শশাঙ্ক প্রধান : এক ৯ বছরের বালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যু রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে পুলিশকে। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া ওই বালিকার দেহ উদ্ধার হয়েছে ঝুলন্ত অবস্থায় বাড়িরই রান্না ঘর থেকে। বাঁশের যে কাঠামোর ওপর আ্যসবেস্টার চাল হয়ে থাকে সেই কাঠামো থেকে সাদা ওড়নায় ঝুলছিল বালিকা। পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল বালিকার পরিবার মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির জেরে সামান্য বকাঝকা করা হয়েছিল বলিকাকে। কিন্তু তার জেরেই আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু রহস্য রয়েছে তা খোঁজার জন্য রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক বা OC সহ পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানা এলাকার সারতা গ্রামপঞ্চায়েতের বীরকোটা গ্রামের ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার বিকাল সাড়ে চারটা নাগাদ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত বালিকার নাম মাম্পি খাটুয়া। স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুল থেকে এবছরই চতুর্থশ্রেণী পাশ করেছিল মাম্পি। কয়েকদিনের মধ্যেই ফাইভে ভর্তি হওয়ার কথা। মাম্পির বাবা পূর্ণচন্দ্র খাটুয়া ছোটখাটো ব্যবসা করেন গ্রামে। রড-সিমেন্টের দোকান আছে। পাশাপাশি কিছু জমি জায়গা রয়েছে। পূর্ণচন্দ্রর স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া গৃহবধূ। ওঁদের ৩ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে।
জানা গেছে পূর্ণচন্দ্র দুপুরে নিজের জমির খড় গোছাচ্ছিলেন। বাড়ি থেকে সামান্য দূরত্বেই জমি। আঁটি বাঁধার পর তা মাথায় তুলে দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে ফোন করে ডেকেছিলেন। বিষ্ণুপ্রিয়া মাম্পিকে ভাইয়ের ওপর নজর রাখার রাখার কথা বলে মাঠে চলে যান। বিকাল ৪.৪৫ নাগাদ প্রথম বোঝা নিয়ে বাড়ি ফেরেন পূর্ণচন্দ্র। বোঝা নামিয়ে মেয়েকে ডাকেন। কয়েকবার ডাকার পরও সাড়া না পেয়ে ঘরের মধ্যে খোঁজাখুঁজি করেন। এরপরই রান্নাঘরে মেয়েকে ঝুলতে দেখেন। তড়িঘড়ি নিজেই নামান মেয়েকে।
পূর্ণচন্দ্র এরপর চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন। পরে সবাই মিলে স্থানীয় গ্রামীন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানেই মৃত বলে ঘোষণা করেন ওই চিকিৎসক। তারপরও তাঁরা দেহ নিয়ে দশগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপরই পুলিশ দেহটি সংগ্ৰহ করেছে ময়নাতদন্তের জন্য। প্রথমে ঘটনাটি মোবাইল আসক্তি বলে মনে করা হলেও এখন সেই তত্ত্ব ঠিক নাও হতে পারে মনে হচ্ছে পুলিশের। রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন সবং থানার ওসি সুব্রত বিশ্বাস, ডেবরার সার্কেল ইন্সপেক্টর কৃষ্ণেন্দু হোতা এবং ডেবরা পুলিশ মহকুমা আধিকারিক বা SDPO গোবিন্দ সিকদার।
একটি ৯ বছরের মেয়ে কী ভাবে গলায় ফাঁসি দিল? নিজেই দিল নাকি কেউ ঝুলিয়ে দিয়েছে? মোবাইল নিয়ে বকাবকিতে আত্মহত্যা নাকি, খেলার ছলে দুর্ঘটনা? আত্মহত্যা নাকি খুন? এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। মেয়েটির মা বলেছেন, তেমন বকাবকির কোনও ঘটনা ঘটেনি যার জন্য মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে। বীরকাটা গ্রামের অদূরে গ্রামেরই মাঠে মনসাপূজা উপলক্ষ্যে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও চলছিল এদিন। সেই উপলক্ষ্যে বহুলোকের সমাগম হয়েছিল এদিন। পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখছেন ঘটনাস্থলে গিয়ে।