নিজস্ব সংবাদদাতা: বিকাল সাড়ে ৩টাতেই অন্ধকার হয়ে গেল খড়গপুর শহর। তুমুল বৃষ্টিতে ভাসল খড়গপুর শহর। মাত্র দু’দিন আগেই বৃষ্টির রেশ কাটিয়ে শুকনো হয়েছিল খড়গপুরের মাটি রবিবার ফের সেই মাটি ফের ভাসিয়ে দিল মারাত্মক বৃষ্টি। রবিবার বেলা ৩টা থেকেই কালো মেঘ ভেসে আসতে থাকে শহরের ওপরে। মিনিট পনেরোর মধ্যেই ঘন অন্ধকারে ছেয়ে যায় গোটা শহর। সঙ্গে গরমের তীব্র অস্বস্তি। আর তারপরেই শুরু হয় ব্যাপক বজ্রপাত। খড়গপুরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন মিনিটে ২০টিরও বেশি বাজ পড়েছে খড়গপুর শহরের ওপর এবং এই বজ্রপাত চলেছে আধঘন্টারও বেশি সময় ধরে। মুহূর্তের মধ্যেই পথঘাট, বাজারহাট সব ফাঁকা হয়ে যায়। শহর জুড়ে এতটাই ঘন অন্ধকার নেমে আসে যে ঘরের ভেতরে আলো জ্বালাতে হয়। সাড়ে তিনটা নাগাদ শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি।
জানা গেছে রবিবার খড়গপুর শহরের দক্ষিণ দিক আইআইটি ক্যাম্পাস, প্রেমবাজার, তালবাগিচা, ডিভিসি, মায়াপুর, রবীন্দ্রপল্লী, ঝাপেটাপুর, ছোট ট্যাংরা, বুলবুলচটি, কৌশল্যা ইত্যাদি এলাকায় সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছে। ইন্দা, পীরবাবা, ট্রাফিক, সুভাসপল্লী, ভবানীপুর এলাকায় তুলনায় কিছুটা কম বৃষ্টি হয়েছে। খরিদা, মালঞ্চ, নিমপুরা, আরামবাটি এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে মাঝারি আকারে। তবে বজ্রপাতের পরিমান গোটা শহর জুড়েই প্রায় একই রকম ছিল। ব্যাপক বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারনে দীর্ঘক্ষণ শহরের বিভিন্ন অংশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
এদিন বজ্রপাতে একটি মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়নগড় থানা এলাকায়। ঘটনাটি ঘটেছে কুনারপুর গ্রামপঞ্চায়েতের অধীন জগন্নাথপুর গ্রামে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য চন্দন দাস জানিয়েছেন, মৃত ব্যক্তির নাম শুকদেব অধিকারী। ৫২ বছরের শুকদেব সামান্য জমিজায়গা চাষ করে সংসার নির্বাহ করতেন। রবিবার দুপুরে শুকদেব গিয়েছিলেন কেলেঘাই নদীর তোডরা খালে খালে মাছ ধরতে। ওই সময় বজ্রপাতে খালের মধ্যেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয়রা খবর পেয়ে উদ্ধার করে তাঁকে স্থানীয় গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করেন তিনি। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সংগ্ৰহ করেছে পুলিশ। এদিন নারায়নগড় এলাকাতেও ব্যাপক বজ্রপাত ও বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রী দাস।
এদিন মেদিনীপুর শহরে বজ্রপাতের প্রাবল্য না থাকলেও ওই একই সময়ে মাঝারি আকারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। শহরের প্রায় সর্বত্রই বৃষ্টি হয়েছে এদিন। বৃষ্টির জেরে এদিন সাময়িকভাবে মার খেয়েছে পুজোর বাজার। বড়বাজার, ছোটবাজার, সাহাভড়ংবাজার ইত্যাদি যেখানে জামা কাপড়ের দোকান রয়েছে সেখানে বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন দোকানে ঢুকে পড়ায় দোকানগুলোতে চাপ বেড়ে যাওয়ায় কেনাকাটা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ। রাস্তাঘাট জলে কাদায় ভিজে যাওয়া চরম অস্বস্তিতে পড়েন ক্রেতারা।
নিম্নচাপ গুলাবের পরে ফের একটি নিম্নচাপে ভিজেছিল দুই শহর। মনে করা হয়েছিল তারই সাথে বর্ষা বিদায় নিয়েছে। কিন্তু এখন আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্ষা রয়ে গেছে এবং আরও কয়েকদিন থাকছে। আগামী ৬ অক্টোবর বর্ষা পুরোপুরি বিদায় নিতে পারে। আবহাওয়া দপ্তর আরও জানিয়েছে, বিহার ও উত্তরবঙ্গে রয়েছে নিম্নচাপ। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে আর একটি ঘূর্ণাবর্ত। এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে একটি অক্ষরেখা তামিলনাড়ু উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত। এর ফলে ফের বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকছে। এর ফলে পুজোর বাংলা ভাসতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকরা।
আবহাওয়া দপ্তরের ওই পূর্বাভাসে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে আজ অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। অতিভারী বৃষ্টি হবে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, কালিম্পং জেলায়। ভারী বৃষ্টির সর্তকতা দুই দিনাজপুর ও মালদহ জেলায়। সোমবারও আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। দক্ষিণবঙ্গে রবি ও সোম বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী বৃষ্টির সর্তকতা মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলায়। তাপমাত্রা বাড়বে। জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় আর্দ্রতা জনিত অস্বস্তি থাকবে।
আলিপুর হাওয়া অফিস তাদের পূর্বাভাসে আরও জানিয়েছে, আগামীকালও আংশিক মেঘলা আকাশ থাকতে পারে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ দু-এক পশলা হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বিকেলের দিকে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরে থাকবে। আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি বাড়বে। সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৩ ডিগ্রি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৯৪ শতাংশ।