নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রাক্তন কাউন্সিলর এক নির্দল প্রার্থীকে লড়াই থেকে সরে আসার হুমকি দিচ্ছে পুলিশ ও তৃনমূল কংগ্রেসের লোকেরা এমনই অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হলেন ওই প্রার্থী। পাশাপাশি কমিশনের কাছে আবেদন জানালেন জেলার পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্ট পুর এলাকার দায়িত্বে থাকা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সরানোর জন্য উদ্যোগ নিন নির্বাচন কমিশন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভা এলাকার ঘটনা। উল্লেখ্য ১২টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট এই ছোট পুরসভার এক নির্দল প্রার্থী সেখ ওসমান গেনি গত ১১ই ফেব্রুয়ারি এই অভিযোগ জানিয়েছেন।
গেনির অভিযোগ গত ১২ তারিখ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। তার আগেই এই হুমকি দেওয়া হয়। যদিও চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে গেনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থেকে গেছেন। এখন তিনি আশঙ্কা করছেন যে প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করাতে না পারায় তাঁর বিরুদ্ধে অন্য প্রতিহিংসা মূলক ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ। আর সেই কারণেই তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যাতে জেলার পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্ট থানার আধিকারিককে জেলা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। গেনি আরও অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পোরার হুমকি দিয়েছে চন্দ্রকোনা থানার সহকারী সাব ইন্সপেক্টর প্রশান্ত মজুমদার। পাশাপাশি যাঁরা তার মনোনয়নের প্রস্তাবক ছিলেন তাঁদেরও হুমকি ও অশ্লীল গালাগালি দেওয়া হচ্ছে বলে গেনি ওই অভিযোগ পত্রে লিখেছেন। মজুমদারকেও এই এলাকা থেকে সরানোর জন্য আবেদন করেছেন তিনি।
গেনির অভিযোগ চন্দ্রকোনা থানা ওই আধিকারিক থানার তাঁকে ফোন করে ডাকেন। গেনি তাঁর নিজের ও আধিকারিক মজুমদারের ফোন নম্বর যুক্ত করেছেন অভিযোগ পত্রে। তারপর মজুমদার বড়বাবু রবি কর্মকারের নাম করে বলেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের চাপ রয়েছে বড়বাবুর ওপর যাতে গেনি তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। মজুমদার নাকি এও বলেছেন, ২০১৫ সালে যেভাবে তৎকালীন পুলিশ সুপার রামজীবন পৌরসভা তৃনমূলকে জেতাতে কাজ করেছিলেন ঠিক একই ভাবে এবারও পুলিশ কাজ করছে। যদি পুলিশের পরামর্শ না মেনে গেনি এই নির্বাচনে লড়াই করার জন্য এগিয়ে যায় তবে তাঁর এমন অবস্থা করা হবে যে পাশে তিনি কাউকে পাবেননা।
উল্লেখ্য গেনি ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও তাঁর পেছনে রয়েছে চন্দ্রকোনা বেকার সমিতি নামে একটি সংগঠন। ২০১১ সালে বামফ্রন্ট পরিচালিত রাজ্য সরকারের আমলে এই বেকার সমিতির ভালো শক্তি ছিল চন্দ্রকোনা এলাকায়। তাঁরা অনেক আসনেই জিতে ছিলেন এবং পুরবোর্ডের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। ওসমান গেনি সেই সময় তিনবার (১৯৯০, ১৯৯৫, ২০০০) কাউন্সিলর হিসাবে জয়ী হয়েছিলেন। পরবর্তীতে বেকার সমিতির একটি অংশ সরাসরি শাসকদলে মিশে গেলেও একটি অংশ শাসকদলের বাইরে থেকে যায়। সেই অংশেরই হয়ে উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন তিনি। এলাকায় যথেষ্ট প্রভাবও রয়েছে তাঁর। তিনি নিজে নিশ্চিত জয়ী হবেন বলেই দাবি করেছেন। যদিও তাঁর অনুগামীদের বক্তব্য গেনি যদি জয়ী হতে নাও পারেন তবুও শাসকদলের প্রার্থীর বহু ভোট তিনি ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হবেন আর এখানেই ভয় পাচ্ছে শাসকদল।
এখনও অবধি ‘অফিসিয়ালি’ এই অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেননি কেউই। গেনি অবশ্য অভিযোগ পত্রে নির্বাচন কমিশনের স্ট্যাম্প ও সই করা প্রাপ্তিস্বীকার পত্রটি সযত্নে গুছিয়ে রেখেছেন এবং দাবি করেছেন প্রয়োজনে ওই দাখিল অভিযোগ পত্র নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন তিনি। গেনির কথায়, আমার অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা আদালতকে জানাতে বাধ্য কমিশন। ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অগ্নিশ্বর চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘আমি শুনেছি এরকম একটি অভিযোগ হয়েছে কিন্তু আমার কাছে সেই অভিযোগ আসেনি। কেউ নিজে এসেও আমার কাছে এরকম অভিযোগ জানাননি। যদি এরকম অভিযোগ আসে তা দেখা গুরুত্ব দিয়েই দেখা হবে।’