নিজস্ব সংবাদদাতা: পুলিশ যখন নিজেই ডাকাতি করে তখন কার ওপর ভরসা করবে মানুষ? পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার সাগরপুরের স্বর্ণব্যবসায়ী সমীরণ মান্না ভাবতেই পারেননি ওরা ডাকাতি করবে। ভেবেছিলেন পুলিশের পোশাকে বোধহয় ডাকাত! পুলিশ যে পুলিশের পোশাক পরেই ডাকাতি করবে সেটা কল্পনাই করতে পারেননি সমীরণ। ঘটনা মঙ্গলবারের। সমীরণ ভালো সোনা ও রুপার গহনা বানান। নিজের ব্যবসার পাশাপাশি কলকাতা সহ বিভিন্ন জায়গার স্বর্ণব্যবসায়ীদের অর্ডার মত গহনা বানিয়ে দেন তিনি। সেই অর্ডার মতই কিছু গহনা নিয়ে কলকাতায় গিয়েছিলেন মালিককে গহনা সরবরাহ করতে।
পুলিশকে দেওয়া সমীরণ মান্নার বয়ান অনুযায়ী বিকাল তিনটে নাগাদ তিনি হাওড়া স্টেশনের কাছে বাস থেকে নামেন। সমীরণের কথা অনুযায়ী, যেহেতু দিনের প্রথমার্ধে দোকানগুলিতে সোনা কেনাবেচার ভিড় থাকে তাই খুব জরুরি প্রয়োজন না থাকলে এই ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে দিনের দ্বিতীয়ার্ধই পছন্দ করেন ব্যবসায়ীরা। সমীরণ জানান, ট্রেনের ভিড় বিশেষ করে হাওড়া স্টেশনের ভিড় এড়ানোর জন্যই বাস ব্যবহার করেন তিনি তাছাড়া ঘাটাল-কলকাতা এত ভালো বাস যোগাযোগ ও বাড়ির কাছ থেকেই বাস পাওয়া যায় বলে তিনি বাস ব্যবহারই পছন্দ করেন। মঙ্গলবারও বাসেই গিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার বিকেল তিনটা নাগাদ বাস থেকে নামার পরই ওই দুই কনস্টেবল এবং আরও দুই ব্যক্তি নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে চড়াও হন ৫৫ বছর বয়সী সমীরণের ওপর । সেখান থেকেই একটি সাদা গাড়িতে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় চার জন। নিউ টাউনে বিশ্ব বাংলা গেটের কাছে নামিয়ে তাঁর কাছে থাকা রুপোর সমস্ত গয়না কেড়ে নেয় তারা। সমীরণ এই ঘটনার কথা বড়বাজার থানায় জানিয়ে ওই চার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। অভিযোগ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্তদের খুঁজে বের করল বড়বাজার থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে চুরির ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়িটিকে খুঁজে বের করা হয়। গাড়ির চালক ৩৫ বছরের যুবক সঞ্জয় কুমার শাহকে গ্রেফতার করে। তারপর সঞ্জয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেই একে একে ছিনতাইকারী দলের বাকিদেরও খোঁজ পায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার উত্তর নারায়নপুরের বাসিন্দা ফিরোজ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে ৪.৬ কেজি ওজনের রুপোর গয়না উদ্ধার করা হয়। তার পর ফিরোজের দেওয়া সূত্র থেকে জয়নগরের আব্দুসালেম শেখ এবং হাওড়া সিটি পুলিশের দুই কনস্টেবল সুরজিৎ সরকার এবং সমীরণ পাত্রকেও গ্রেফতার করা হয়।
জানা যাচ্ছে এই প্রথম ঘটনা নয়, গত মে মাসেই ঝাড়খণ্ডের এক ব্যবসায়ীর রুপো ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল বিধাননগর পুলিশের এক কনস্টেবলকে (Snatchers)। ধৃতের নাম সোমনাথ দাস। অভিযোগ, পুলিশ পরিচয় দিয়েই ঝাড়খণ্ডের ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০ কেজি রুপো কেড়ে নেয় সোমনাথ। তার সঙ্গী ছিল আরও ২ জন। ঘটনাটি ঘটেছিল বিধাননগর রেল স্টেশনে। ব্যবসায়ীর অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে শিয়ালদহ জিআরপি। স্টেশন চত্বরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়। অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল বাগুইআটি এলাকার বাসিন্দা।
জিআরপি সূত্রে খবর, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ঝাড়খণ্ডের ওই ব্যবসায়ী কলকাতায় এসেছিলেন রুপো কিনতে। বড়বাজার থেকে ২০ কিলো রুপো কিনে তিনি শিয়ালদহ স্টেশনে যান। সেখানে টিকিট না-পেয়ে বিধাননগর স্টেশন গেলে ওই পুলিশ কনস্টেবলের খপ্পরে পড়েন। সোমনাথ দাস-সহ মোট তিন জন নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে ট্যাক্সিতে তোলে। তাকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে দমদমে নামিয়ে দিয়ে রুপো নিয়ে চম্পট দেয় অভিযুক্ত। এর আগে মালদা থানা এলাকাতেও এক স্বর্ণব্যবসায়ীর দেড় কেজি সোনা ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এক এস.আই এবং সিভিক ভলান্টিয়ার।