নিজস্ব সংবাদদাতা: মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ল্যান্ডফল (Landfall) হতে চলেছে ওড়িশার গোপালপুর থেকে মাত্র ১০০কিলোমিটার দুরে থাকা গুলাবের। তার আগেই দিঘা, মন্দারমনি, শঙ্করপুরের পর্যটকদের হোটেল ছাড়ার নোটিশ দিলেন পূর্ব মেদিনীপুর প্রশাসন। রবিবার সকাল থেকেই মাইকিং করে পর্যটকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সোমবার সকালের মধ্যেই হোটেল ছেড়ে দিতে হবে। হোটেল মালিকদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার ৪দিন কোনও পর্যটক রাখা যাবেনা। কোনও অগ্রিম বুকিং থাকলে তা বাতিল করে দিতে হবে। জলোচ্ছাস দেখার জন্য ওই চারদিন কোনও পর্যটক যাতে দিঘায় প্রবেশ না করেন তাও নজর রাখবে প্রশাসন। জানা গেছে ইয়াসের তান্ডবে জেলার উপকূল এলাকা অর্থাৎ দিঘা, মন্দারমনি, তাজপুর, শঙ্করপুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই এই সতর্কতা বলে জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি।
প্রশাসনের নির্দেশ শোনার পর রবিবার অনেক পর্যটক বুকিং বাতিল করে ফেরার বাসের টিকিট কেটেছেন।দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা হোটেলে থাকা পর্যটকদের প্রশাসনের নির্দেশের কথা জানিয়ে দিয়েছি। লম্বা করোনা নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সবে মাত্র মাথা তুলতে শুরু করেছিল পর্যটন ব্যবসা। গুলাবের ধাক্কায় পুজোর আগে ফের লোকসানের মুখে পড়তে হলো । এভাবে চললে হোটেল ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।’ মন খারাপ করেই পর্যটকরা ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যাদবপুরের ৪জনের একটি পরিবারের কর্তা সুমিত মুখার্জি জানিয়েছেন, ‘ দ্বিতীয় দফার লকডাউন কাটিয়ে ছেলেমেয়েদের ছুটির কথা মাথায় রেখে বুধবার অবধি থাকার প্ল্যান করেছিলাম। শনিবার বিকালে এসেছিলাম।মাত্র ১টা দিন কাটিয়ে এভাবে ফিরতে হবে ভাবিনি। বাচ্চাদেরও ভীষন মন খারাপ হয়ে গেছে।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ বা Indian Metroligical Department জানাচ্ছে, কিছুটা পশ্চিমে সরে গিয়ে ঘূর্ণিঝড় “গুলাব” উত্তর-পশ্চিম এবং সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তীব্র হয়ে ওঠে। সেটি ২৬ সেপ্টেম্বর আরও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বেলা সাড়ে ১১টার সময় উত্তর -পশ্চিমে এবং পশ্চিম -মধ্য বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। যা গোপালপুর (ওড়িশা) থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্ব এবং কলিঙ্গাপত্তনম (অন্ধ্র প্রদেশ) থেকে ১৯০কিমি পূর্ব-উত্তর-পূর্বে ছিল। বর্তমানে গোপালপুর থেকে ১০০কিলোমিটারেও কম দূরত্বে রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ল্যান্ডফল হতে চলেছে এবং মধ্যরাত অবধি সেই প্রক্রিয়া চলবে। এটি প্রায় পশ্চিমের দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ-দক্ষিণ ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করে কলিঙ্গাপত্তনম এবং গোপালপুরের মধ্য দিয়ে যেতে পারে, একটি ঘূর্ণিঝড় হিসাবে ৭৫-৮৫ কিমি প্রতি ঘণ্টায় সর্বাধিক স্থায়ী বাতাসের গতিবেগ ৯৫ কিলোমিটার, যা আজ ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া চলবে।
এরফলে খড়গপুর ও মেদিনীপুরে দুদিন ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। মূলতঃ মঙ্গলবার ও বুধবার এই বৃষ্টি চলবে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে। এমনিতেই খড়গপুর ও মেদিনীপুর শহর থেকে কয়েকদিন আগের দুর্যোগের রেশ কেটে যায়নি। বহু জায়গায় এখনও জল জমে রয়েছে। নতুন করে মঙ্গল ও বুধের বৃষ্টি আবারও কী করে তাই নিয়ে দুশ্চিন্তা। দুশ্চিন্তা সবং, পিংলা, ডেবরা, নারায়নগড়, দাঁতন ও ঘাটাল মহকুমা নিয়েও। এখনও ওই সব এলাকায় বন্যার জমে রয়েছে। কেশপুর, গড়বেতার নিচু অংশগুলিও জলে প্লাবিত হয়ে রয়েছে। ফলে নতুন করে বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনকে। জেলাজুড়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। দুর্গতদের আশ্রয় দিতে তৈরি রাখা হয়েছে সাইক্লোন সেন্টার এবং স্কুল বিল্ডিংগুলি। নবান্নের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ও রেইন কন্ট্রোল মেশিন।
পূর্ব মেদিনীপুরেও নজরদারি চালাতে জেলার ২৫ টি ব্লকে এবং সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে থাকছে থাকছে কন্ট্রোল রুম। রামনগর ১ ব্লকের বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, ঝড়বৃষ্টির কথা জানিয়ে মানুষকে সতর্ক করেছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র ও অখিল গিরি। সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেছেন, ‘প্রকৃতির কাছে আমরা অসহায়।নদী ভাঙনে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার কবলে । জমা জল এখনো নামেনি। মানুষজন বাঁধের ওপর কিংবা ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আবার অতি ভারি বৃষ্টি হলে কি হবে জানিনা। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে । বাঁধ মেরামত হয়ে গেলে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বলে মনে করছি।’
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে,
২৭ সেপ্টেম্বর সোমবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দুই মেদিনীপুর সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। ২৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার, এদিন দক্ষিণবঙ্গের মোট ১১টি জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। যার মধ্যে আছে – কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, হাওড়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া। একই সঙ্গে এদিন ঝোড়ো হাওয়াও বইতে থাকবে। এই জেলাগুলি হল- দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর। এই জেলাগুলিতে ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিমি যা ৫০ কিমি পর্যন্ত বাড়তে পারে। ২৯ সেপ্টেম্বর, বুধবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে।
মৎস্যজীবীদের ২৬ সেপ্টেম্বর পূর্ব-মধ্য ও সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীদের উত্তর -পশ্চিম এবং সংলগ্ন পশ্চিম -মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে