নিজস্ব সংবাদদাতা: মাত্র ১ মাসের ব্যবধানে ১১মাস বয়সী মেয়ের কাছে ফিরছেন বাপ্পা! কিন্তু না এবার আর তাকে আদর করতে পারবেননা। গুজরাট থেকে সিয়াচেনে পোস্টিং হওয়ার বাড়ি ঘুরে আসার জন্য ছুটি পেয়েছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ল্যান্স নায়েক বাপ্পাদিত্য খুটিয়া। ২৭ এপ্রিল সেই ছুটি কাটিয়ে ফিরে গেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর শহরের বারবেটিয়ার বাসিন্দাদের আদরের বাপ্পা। ফের ফেরার কথা ছিল ডিসেম্বর মাসে কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। শুক্রবার সকাল ৯ টা নাগাদ লাদাখের তুর্তুক সেক্টরের অন্তর্গত এক পাহাড়ি রাস্তা থেকে ৬০ ফুট নিচে শ্যাওক নদীতে পড়ে যায় বাপ্পাদিত্য সহ ২৬ জনকে নিয়ে যাওয়া সেনাবাহিনীর গাড়ি। আর তাতেই মৃত্যু হয়েছে বাপ্পা সহ ৭ ভারতীয় সেনা জাওয়ানের।
শুক্রবার গভীর রাতে বাড়িতে এসে পৌঁছেছিল সেই মর্মান্তিক খবর। শনিবার তা ছড়িয়ে পড়েছে খড়গপুর শহর জুড়ে আর তারপরই খুটিয়া পরিবার সহ গোটা খড়গপুর শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সন্তান হারানোর হাহাকার। মাত্র বছর কয়েক আগে বিয়ে হয়েছিল বাপ্পার। ১১ মাসের একটি কন্যা সন্তান ছাড়াও ঘরে রয়েছেন স্ত্রী, বাবা মা। বাবা সুকুমার খুটিয়া রেলের প্রাক্তন সুরক্ষাবাহিনীর জওয়ান বা আরপিএফ। সুকুমার বাবু জানান, “প্রতিদিন রাত ১০টা নাগাদ একবার বাড়িতে ফোন করত। নিত মেয়ের খবর। কিন্তু শুক্রবার সেই ফোন আসেনি। তখনই মনটা কু গাইছিল কিন্তু সেটা যে এতবড় মর্মান্তিক হবে বুঝতে পারিনি।”
গুজরাট থেকে লাদাখে বদলি হওয়ার পর থেকেই শান্তিতে ছিলেননা খুটিয়া পরিবার। জম্মুকাশ্মীর আর লাদাখে প্রতিনিয়ত জঙ্গি হানায় খুবই দুশ্চিন্তায় থাকতেন খুটিয়া পরিবার। চাইত ছেলে চাকরি ছেড়ে চলে আসুক। কিন্তু তাবলে ৩২ বছরের ছেলের এইভাবে মৃত্যুও মেনে নিতে পারছেননা সুকুমার বাবু। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি জানালেন, ” বরং যদি জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ যেত তবুও একটা স্বান্তনা থাকত কিন্তু দুর্ঘটনায় মৃত্যু মেনে নিতে পারছিনা।” সুকুমার বাবুর এই আক্ষেপের পেছনে অবশ্য কোনও দোষ নেই কারন সেনাবাহিনীর প্রাথমিক অনুমান চালকের বেপরোয়া মনোভাবের জন্যই ২৬ জন জওয়ানকে নিয়ে যাওয়া ওই বাসটি ৯০ ফুট নীচে পাক খেতে খেতে গড়িয়ে পড়ছে। নুবরা স্টেশন হাউসের আধিকারিক ইন্সপেক্টর স্টাজিন দোর্যে বলেছেন, “প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে চালকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই এই দুর্ঘটনার কারন। তাঁর বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, মানুষকে বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেওয়া এবং অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
এদিকে বাপ্পাদিত্য খুটিয়ার দেহ ময়নাতদন্তের পরই শনিবার রাতে সেনাবাহিনীর বিমানে কলকাতা বিমানবন্দরে আনা হয়েছে। রবিবার ভোরে তা সেনাবাহিনীর গাড়িতে করেই আনা হবে খড়গপুরে। খড়গপুরের বাসিন্দাদের একাংশ রবিবার সকাল ৯ টায় চৌরঙ্গীতে জমায়েত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেখান থেকেই তাঁকে নিয়ে বাইক মিছিল করে রওনা দেবেন বাপ্পার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। শেষমেশ ২০০৯ সালে সেনাতে যোগ দিয়েছিলেন বাপ্পা। তার আগেও ২ বার নির্বাচিত হন সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য কিন্তু মা কিছুতেই যেতে দেননি। ২০০৯ শেষ অবধি সেই চাকরিতেই যোগ দিয়েছিলেন। ডিসেম্বরে খড়গপুরে ফিরে বাড়ি বানানোর কাজ শুরু করার কথা ছিল কিন্তু তার আগেই ফিরে আসছেন তিনি আর বাড়ি নয়, বারোবেটিয়ার বন্ধুরা বাপ্পার জন্য একটা স্মরণীয় সমাধি বানাতে চান, এক ভারতীয় জওয়ানের সমাধি।