমি নিশ্চিত যে ওই বাবা ছেলের মারেই মৃত্যু হয়েছে। আমি চাইছি কঠিন শাস্তি হোক ওদের।”
একটি সূত্রে জানা গেছে শুকদেবের সঙ্গে গৌতমের একটি পুরানো শত্রুতা ছিল এবং তা ছিল শুকদেবের স্ত্রী কল্পনাকে ঘিরে। অভিযোগ কল্পনার প্রতি খারাপ নজর ছিল গৌতমের। কল্পনার অভিযোগ এই যে গৌতম তাকে প্রায় কু প্রস্তাব দিত যা তিনি তাঁর স্বামীকে জানিয়ে ছিলেন। তাই নিয়ে দুজনের মধ্যে একটা তিক্ত সম্পর্ক ছিল। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। মদের ঠেকের কাছে শুকদেব কী করে এল তার তদন্ত করছে পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ” যে দুফায় মারপিট বা মারধর হয়েছিল তখন শুকদেবের শরীরে কোন রক্তের চিহ্ন ছিল বলে জানা যায়নি কিন্তু মদের ঠেকের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া শুকদেবের মুখমন্ডলে রক্তের চিহ্ন ছিল। সেটা কী ভাবে এল ? পড়ে গিয়ে নাকি মারধরের ফলে তা ময়নাতদন্ত শেষে জানা যাবে। আমরা সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।” পুলিশ ওই মদের দোকানের কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।