নিজস্ব সংবাদদাতা: কারখানার গেটে দাদাগিরি, লোক নিয়োগ, শ্রমিকদের পাওনা নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে দর কষাকষি? না, আর সেদিন রইলনা। এবার থেকে লোক নিয়োগ থেকে চার্টার অফ ডিমান্ড বা দাবিপত্র পেশ কোনও টাই করতে পারবেননা শ্রমিক নেতারা। খুব স্বাভাবিক ভাবেই কারখানার গেটে দাদাগিরি করার সুযোগও থাকছেনা তাঁদের। ২৭শে জুন রাজ্যের শ্রমদপ্তরের তরফে একটি নির্দেশিকায় (Memo: Labr/638/LC-Estt,)
স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ” শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলিতে বিভিন্ন ইউনিয়ন মারফৎ লোক নিয়োগ এবং দাবি দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একেক সময় একেকটি ট্রেড ইউনিয়ন নিজেদের মত করে মালিকপক্ষের সঙ্গে চার্টার অফ ডিমান্ড নিয়ে চুক্তি করছে যা সম্পর্কে সরকার সম্পুর্ন অন্ধকারে থাকছে। কোথায় কত লোক নিয়োগ হচ্ছে, কত শূন্যপদ থাকছে এসব নিয়ে সরকারের কাছে কোনও তথ্য থাকছেনা।”
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, “এই পরিস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট ধারায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগ ও দাবীপত্র কার্যকরী করতে, কারখানাগুলিতে কর্মীদের মধ্যে সুশৃঙ্খল ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে নির্দিষ্ট কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। অতঃপর এই কমিটিই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কর্মীদের হয়ে চার্টার অফ ডিমান্ড প্রস্তাব করবে।” মূলতঃ খড়গপুর হলদিয়া এবং কোলাঘাট এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলিতেই এই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। নির্দেশিকায় পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, রাজ্য সরকারের গড়ে দেওয়া এই কমিটিকে বাদ দিয়ে কোনও কারখানা বা বৃহত্তর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী বা অস্থায়ী কিংবা চুক্তি ভিত্তিক লোক নিয়োগ করা চলবেনা। দ্বিতীয়ত: মালিক ও কর্মচারীদের মধ্যেকার সুসম্পর্ক ও সম্প্রীতি বজায় রেখে শ্রমিক বা কর্মচারীদের দাবিদাওয়া পেশ ও কার্যকরী করতে এই কমিটি যথাযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করবে।
নির্দেশিকা অনুযায়ী খড়গপুর এবং হলদিয়া ও কোলাঘাটের জন্য দুটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। উভয় কমিটিতে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক সভাপতি এবং ডেপুটি লেবার কমিশনার সম্পাদক হিসাবে থাকছেন। এছাড়াও কমিটিতে থাকছেন অতিরিক্ত লেবার কমিশনার, সহকারি লেবার কমিশনার, ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টর, জয়েন্ট ডিরেক্টর এমপ্লয়মেন্ট ও অতিরিক্ত ডিরেক্টর এমপ্লয়মেন্ট। হলদিয়া ও কোলাঘাটের জন্য তৈরি কমিটিতে হলদিয়ার মহকুমা শাসক এবং হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানকে রাখা হয়েছে। কোনও ট্রেড ইউনিয়ন বা দলীয় নেতা এমনকি স্থানীয় বিধায়কদেরও রাখা হয়নি।
জানা গেছে এই সব শিল্পাঞ্চল গুলিতে লোক নিয়োগ ও দাবিদাওয়া নিয়ে তৃনমূল নেতাদের একাধিক গোষ্ঠীর দাপট কারখানাগুলির পরিবেশকে নষ্ট করছিল। লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ব্যাপক কাটমানি নেওয়া এবং দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে মালিকপক্ষের সঙ্গে রফা করার নামে টাকার লেনদেন চলছিল। অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের স্বার্থ বিঘ্নিত করে মালিক পক্ষের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে রফা করতেন নেতারা। পাশাপাশি কারখানায় ইচ্ছাকৃতভাবে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষগুলির কাছ থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগও ছিল। এই সমস্ত কারণেই ট্রেড ইউনিয়নগুলির যাবতীয় ক্ষমতা কেড়ে নিল নবান্ন। যেহেতু এই এলাকার সিংহ ভাগ ট্রেড ইউনিয়ন তৃনমূলের দখলে তাই আঘাতটা এল সেই সব নেতাদের ওপরই বেশি যে নেতারা শিল্প তালুকগুলিতে মৌরসি পাট্টা গেড়ে বসেছিলেন।