নিজস্ব সংবাদদাতা: সামনে পুরসভার নির্বাচন! তাই এখন জঙ্গি সাজতে চাইছেন তৃনমূল নেতারা? কারখানায় কোনও আন্দোলন করা যাবেনা মালিক কিংবা কর্তৃপক্ষ অন্যায় আচরন করলেও। চার্টার অফ ডিমান্ড শ্রমিক সংগঠনের বদলে পুলিশ করবে। কর্মচারীরা ঠিক মত বেতন না পেলে পুলিশের কাছে আবেদন করবে। কারখানার লোক নিয়োগ করবে জেলা শাসকের কমিটি। তো শ্রমিক সংগঠন কী করবে? কেন শ্রমিক যাবে ইউনিয়নের কাছে? যাচ্ছেও না। গত কয়েক মাসে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের তৃনমূল শ্রমিক নেতারা মাছি মারছেন। মানুষ যাচ্ছেন না তাঁদের কাছে। যাবেন কেন? সব দেখবেন কলকাতার নেতা ঋতব্রত বন্দোপাধ্যায়, এমনকি বিশ্বকর্মা পূজার ফিতা কাটতে তিনিই আসবেন কলকাতা থেকে। ফল হয়েছে কারখানার মালিক কিংবা কর্তৃপক্ষের পোয়াবারো। বাড়ছে শ্রমিক নিপীড়ন। তৃনমূলের পাশ থেকে আরও সরে যাচ্ছে হলদিয়ার জনতা। আর তাতেই ফোঁস করেছেন তৃনমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দোপাধ্যায়।
শুক্রবার দুপুরে সংগঠনের তমলুক সাংগঠনিক জেলার ডাকে কারখানা গেটের সামনে অনুষ্ঠিত। শ্রমিক সভাতে ওই শ্রমিক নেতা বলেন, দমন- পীড়ন চালিয়ে ন্যায্য শ্রমিক আন্দোলন দমনের চেষ্টা মেনে নেবে না তৃণমূল। হলদিয়ার এক্সাইড কারখানা কর্তৃপক্ষের তুঘলকি, অত্যাচারী মনোভাব ও ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন আইএনটিটিইসি সভাপতি। ঋতব্রত বলেন, ‘এখানকার যে কারখানার ভিতরের ভদ্রলোক তিনি নিজেকে দাসমালিক বলে মনে করেন। শ্রমিকরা হচ্ছে দাস,আর উনি হচ্ছেন দাস মালিক। সেই সঘোষিত দাস মালিক নাকি বলেছেন এই মিটিংয়ে এলে ৭ দিন বসিয়ে দেবেন শ্রমিকদের। আমি বলছি, ৭ দিনের মধ্যে কি হতে চলছে আপনিও টের পাবেন। যে ভাবে যে ভঙ্গিমায় আপনি এই দাসপ্রথা চালাচ্ছেন তার স্বরূপ হলদিয়ার শ্রমিকদের নিয়ে সংস্থার কলকাতার ম্যানেজমেন্টের কাছে তুলে ধরব।’
উল্লেখ্য, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের কারখানাশান্তি ফেরানোর শ্রমিক আন্দোলন কার্যত গুটিয়ে নিয়েছে তৃনমূল। শুধু তাই নয় শ্রমিক আন্দোলন করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে জানানোও হয়েছে। আর তাতেই শ্রমিকদের ওপর দমন পীড়ন বাড়ছে। সম্প্রতি নতুন বেতন চুক্তি-সহ শ্রমিক স্বার্থের দাবি জানানোয় হলদিয়া এক্সাইড কারখানার এক কর্তার রোষে পড়েছেন একদল শ্রমিক। অভিযোগ,তাঁদের মধ্যে সম্প্রতি ১৩ জনকে কর্মচ্যুতও করা হয়। পরে অবশ্য তৃণমূল শ্রমিক নেতৃত্বের মধ্যস্থতায় ওই শ্রমিকদের ফিরিয়েও নেওয়া হলেও অভিযোগ এই যে, নির্দিষ্ট কাজে পুনর্বহাল না করে মাটি কাটা, ঘাস ছাঁটানো হচ্ছে তাঁদের দিয়ে। এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তৃনমূলের সদ্য দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা তৃনমূলের রাজ্য সাধারন সম্পাদক কুনাল ঘোষ। তাঁকে বলতে শোনা গেছে, “যাঁদের ফেরানো হয়েছে, শুধু ফেরালে হবে না। যোগ্য কর্মীদের দিয়ে মাটি কাটাচ্ছেন, ঘাস কাটাচ্ছেন। ও সব চলবে না। পুরোনো স্ট্যাটাস ফেরত দিতে হবে।”
নেতাদের অবশ্য দাবি, সংস্থা ভাল, ম্যানেজমেন্ট ভাল। কিন্তু কিছু সামন্ততান্ত্রিক মনোভাবের লোকের জন্য কলকাতায় কোম্পনির বদনাম হচ্ছে। ম্যানেজমেন্টের বদনাম হচ্ছে। যদিও কারখানার একাংশ শ্রমিক এই ঘটনার জন্য সরাসরি তৃনমূল রাজ্য নেতৃত্বকেই দায়ী করেছেন। তৃনমূল শ্রমিক সংগঠনের এক কর্মী বলেন, ” এক্সাইড কোম্পানি হলদিয়ার সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নির্যাতনকারি প্রতিষ্ঠান। এরা শ্রমিকদের দিয়ে এমন নির্দয় ভাবে খাটায় যে শ্রমিকদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেও ভয় হয়। বছর খানেক আগে এই এক্সাইডের বিরুদ্ধেই কথা বলতে গিয়ে তৃনমূলের দলীয় নেতাদের পদ হারাতে হয়, জেলে যেতে হয়। সেদিন থেকেই শ্রমিক আন্দোলনের কফিনে পেরেক পুঁতে দেওয়া হয়েছে।”
বিজেপি-র শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের রাজ্য সহ-সভাপতি প্রদীপ বিজলি বলেন, ” রাজ্য সরকার কিংবা তৃনমূলের ওপর হলদিয়ার শ্রমিকদের কোনও ভরসা। এই কারখানার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় নিজেদের নেতাদেরই গ্রেপ্তার করিয়েছিল এরা। এখন সামনে পুরসভা নির্বাচন তাই হঠাৎ করে এখন ভোলবদলে কারখানা কর্তৃপক্ষকে চোখ রাঙিয়ে বিপ্লবী সাজলে হবে। মানুষ কী বোকা? গাছের শেকড় কেটে ওপরে জল দেওয়ার নাটক করছে ওরা।”