নিজস্ব সংবাদদাতা: শনিবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির জেরে খুবই খারাপ অবস্থা হয়ে পড়েছে খড়গপুর মেদিনীপুর সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে। খড়গপুর এবং মেদিনীপুর শহরে শনিবার বিকালের পর রাতেও দু’দফায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এরপর রবিবার সকাল থেকে আবার দফায় দফায় বৃষ্টি। সঙ্গে মেঘের গুরুগুরু ডাক ও হাওয়ার দাপট।
সকাল ১০টা নাগাদ দুই শহরে ভারি বৃষ্টির পর ফের বৃষ্টি হয়েছে দুপুর ২টা নাগাদ। এরপর বিকাল ৪টা নাগাদ ফের আকাশ কালো হয়ে যায় জলভরা মেঘের দাপটে। তার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। এই মুহূর্তে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়েই চলেছে।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে যে নিম্নচাপ অষ্টমীর দিন থেকে বাংলা ভাসানোর কথা ছিল সেই নিম্নচাপই কিছুটা
দেরিতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে সেই নিম্নচাপের ভ্রূকুটির কারণেই শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে চ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বভাস অনুযায়ী,
আজ ১৭ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর মঙ্গলবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি চলবে। কোনও কোনও জেলায় বুধবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। রবিবার মূলত রাজ্যের উপকূলবর্তী দুই জেলা পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হবে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরেও।
ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী দুই জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সোমবার থেকে কলকাতা সহ সংলগ্ন দুই ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়া এবং দুই মেদিনীপুরে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এমনকী বৃষ্টির সঙ্গে ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। আগামিকাল থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস সত্যি করে রবিবার সকাল থেকে সমুদ্রনগরী দিঘায় প্রবল বৃষ্টি শুরু। বৃষ্টির সঙ্গেই ঝোড়ো হাওয়ায় হালকা শীতের মেজাজ। উত্তাল সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে পর্যটকদের। কার্যত হোটেলবন্দি দশা দিঘা বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের। সমুদ্র স্নান বন্ধের ঘোষণা প্রশাসনের। সৈকতে নজরদারি পুলিশের।
এদিকে খুবই খারাপ অবস্থা হয়ে পড়েছে খড়গপুর শহরের উত্তরপ্রান্তে আনন্দনগরের বাসিন্দাদের। এমনিতেই নিচু জায়গা আর বন্ধ হয়ে যাওয়া নয়ানজুলির দাপটে আনন্দনগরের অবস্থা খারাপই ছিল। মাসের পর মাস জল নামছিলনা তারই সঙ্গে মহকুমা প্রশাসনের একটি সাম্প্রতিক উদ্যোগ তাঁদের সর্বনাশ করছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আনন্দনগরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পার্শ্ববর্তী মহকুমা শাসকের বাংলো ও প্রশাসনিক আবাসনের সমস্ত জল বের করার জন্য একটি পাকা নর্দমা ওই এলাকা থেকে এনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে আনন্দনগরে। ইন্দা এলাকার সমস্ত জল এখন ওই নর্দমা বাহিত হয়ে আনন্দনগরকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। বাসিন্দারা বলছে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও এলাকার সেই সব ঘরবাড়িতেও জল ঢুকছে যে সব ঘরবাড়িতে এর আগে কখনও জল ঢুকতনা। আগামী ২দিন বৃষ্টি হলে ফের তাঁদের এলাকা ভাসার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে আবহাওয়া দপ্তর আরও বলেছে নিম্নচাপের সঙ্গে পুবালি হাওয়ার দাপটে কলকাতা সহ সংলগ্ন এলাকায় ঝড় বৃষ্টির দাপট। উপকূলের জেলায় দুর্যোগের আশঙ্কা বেশি। মৎস্যজীবীদের মঙ্গলবার পর্যন্ত সমুদ্রে যেতে মানা। শক্তিশালী এই দক্ষিণ-পূর্ব হাওয়ার দাপটে রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে এবং সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির সর্তকতা। কোন জেলায় কেমন সর্তকতা জেনে নিন।
বৃষ্টির সর্তকতা: রবিবার
ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি অর্থাৎ ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির আশঙ্কা দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে।
ভারী বৃষ্টি অর্থাৎ ১০০ মিলি মিটার পর্যন্ত বৃষ্টির আশঙ্কা কলকাতা হাওড়া হুগলি উত্তর ২৪ পরগনা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে।দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা মাঝারি বৃষ্টির সর্তকতা।
সোমবার
ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি অর্থাৎ ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সর্তকতা কলকাতা হাওড়া হুগলি উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর।
ভারী বৃষ্টির অর্থাৎ ১০০ মিলি মিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সতর্কতা দক্ষিণবঙ্গের বাকি সব জেলাতেই। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং কালিম্পং এবং আলিপুরদুয়ারে ভারী বৃষ্টির সর্তকতা।
মঙ্গলবার
ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি সর্তকতা অর্থাৎ ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে দার্জিলিং জলপাইগুড়ি কালিম্পং এবং আলিপুরদুয়ার জেলায়।
ভারী বৃষ্টি অর্থাৎ ১০০ মিলি মিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সর্তকতা কলকাতা হাওড়া উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর।
দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা মাঝারি বৃষ্টির সর্তকতা।
উত্তরবঙ্গের কোচবিহার মালদা উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টি অর্থাৎ ১০০ মিলি মিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সর্তকতা।