নিজস্ব সংবাদদাতা: বুধবার দিনভর আগুন জ্বলল ত্রিপুরায়, বলা ভালো জ্বলল একের পর এক সিপিএম পার্টি অফিস এমনকি সিপিএম কর্মী সমর্থকদের বাড়ি, পুড়ল একের পর এক গাড়িও। একের পর এক সিপিএমের পার্টি অফিসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। দলীয় নেতা কর্মীদের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। দাউ দাউ করে জ্বলছে পার্টি অফিস। পুড়ছে একের পর এক গাড়ি। এই ছবি দেখছে গোটা দেশ। আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে নিচ্ছে পার্টি অফিসের একের পর এক ঘর। এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব সিপিএম নেতৃত্ব।
এদিকে বিজেপির পালটা দাবি জনরোষে এসব হয়েছে। সিপিএমের পার্টি অফিস থেকে বোমা ছোঁড়া হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এমনকী এটা তো সবে ট্রেলার চলছে এমনটাও দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, প্রয়োজনে এর চেয়েও অনেক দূরে যেতে পারে তারা। এদিন দমকলকেও আগুন নেভাতে যেতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অন্যদিকে এদিন তৃণমূল নেতৃত্ব গিয়ে ত্রিপুরায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা মানিক সরকারের সঙ্গে দেখা করেন। ত্রিপুরার মাটিতে দাঁড়িয়েই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
২দিন আগেই সোমবার, নিজের কেন্দ্র ধনপুরে যাওয়ার পথেই ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের কনভয়েও হামলার ঘটনা ঘটে। মানিক সরকার গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালে পরিস্থিতি বদলে যায়। সাহস পেয়ে প্রতিরোধে নামে সিপিএম কর্মীরা। পাল্টা সেই সময় লাল ঝাণ্ডা নিয়ে রাস্তায় নামেন বাম কর্মীরা। দুনিয়ার মজদুর এক হও স্লোগান তুলে পালটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন সিপিএমের নেতা কর্মীরা। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের রীতিমতো ধস্তাধস্তিও শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা মানিক সরকার কর্মীদের বুঝিয়ে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করেন। গোটা ঘটনা ভাইরাল হয়ে পড়ার পরই দেশ জুড়ে তীব্র নিন্দা ছড়িয়ে পড়ে। সিপিএমের অভিযোগ সেই ঘটনার প্রতিহিংসাতেই বিজেপি বুধবার একের পর এক হামলা চালিয়েছে।
বুধবার উদয়পুরে সিপিএম-বিজেপি সংঘর্ষের খবর মিলেছে। উদয়পুরে একাধিক বাড়ি-দোকানে হামলা চলেছে বলেও অভিযোগ। সিপিএমের দফতর থেকে বোমাবাজির অভিযোগ করেছে বিজেপিও । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয় পুলিশকে। অন্যদিকে ত্রিপুরার বিশালগড়ে সিপিএমের পার্টি অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। হামলা চালানো হয়েছে সিপিআইএমের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্যের বাড়িতেও। ঘটনার খবর পেয়ে এসডিপিও-র নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী। দমকল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এক্ষেত্রে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। যদিও সিপিএমের দাবি এরা সবাই বিজেপি আশ্রিত গুণ্ডাদেরই কাজ।
যদিও এই ঘটনার পর সিপিএমের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল। বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল নেতারা। দুই তৃণমূল নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও সুস্মিতা দেব যান একটি সংবাদমাধ্যমের অফিসে। সেখানেও হামলা চলে বলে অভিযোগ। সিপিএম পার্টি অফিসে গিয়েই বামেদের পাশে দাঁড়ান জয়া দত্ত, আশিষ লাল সিংয়ের মতো তৃণমূল নেতারা। মুকুল রায়ের একাধিক তৃণমূল নেতা ট্যুইটারে গর্জে উঠেছেন। এমনকী এমন ঘটনার পরও জাতীয় নির্বাচন কমিশন কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেতারা। মাস খানেক আগেই ত্রিপুরায় তৃণমূল নেতৃত্বের কনভয়ের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা করেছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও।