Saturday, July 27, 2024

Ghatal Flood Claimed Child: ‘চান করব’ বায়না ধরে ঘাটাল শহরে জলে ভেসে গেল ক্ষুদে! ক্রমশ জলের তলায় চলে যাচ্ছে ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, শুরু তৃনমূল বিজেপি কাজিয়া

- Advertisement -spot_imgspot_img
শিশুকে উদ্ধার করে ডোঙায় করে ফিরছেন বাবা

নিজস্ব সংবাদদাতা: ভোর রাত থেকেই জল বাড়ছিল। উঁচু ঢিপির ওপর ঘর বানাতে অভ্যস্ত বানভাসি ঘাটাল। ২৫ থেকে ৩০ফুট অবধি উঁচু হয় সেই সব বাস্তুঢিপি। রাস্তা থেকে থাক থাক সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয় বাস্তু ভিটাতে। সেই ঢিপির প্রায় অর্ধেক সমান জল উঠেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ড গম্ভীরনগর এলাকায়। সাত সকালে সেই জল দেখে চান করার বায়না ধরেছিল ৬বছরের ক্ষুদে। বাড়ির লোক রাজি হয়নি। তাঁরা তখন ব্যস্ত আরও জল উঠলে কী করে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তারই ব্যবস্থা করতে।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে
বাবার কোলে শেষবার! হাসপাতালের পথে

এরই মধ্যে সেই ক্ষুদে নিজেই সিঁড়ি ভেঙে জলে নেমেছিল নাকি উঁচু ভিটে থেকে কৌতূহলী চোখে ঝুঁকে জল দেখতে গিয়ে গড়িয়ে পড়েছিল কে জানে। শিশুর যখন খোঁজ মিলল তখন সে শিশু বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দুরে গাছের ডালে আটকে ভাসছে।

মর্মান্তিক এই ঘটনায় ভয়ঙ্কর বন্যার মধ্যেও শোকস্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা গম্ভীর নগর। এলাকা জুড়ে মাত্র ২মাসে চার বার বন্যায় ডুবতে যাওয়া মানুষের মনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে উদ্ধার হওয়া মৃত শিশুটির নাম সৌম্যদ্বীপ চানক। ৬ বছরের শিশুটি লকডাউনের মধ্যেই স্থানীয় একটি স্কুলে ক্লাশ ওয়ানে ভর্তি হয়েছিল। সৌম্যদ্বীপের বাবা শ্রীহরি চানক জানিয়েছেন, ‘ ‘এমনিতেই গত ২মাস ধরে জলের তলায় রাস্তাঘাট। তারমধ্যেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই জল বাড়তে শুরু করেছিল। ভোর বেলায় সেই জল উঠে আসে বাস্তুর খুব কাছাকাছি। সকালে সেই জল থেকে চান করব, চান করব বলে চেঁচাচ্ছিল ছেলেটা। আমরা গ্রাহ্য করিনি অতটা। তখন আমাদের মাথায় একটাই চিন্তা জল আরও উঠে আসলে কী করব? এরকম জল গত কয়েক বছর দেখিনি। জলের তলায় চলে গেছে আমাদের উঁচু বাস্তুর প্রায় ১৫ফুট।’

শ্রীহরি বলেন,’ এরপর জল বাড়লে আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই। একা আমরা তো নই সঙ্গে জিনিসপত্র, গরু ছাগল ইত্যাদি। সেগুলিরই একটি নিরাপদ ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত ছিলাম সবাই। ওর খেয়াল হয়নি। সকাল ১০টা খোঁজ পড়তেই দেখি ও নেই। এঘর ওঘর খোঁজার পরও ওকে না মেলায় চিন্তিত হয়ে নীচে নামি। বাস্তুর আশেপাশেও খোঁজ মিলছিলনা। এরপরই খবর পাই বেশ কিছুটা দুরে আটকে আছে একটি শিশুর দেহ। সাঁতরে পৌঁছাই কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। ও সকাল থেকেই চান করব বলে বায়না ধরেছিল কিন্তু ও নিজেই জলে নেমে যাবে ভাবতে পারিনি।’

ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। জল বাড়ার ইঙ্গিত মিলেছিল দুপুর থেকেই। সন্ধ্যার মুখেই ঝুমি, শিলাবতী উপচে অথবা জল ঢুকছিল। রাতের মধ্যে জলের মধ্যে যে অনেক এলাকাই বন্দি হয়ে যাবে এটা জানাই যাচ্ছিল। তারপরও কেন ওইসব এলাকা থেকে লোকজনদের বিশেষ করে মহিলা, অসুস্থ ও শিশুদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করলনা তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনায় বিপদের মাঝেই শোকে আকুল পরিবার। কীভাবে জলমগ্ন বাড়ি থেকে নিরাপদে বের হবেন, সেই চিন্তা এখন উধাও তাঁদের। ৬ বছরের ছেলের আচমকা মৃত্যুর ধাক্কাই সামলে উঠতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।

টানা বৃষ্টি, ডিভিসি (DVC) থেকে ছাড়া জল, মুকুটমণিপুরের জলাধার থেকে উপচে আসা কংসাবতীর জল – ত্রিফলার ধাক্কায় এই মুহূর্তে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, চন্দ্রকোণা-সহ একাধিক মহকুমায় পুরোপুরি বন্যা পরিস্থিতি। ঘাটাল ব্লকের অধিকাংশ কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বহু পাকা বাড়ির একতলায় জমেছে জল। সময় যত যাচ্ছে, ততই জলের বিপদ বাড়ছে, অবনতি হচ্ছে পরিস্থিতির। জলের তলায় ডুবে যাওয়া বাড়িগুলি থেকে কীভাবে নিরাপদ জায়গায় সরবেন, সেটাই এখন মূল ভাবনা হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষজনের। এই জল নিয়ে শুরু হয়েছে রাজ্যসরকার আর বিজেপির কাজিয়া। রাজ্যের দাবি ডিভিসি হঠাৎ করে জল ছেড়েছে। অন্যদিকে বিজেপি জানিয়েছে ডিভিসি নির্দিষ্ট সময়ে রাজ্যকে সতর্ক করেই জল ছেড়েছে এবং সেই নির্দেশিকা তাঁদের কাছে রয়েছে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

- Advertisement -
Latest news
Related news