শশাঙ্ক প্রধান: বন্যায় ভেসে গিয়েছে শ্বশুরবাড়ির গ্রাম। সেখানে রয়েছে স্ত্রী আর মেয়ে। খড়গপুর থেকে তাঁদেরই খোঁজ নিতে খড়গপুর থেকে ছুটে গিয়েছিলেন জামাই। কিন্তু তারপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি তাঁর। ৩৬ ঘন্টা পর শুক্রবার ভোরে মাঠের জমা জলে মাছ ধরতে গিয়ে ছিলেন কিছু ব্যক্তি। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ তাঁরাই দেখতে পান জালে জড়িয়ে আছে এক ব্যক্তির মৃতদেহ। পরে দেখা যায় সেই মৃতদেহটি পাড়ারই জামাইয়ের। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ডেবরা থানার অন্তর্গত কিসমৎ ডেবরা এলাকায়, ডেবরা বাজার থেকে ২কিলোমিটার দুরে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত ব্যক্তির নাম তারাচাঁদ বারিক। বুধবার রাত ৮টা নাগাদ তাঁকে ডেবরা বাজারে শেষবারের মত দেখা গিয়েছিল।
স্থানীয় সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে তারাচাঁদের বাড়ি খড়গপুর টাউন থানার গিরিময়দান লাগোয়া খরিদা এলাকায়। সেখানেই একটি চুল কাটার দোকান রয়েছে তারাচাঁদের পরিবারের। তারাচাঁদ সেই চুল কাটার কাজ করত। বছর ২০আগে ডেবরা থানা এলাকার কিসমৎ ডেবরার বাসিন্দা লক্ষীকান্ত মান্নার মেয়ে ত্রিবেনীর সাথে বিয়ে হয় তারাচাঁদের। তাঁদের একটি ১৭বছরের মেয়ে রয়েছে। লক্ষীকান্তের পুত্র সন্তান না থাকায় মেয়েকে নিজের কাছেই রেখেছেন। তারাচাঁদ ও ত্রিবেনীর মেয়েও মামা বাড়িতেই থাকত। স্থানীয় স্কুলে ইলেভেনে পড়ে সে। তারাচাঁদও মাঝে মধ্যে শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রী ও মেয়ের কাছে এসে থাকত।
রবিবার রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয় ডেবরা এলাকায়। মঙ্গলবারের প্রবল বৃষ্টির পর মাঠ ঘাট ভেসে যায়। বুধবার সকালেও প্রবল বৃষ্টি হয়েছে বিকাল অবধি। তারপর বৃষ্টি কিছুটা ধরলে তারাচাঁদ বেরিয়ে পড়ে স্ত্রী ও মেয়ের কাছে। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ডেবরা বাজারে এসে পৌঁছায় সে। বাজার থেকে শ্বশুরবাড়ির জন্য কিছু কেনাকাটা করেন বলেও জানা গেছে। যেহেতু এলাকায় তাঁর বছর কুড়ির যাতায়াত তাই মানুষজন, দোকানদাররা তাকে চিনতেন। এরপর হেঁটেই কিসমৎ ডেবরার দিকে রওনা হন। তারপর খোঁজ মেলেনি তাঁর।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে তারাচাঁদের মোবাইলের সুইচ বন্ধ ছিল। তাঁর খরিদার বাড়ির লোকেরা তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের কাছে খবর নিয়ে জানতে পারে তারাচাঁদ সেখানে যায়নি। এদিকে স্ত্রী আর মেয়ে খরিদার বাড়িতে ফোন করে জানতে পারে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে বলে। ডেবরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তারাচাঁদ বাজার অবধি এসেছিলেন। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়।
শুক্রবার ভোরে মাঠঘাটে জলের বেগ কিছুটা কমলে। মানুষ জন জাল নিয়ে মাঠে বেরিয়েছিলেন মাছ ধরতে। তখনই দেখা যায় জাতীয় সড়ক থেকে কিসমৎ ডেবরা যাওয়ার রাস্তা থেকে ৫০মিটার দুরে একটি পুকুর লাগোয়া সবজি ক্ষেতের জালে জড়িয়ে রয়েছে একটি দেহ। পাড়ার জামাইয়ের মৃতদেহ চিনতে দেরি হয়নি লোকজনের। খবর যায় তারাচাঁদের শ্বশুরবাড়িতে। স্ত্রী আর মেয়ে ছুটে আসেন, সনাক্ত হয় দেহ। জালে জড়ানো মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায় পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জাতীয় সড়কের পাশেই অবস্থিত ‘পথের সাথী’ বিশ্রামগারের ঠিক পাশ দিয়েই নেমে গেছে কিসমৎ ডেবরা যাওয়ার একটি রাস্তা। ওই রাস্তা গিয়েছে একটি খালের ওপর দিয়ে। খালের ওই অংশে একটি কালভার্ট রয়েছে। প্রবল জলের চাপের কারনে কালভার্ট পেরুলেই একটি গভীর খানার সৃষ্টি হয় যেখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল তীব্র স্রোত। রাতের অন্ধকারে সেই জায়গাটা সম্ভবতঃ নজরে পড়েনি তারাচাঁদের। কালভার্ট পেরিয়েই সে ওই খানায় পড়ে যেতেই ভেসে যায়। শরীর ভারী থাকায় উঠে আসতে পারেনি সে।