নিজস্ব সংবাদদাতা: জেলে বসেই ভুবনেশ্বর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস অপহরণের ছক কষে ছিলেন সাবেক জনসাধারণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাত। এই ছক কসেছিলেন মাওবাদী নেতা কিষাণজী এবং ছত্রধরের ভাই আরেক মাওবাদী নেতা শশধর মাহাতের সঙ্গে পরিকল্পনা মাফিক। বৃহস্পতিবার আদালতে এমনই চার্জশিট দাখিল করল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা NIA। বৃহস্পতিবার আদালতের কাছে দাখিল করা ওই ৫০পাতার চার্জশিটে ছত্রধর মাহাত ছাড়াও কিষাণজী, শশধর মাহাত সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ ছাড়াও ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। উল্লেখ্য শশধর ও কিষাণজী দুজনই পরবর্তীকালে যৌথবাহিনীর সঙ্গে এনকাউন্টারে নিহত হন। আর ছত্রধর মাহাত বর্তমানে জেলেই রয়েছেন।
উল্লেখ্য ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৯ সালের ২৬শে অক্টোবর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে বসে প্রশাসনিক বৈঠক করছিলেন। সেই সময় বেলা আড়াইটা নাগাদ ঝাড়গ্রাম রেলস্টেশন থেকে ১০কিলোমিটার পূর্বে বাঁশতলা স্টেশনে রাজধানী এক্সপ্রেস অপহরণ করেছিল মাওবাদীরা। ২জন চালক ও গার্ড ছাড়াও ৮০০ জন যাত্রীকে ঘিরে রেখে মাওবাদীরা দাবি করেছিল ছত্রধর মাহাত সহ জেলবন্দি মাওবাদীদের ছাড়তে হবে।
সেদিন জনসাধারণের কমিটির লোকেরা প্রায় ৪০০জন গ্রামবাসীকে রেললাইনের ওপর দাঁড় করিয়ে দেয়। সঙ্গে ছিল ২৫জন শসস্ত্র মাওবাদী। পুলিশের দাবি কিষনজী, শশধর, সুচিত্রা, বিকাশের মত প্রথম সারির কমান্ডাররা ছিলেন এই অপহরণের সম্মুখভাগে। খবর পেয়ে ঝড়াগ্রাম থেকে রওনা দেয় যৌথবাহিনী। জঙ্গলপথে মাওবাদীদের সঙ্গে শুরু হয় এনকাউন্টার। ওই এনকাউন্টারে পুলিশের গাড়ির চালক ও এক জওয়ান গুলিবিদ্ধ হন।
উল্লেখ্য গত ২৭শেমার্চ গভীর রাতে নিজের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন ছত্রধর। অন্য বেশ কয়েকটি মামলায় জেল খাটার পর তাঁর সাজার মেয়াদ কিছুটা কমানোর পরই রাজ্য সরকারের বিশেষ বদান্যতায় গতবছরই মুক্তি পান ছত্রধর। বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই মুক্তি পাওয়ার পরই তৃনমূলের হয়ে জঙ্গল মহলের ব্যাট ধরেন ছত্রধর। এরপরই ছেলের চাকরি আর স্ত্রীর একটি সরকারি কমিশনে অন্তর্ভুক্তি করন। কিছুদিনের মধ্যেই তৃনমূলের রাজ্য কমিটির মুখপত্র হয়েও যান মাওবাদী আমলে অবরুদ্ধ জঙ্গলমহলে কেবলমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তৃনমূল নেতাদের প্রবেশাধিকার করে দেওয়া ছত্রধর মাহাত।
অবশ্য বেশিদিন বাইরে থাকা হয়নি ছত্রধরের। এবার লালগড়ের সিপিএম নেতা প্রবীর মাহাতকে খুন এবং রাজধানী এক্সপ্রেসে নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ২০০৯ সালের ওই দুটি মামলায় শালবনীর CRPF ক্যাম্পে দফায় দফায় জেরা করার পর তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয় NIA। বেশ কিছুদিন চলে আইনি লড়াই। তারপরই লালগড়ে ভোট পর্ব মিটতেই গত ২৭ মার্চ গভীর রাতে অভিনব কায়দায় তাকে গ্রেপ্তার করে NIA। গ্রেপ্তারের ১৮০ দিনের মাথায় এদিন এই চার্জশিট দাখিল করল NAI
চার্জশিটে এনআইএ দাবি জানিয়েছে, নিজেকে কারামুক্ত করার জন্য জেলে বসেই ছত্রধর রাজধানীর যাত্রীদের অপহরণ করার ছক কষেছিল। যদিও তাঁকে এই দ্বিতীয় দফার গ্রেপ্তারের আগে ছত্রধর মাহাত দাবি করেছিলেন, ‘ জেল থেকে মুক্তি পাওয়ারপর তিনি যেহেতু তৃনমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন তাই বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার করছে প্রতিহিংসা মূলক অবস্থান থেকেই।