Saturday, July 27, 2024

Smartphone Adiction: করোনা কেড়েছে স্কুল আর শৈশব, মোবাইল কাড়েছে জীবন! পশ্চিম মেদিনীপুরে ৯ বছরের কন্যার আত্মহত্যা মোবাইল আসক্তিতেই, সবংয়ে ২০ দিনে ২ জনের আত্মহত্যা, জেলায় ৩

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনার কারনে স্কুল বন্ধ, নেই বন্ধু বান্ধব। মোবাইল আসক্তি বেড়েই চলেছে। আর সেই মোবাইল আসক্তির জেরে গত ১মাসে ৩টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে যার মধ্যেই সবং থানা এলাকাতেই ২টি ঘটনা ঘটল মাত্র ২০দিনের মধ্যেই। রবিবার সবং থানার বীরকোটা গ্রামে ৯ বছরের বালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যুও আত্মহত্যা বলেই মনে করছে পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যায় দেহটি উদ্ধার করার পর রাতভর তদন্তের পর এমনই ধারণা পুলিশের।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ৯বছরের ওই বালিকা মাম্পি খাটুয়ার মা বিষ্ণুপ্রিয়ার মোবাইল ঘেঁটে দেখা গেছে থরে থরে সাজানো ১৯ টি গেমের আ্যপ। লুডো, ফ্রিফায়ার, কার রেসার, বাইক রেসার সহ আরও অনেক কিছুই। ২০মাস স্কুলের সাথে সম্পর্ক নেই, মোবাইলই জীবন। সময় কাটানোর একমাত্র মজা মোবাইল গেমেই। আর সেই গেম খেলতে বাধা দেওয়ার জন্যই পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার বীরকোটার চতুর্থ শ্রেণী পাশ করা ছাত্রী ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রাতভর তদন্তের পর এমনই সিদ্ধান্তে এসেছে পুলিশ। মাত্র ৯ বছরের মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা চমকে দিয়েছিল পুলিশকে। ঘটনা জানার পরই ঘটনাস্থলে ছুটে গেছিলেন ৩জন শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক। সবং থানার OC সুব্রত বিশ্বাস ছাড়াও গেছিলেন ডেবরা SDPO গোবিন্দ সিকদার ও CI কৃষ্ণেন্দু হোতা। ঘটনাস্থল খুঁটিয়ে দেখার পাশাপাশি, নিয়েছেন মাটি থেকে যে বাঁশের ধরনা থেকে মেয়েটি ঝুলছিল তাঁর মাপজোক, মাঝখানে সেই চেয়ার!

মাম্পির বাবা মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে দুটি মোবাইল ছিল বাড়িতে। একটি মাম্পির বাবা পূর্ণচন্দ্রর কাছে। অন্যটা মা বিষ্ণুপ্রিয়ার কাছে। মায়ের মোবাইলেও লোড করা ছিল গেমগুলি। সেই মোবাইল নিয়ে গেমে মত্ত থাকত মাম্পি। রবিবার পূর্নচন্দ্র সেই মোবাইলে ফোন করেই স্ত্রীকে মাঠে আসতে বলেছিল খড়ের বোঝা মাথায় তুলে দেওয়ার জন্য। মাম্পি মোবাইলে ব্যস্ত থাকায় সেই ফোন ধরতে দেরি হয়। মা বকাবকি করে মোবাইলটি কাড়িয়ে নিয়ে জমিতে চলে যায় স্বামীকে সাহায্য করার জন্য। এরপরই মাম্পি রান্নাঘরে গিয়ে গলায় ওড়না দিয়ে ঝুলে পড়ে।

নভেম্বর মাসের শেষে পড়াশুনার বদলে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অভিভাবকের বকুনির জেরে আত্মহত্যা করেছিল সবং থানার মোহাড় গ্রামের ছাত্রী তনুশ্রী খালুয়া। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তনুশ্রী স্থানীয় শ্যামসুন্দরপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল বলে জানা গেছে। গলায় গামছা দিয়ে ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে পড়েছিল তনুশ্রী। এর মাত্র ১০দিন আগে এরকমই একটি ঘটনার স্বাক্ষ্য ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা। বাড়ির লোকের বকাবকিতে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। গড়বেতার ধবাবেড়িয়া গ্রামের সেই ছাত্রীর নাম বর্ণালি পাল (১৮), সে গড়বেতা হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত।  মোবাইলে সারাক্ষন ব্যস্ত থাকার জন্য বাড়ির লোকেরা বকাবকি করেছিল তাঁকে। তারপরই নিজের বাড়ির একতলার একটি ঘর থেকে তাঁর আগুনে দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

রাজ্যের উচ্চ বিদ্যালয় প্রধানদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসস’ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেছেন, ‘ভয়ঙ্কর প্রবণতার দিকে এগুচ্ছি আমরা। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে শিশুমন, স্কুল না থাকায় শুধু যে পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে এমনটা নয়, ক্ষতি হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যের, বিভিন্ন কু-প্রভাব পড়ছে শিশুমনে। দেশের ২২ টি রাজ্যে প্রথম শ্রেণী থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে, আমাদের রাজ্যেও অবিলম্বে প্রথম শ্রেণী থেকে পঠন-পাঠন চালু হোক। আরও দেরি হলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে।’

রাজ্যের আরেকটি শিক্ষক সংগঠন  ‘শিক্ষক- শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’র রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেছেন, ‘ আমরা আশা করেছিলাম বছরের গোড়াতেই সবার জন্যই বিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু প্রাথমিক পড়ুয়াদের অভিভাবকদের স্কুল থেকে বই সংগ্ৰহ করার জন্য রাজ্য শিক্ষা দপ্তর যে নির্দেশিকা জারি করেছে তাতে আশঙ্কা হচ্ছে সরকার বোধহয় চাইছেনা এখুনি সব পড়ুয়া স্কুলে আসুক। আমরা বলছি এখুনি স্কুলের পঠনপাঠন চালু হোক, স্থান সঙ্কুলান না হলে প্রয়োজনে পর্যায়ক্রমে ক্লাস হোক। কিন্তু স্কুলে পঠন পাঠন চালু না হওয়ায় মারাত্মক সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে পড়ুয়াদের। স্কুল শুধু পড়ার জন্য নয়, নিয়ম, শৃঙ্খলা, সুস্থ অভ্যাস ইত্যাদি মানসিক স্বাস্থ্যগুলির জন্যও জরুরি। করোনা কালে যে মোবাইল আসক্তি কু-অভ্যাস গড়ে উঠেছে তা নিরাময় করতেও স্কুল অপরিহার্য। অবিলম্বে সরকার পড়ুয়াদের স্কুলে আসার ব্যবস্থা করা হোক।”

- Advertisement -
Latest news
Related news