নিজস্ব সংবাদদাতা: এক লোমহর্ষক গুলির লড়াইয়ের স্বাক্ষী থাকল দিল্লির একটি আদালত যেখানে দুষ্কৃতি আর পুলিশের গুলির লড়াইয়ে খতম হল ৩জন। আর খুন হওয়া ওই ৩ জনই দাগী দুষ্কৃতি বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার দুপুরে এই ভয়াবহ শ্যুটআউটের ঘটনা ঘটেছে সেই সময় যখন দিল্লির এক দাগী দুষ্কৃতি জিতেন্দ্র মান ওরফে গোগীকে পুলিশ আদালতে এনেছিল বিচারকের কাছে পেশ করার জন্য। জানা গেছে ওই সময় গোগীর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী ও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সুনীল ওরফে তিলু তাজপুরিয়া গোষ্ঠীর ২ সাকরেদ উকিলের বেশে হামলা চালায় রোহিনী আদালতে। ওই সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায় এবং নিহত হয় ২গ্যাংস্টার। ঘটনায় ৫ থেকে ৬টি গুলি লাগে গোগীর দেহে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয় তার।
উল্লেখ্য কিছুদিন আগেই গোগীর এক সহযোগী কুলদীপ ওরফে ফাজ্জা পুলিশের হেফাজত থেকে পালাতে সক্ষম হয় যখন পুলিশ তাকে কারকারদুম্মা আদালতে পেশ করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। সেই ঘটনার পর থেকেই গোগীকে আদালত নিয়ে যাওয়ার পথে তার সঙ্গে পুলিশের একটি সশস্ত্রবাহিনী থাকত প্রহরার জন্য। শুক্রবার গোগী এবং সুনীল মান এবং তিলু গোষ্ঠীর একজনকে পুলিশ আদালতে নিয়ে আসে একই খুনের মামলায় পেশ করার জন্য।
দিল্লী পুলিশে এক আধিকারিক জানিয়েছেন,” দিল্লির নর্দান রেঞ্জের একটি বিশেষ সশস্ত্রবাহিনী সুনীল মানকে নিয়ে রোহিনী আদালতে পৌঁছায় গোগীকে আদালতে আনার আধঘন্টা আগে। গোগীকে আনা হয় বেলা ১টা ১৫,নাগাদ। গোগীকে কোর্টরুমে হাজির করা হয়। তখনই দুই আততায়ী যাঁদের সনাক্ত করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বাগপত এলাকার রাহুল এবং বক্করওয়ালা গ্রামের মরিস উকিলের পোশাক পরে গোগীর ওপর একের পর এক গুলি করতে থাকে। ৫টা থেকে ৬টা গুলি ঢুকে যায় তার শরীরে।”
এই সময় গোগীর পাহারায় থাকা বিশেষ সশস্ত্রবাহিনীটি কোর্ট রুমের মধ্যেই পজিশন নিয়ে পাল্টা জবাব দেয়। এক আধিকারিকের ভাষায়, ‘ সুনীল এবং গোগীর জন্য বরাদ্দ দুটি স্পেশাল টিমই জবাব দেয় একই সাথে। নর্দান রেঞ্জের হেড কনস্টেবল কুলদীপ ৪ রাউন্ড গুলি চালায়,
আরেক হেড কনস্টেবল সন্দীপও ৪রাউন্ড গুলি চালায়। কনস্টেবল রোহিত চালিয়েছে ২ রাউন্ড গুলি। থার্ড ব্যাটালিয়নের এক জওয়ান সরাসরি একে-৪৭ থেকে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে।
মুহুর্তের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ শুরু হয়ে যায় কোর্টরুমের মধ্যেই। আইনজীবী, মুহুরী, প্রমুখদের মাটিতে শুয়ে পড়ার পরামর্শ দেওয়া হয় এনকাউন্টারের সময়। কোর্টরুমের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ছুটোছুটি, চিৎকার, চেঁচামেচি, ভয়ার্ত আর্তনাদ শোনা যায়। দুই আততায়ীই পাল্টা গুলিতে লুটিয়ে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাদের। গোগীকে একটি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে গোগী এবং সুনীল ওরফে তিলু দিল্লির আলিপুর ও সোনিপত এলাকায় তোলার রাজত্ব চালাতো একই সাথে। আর এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে ধারাবাহিক রক্তাক্ত সংঘর্ষ চলে আসছিল যার পরিণতিতে দুই গোষ্ঠীর ১০জন নিহত হয়েছে গত ৬বছরে। পুলিশ জানিয়েছে ২জনের এই শত্রুতা শুরু হয়েছিল এই দুজনের কলেজ থেকেই যখন তারা দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। ছাত্র রাজনীতি থেকেই শুরু হয় পারস্পরিক বৈরিতা। ঘটনা চূড়ান্ত আকার ধারন করে ২০১২সালে যখন সুনীল ঘনিষ্ঠ বিকাশ নিহত হয়। বিকাশের খুনের পেছনে গোগী ও তার দলবলের হাত রয়েছে বলেই অভিযোগ ওঠে। ২০১৫ সালে সুনীল বা তিলু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এবং জেলে যায়। বর্তমানে সোনিপতের একটি জেলে রয়েছে সে।
কিছুদিন পরে গোগী সোনিপতেই তিলুকে খুন করতে গেলে হরিয়ানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তাকে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে গোগীকে হরিয়ানা আদালতে পেশ করতে যাওয়ার সময় পুলিশের হেফাজত থেকে পালায় সে এবং সুনীলের কয়েকজন সঙ্গীকে হত্যা করে। এরপর গতবছর গুরগাঁও থেকে গ্রেপ্তার হয় একাধিক খুন, ডাকাতি সহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত বছর তিরিশের গোগী।