Saturday, July 27, 2024

illicit liquor : থানা থেকে আবগারি, সবাই সব জানে! বিষ মদে ১১ জনের মৃত্যুর পর ফুঁসছে হাওড়া, ২ মাসে মৃত্যু ৩০ ছাড়িয়ে গেল

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: মদের দাম কমানো, অঢেল লাইসেন্স প্রদান এমনকি সস্তায় বিলাতি মদের ব্র্যান্ড তৈরিতেও উৎসাহ দিয়ে চলেছে রাজ্য সরকার। মদের রাজস্ব খাত থেকে রাজ্যের আয় বাড়ছে হু হু করে। স্বাভাবিক ভাবেই মদ্যপায়ীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। সরকারের যুক্তি ছিল বৈধ মদ সস্তা হলে নাকি চোলাই মদের ব্যবহার কমবে কিন্তু কাজে হয়েছে উল্টোই। চলতি সরকারের উদ্যোগে পাড়ায় পাড়ায় বৈধ মদের দোকান বাড়লেও কমেনি চোলাইমদের ঠেক বরং মানুষের অভিজ্ঞতা চোলাইয়ের কারবারও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে আর সেই মদ খেয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কিছুদিন আগেই বর্ধমানে বিষমদ খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের। এবার হাওড়াতে বিষমদ খেয়ে মৃত্যু হল ১১জনের।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

যদিও হাওড়ার মালিপাঁচঘড়া থানা থেকে মাত্র ২০০মিটার দূরে গজানন বস্তি, যেখানে চোলাই মদের ঠেক চলে রমরমিয়ে। স্থানীয় মানুষদের দাবি পুলিশ সব জানে, সবই জানে আবগারি দপ্তরও। স্থানীয়রা দাবি করছেন, গত শনিবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বিষ মদে ২০ থেকে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও পুলিশ দাবি করছে, মৃতের সংখ্যা ১১। মৃত ব্যক্তিদের নাম অমিত ভর্মা, অনিল চৌরাসিয়া, প্রকাশ মিশ্র, লক্ষ্মণ সাউ, বিস্কুট রায়, সুকুমার চৌধুরি, প্রকাশ মিশ্র, ত্রিভূবন পন্ডিত, রণজিৎ গুপ্ত, রাজেশ্বর রাও সহ আরও কয়েকজন রয়েছেন। তবে মানুষের দাবি অনেক মৃতের ময়নাতদন্ত না করেই শেষকৃত্য হয়ে গিয়েছে। তাঁদের মৃত্যুর কথা পুলিশের হিসাবে আসছেনা।

বুধবার সকালে সর্বাধিক আট-ন’জনের মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছাতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে পাশে দাঁড়ান প্রতিবেশীরা। উত্তেজনা দেখা দেয় গজানন বস্তিতে। পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে ঘর ছেড়ে রাস্তায় চলে আসেন। ব্যাপক ভাঙচুর করা হয় বস্তির ভিতরে মদ তৈরির কারখানা ও লাগোয়া মদের দোকান। ঘটনার খবর পেয়েই বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র‍্যাফ নামানো হয়। পুলিশকে দেখে আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন বাসিন্দারা। তাঁরা – অভিযোগ করেন, মদ তৈরি করে বিক্রি করা হতো, পুলিশ সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মালিপাঁচঘড়া থানার পুলিশ নিয়মিত এখানে এসে মদের ঠেকের মালিক প্রতাপ কর্মকারের থেকে টাকা নিয়ে যেত। গজানন বস্তির ভিতরে থানার বড়বাবুর সামনেই বাসিন্দারা জানান, গত দু’মাস ধরে থানায় বারে বারে অভিযোগ করা হয়েছে যে এখানে মদ খেয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছেন। কিন্তু সমস্ত কিছু জানানো সত্ত্বেও পুলিশ মদের ঠেক বন্ধ না করে চলতে দিয়েছে। জবাব দিতে না পেরে কার্যত পিছু হটতে হয় ওসি অমিত মিত্রকে।

বুধবারও বস্তির ভিতরে একটি খাটালের পাশেই একটি ঘরে বড় বড় জারে চোলাই মদ ভর্তি লক্ষ্য করা গেছে। ঘরের ভিতরে পড়ে আছে রাজ্য সরকারের তৈরি মদের বোতল। পড়ে আছে বোতল বোতল স্পিরিট। থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেই ঘরটিকে তালা লাগিয়ে দেয়। বুধবার সকালেই মদের ঠেকের মালিক প্রতাপ কর্মকারকে আটক করে গোলাবাড়ি থানায় নিয়ে যায় মালিপাঁচঘড়া থানার পুলিশ। পরে জানা যায় গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। বস্তিবাসী মানুষের দাবি পুলিশ তাঁদের চাপেই বাধ্য হয়েছে প্রতাপ কর্মকারকে গ্রেপ্তার করতে।

মৃত রণজিৎ গুপ্তার স্ত্রী ছন্দা গুপ্তা অভিযোগ করেন, যদি পুলিশ একটু সচেষ্ট হতো তাহলে তাঁর স্বামীর হয়তো মৃত্যু হতো না। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফিরে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর স্বামী। স্থানীয় ডাক্তারকে ডাকার আগেই বাড়িতে মৃত্যু হয় তাঁর। স্থানীয় ডাক্তারের কাছ থেকে মৃত সার্টিফিকেট নিয়ে রাতেই দাহ করা হয় রণজিৎ গুপ্তাকে। কোনরকম ময়নাতদন্ত না করেই মৃতদেহ দাহ করা হয়েছে। এই ঘটনা গত শনিবার থেকে যাঁরা মারা গিয়েছেন কেবলমাত্র ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিয়েই দেহ দাহ করা হয়েছে। কোনও ময়নাতদন্ত করা হয়নি।

আরেক মৃত পার্থপ্রতিম দাসের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে জানান, সোমবার রাতে পার্থপ্রতিম দাস গজানন বস্তিতে একটি কারখানার কাজ শেষ করে মদের ঠেকে গিয়ে মদ্যপান করে বাড়ি ফেরেন। সোমবার গভীর রাতেই তাঁর বমি হতে থাকে, সাথে মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকলে পরিবারের লোকজন তাঁকে হাওড়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। কোন রকম ময়নাতদন্ত না করেই দাহ করা হয়েছে পার্থপ্রতিম দাসকে। মৃত লক্ষ্মণ সাউ-এর আত্মীয় শঙ্কর সাউ জানান, গত শনিবার ও রবিবার তাঁর পরিবারের দুইজন সদস্য এই বিষ মদ খেয়ে মারা গিয়েছেন। আর এদিন সকালে মারা গেলেন আরেক আত্মীয় লক্ষণ সাউ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। পরে অন্তত আরও ৪জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিষ মদ খেয়ে বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে হাওড়া ও কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে যান হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী। সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও কথা বলেননি কমিশনার পুলিশ আধিকারিকরা। ঘটনাস্থলে এসে মদের নমুনা নিয়ে যায় ফরেনসিক দলের প্রতিনিধিরা।

- Advertisement -
Latest news
Related news