নিজস্ব সংবাদদাতা: নদী তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? মহাদেবের জটা হইতে! বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্রের বসুর সেই জিজ্ঞাসা, সেই কৌতূহল আজও তাড়িয়ে বেড়ায় বিশ্বের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীদের। না, নদীর উৎস আজ সবারই হয়ত জানা কিন্তু বহমান নদীর খাঁজে খাঁজে কত রহস্য, কত চমক তা আজও অপার বিস্ময়ের। কেন নদীর ভাঙন হয়? কেন বন্যায় নদীর ব্রিজ ভেসে যায়? কী করে তা রোধ করা সম্ভব? ইত্যাদি রহস্যকে জেনে তাকে বিশ্লেষণ করে মানব সভ্যতার অগ্রগতির কাজে ব্যবহার, এসবই আজ বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের অন্যতম চর্চার বিষয়। সেই চর্চার পথে হেঁটেই এবার আন্তর্জাতিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হলেন আইআইটি খড়গপুরের প্রথিতযশা গবেষক, অধ্যাপক শুভাশিস দে। তাঁর নদীর গতিরহস্যময়তা বিষয়ক গবেষনার জন্য তাঁকে বিশ্ববন্দিত হান্স আ্যলবার্ট আইনস্টাইন আ্যওয়ার্ড দিচ্ছেন আমেরিকার সোসাইটি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং।
উল্লেখ্য গত ৩০বছর এই পুরস্কার আসেনি ভারতের মাটিতে। কারন বিশ্বের উন্নত দেশগুলি গবেষণার জন্য যে বিপুল পরিকাঠামো ও অর্থ বিনিয়োগ করা হয় তার ছিঁটেফোঁটা সুযোগ মেলেনা ভারতীয় বিজ্ঞানীদের। স্বাভাবিক ভাবে প্রথম থেকেই প্রতিযোগিতায় পিছু হটতে থাকেন তাঁরা। সেই প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই অধ্যাপক দে র নিরন্তর গবেষণা এই সম্মান এনেদিল ভারতের মাটিতে এবং তা এল আইআইটি খড়গপুরের হাত ধরেই। আগামী ৫-৯ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা মহানগরে সোসাইটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশ্ব পরিবেশ এবং জলসম্পদ উন্নয়ন কংগ্রেস। সেখানেই স্বশরীরে হাজির থেকে এই পুরস্কার নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আইআইটি খড়গপুরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শুভাশিস দে কে।
মঙ্গলবার আইআইটি খড়গপুরে একটি সংবাদিক সম্মেলনে অধ্যাপক দে জানিয়েছেন। নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদীর ভাঙন, বন্যায় সেতু ভেসে যাওয়া একটি চিরন্তন সমস্যা। এর রহস্য শুধু নদীতে নয়, নদী যেখান দিয়ে বয়ে যায় তার ভূ বৈচিত্র্যেরও অঙ্গ। কোথাও নদী নিজে ভাঙে আবার কোথাও নদীর পাড় ভাঙে বর্ষার সময় নদীতে এসে পড়া উচ্চ অববাহিকার বয়ে আনা জল। এই বিভিন্ন রহস্যকে উদঘাটন করেই কীভাবে পরিকাঠামো উন্নত করা যায়, সড়ক, সেতু গড়া যায় এই নিয়েই গত তিন দশক ধরে কাজ করে আসছি আমি। আমার ভালো লাগছে যে সেই গবেষনাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চার অন্যতম ঈর্ষণীয় প্রতিষ্ঠান আমেরিকার সোসাইটি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। উল্লেখ্য মানপত্র ও সুরম্য স্মারক ছাড়াও ভারতীয় মুদ্রায় নগদ ১লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয় এই সম্মান স্বরূপ।