শশাঙ্ক প্রধান : এক ১৩ বছরের আদিবাসী কন্যাকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে রাতভর গণধর্ষণের পর অচৈতন্য অবস্থায় ফেলে পালালো ৩ দুস্কৃতি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার অন্তর্গত একটি গ্রামের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ওই এলাকায়। পুলিশের দাবি ঘটনার কথা জানতে পারার পরই পরিবারের অভিযোগ দায়ের হওয়ার আগেই একটি ফেসবুক পোষ্টের সূত্র ধরে পুলিশ ওই তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে কাল বিলম্ব না করেই। এদিকে এই ঘটনায় প্রকৃত অভিযুক্তরা যাতে সাজা পায় সেই দাবি জানিয়ে পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সবং থানার সামনে স্লোগান সাউটিং করে দাবি জানান ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহালের সদস্যরা। যদিও পুলিশ দাবি করেছে তাঁরা ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করে মামলা দায়ের করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে সবং থানার দেভোগ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত একটি গ্রামে। তেমাথানি থেকে মকরামপুরগামী রাজ্য সড়কের ওপরেই ওই গ্রামটির অবস্থান। গ্রামের ওই নির্যাতিতা কন্যা মাতৃহীনা। বাবা এবং ৬ বছরের ভাইয়ের সঙ্গেই থাকত। বাবা দিন মজুর ফলে কাজে কর্মে প্রায়ই বেরুতে হয়। নাবালিকার বাড়ি লাগোয়া এলাকায় প্রায় আড্ডা মারত ওই ৩ যুবক। মা না থাকায় কার্যত মেয়েটিকেই সংসারের কাজকর্ম হয়। এটা ওটা আনতে দোকান হাট বাজার যেতে হত। যাতায়াতের পথে মেয়েটির সঙ্গে ঠাট্টা ইয়ার্কি করত ওই যুবকরা। মেয়েটি অবশ্য সেই সবকে খুব পাত্তা দেয়নি। নেহাৎই মজা ভেবেই ধরেছে।
ঘটনাটি ঘটে সোমবার সন্ধ্যাবেলায়। ওই মেয়েটির বাবা বাড়ি ছিলনা। অনেক রাত্রি করে বাড়ি ফিরেছিলেন। ভাইয়ের সঙ্গে একাই ছিল নাবালিকা। ওই যুবকের দল মেয়েটিকে ডাকে। মেয়েটি সরল মনেই বাড়ির বাইরে যায় কিন্তু তারপর আর বাড়ি ফেরেনি। রাতে বাড়ি ফিরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করেন কিন্তু হদিস মেলেনি মেয়ের। পরের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার ভোর চারটে নাগাদ বাড়ি থেকে কয়েকশ মিটার দুরে একটি হাট লাগোয়া এলাকায় কয়েকটি দোকানের পেছন দিকে ঝোপের মধ্যে মেয়েটিকে অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পান স্থানীয়রা। তাঁরা জানিয়েছেন মেয়েটির পোশাক অবিন্যস্ত ছিল। খবর যায় মেয়েটির বাবার কাছে। সবাই মিলে ধরাধরি করে মেয়েটিকে স্থানীয় গ্রামীন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। ওই চিকিৎসক মেয়েটির জ্ঞান ফেরান এবং ধাতস্থ করেন।
এই সময় স্থানীয় ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহালের এক সদস্য মেয়েটির কাছে যায়। মেয়েটির কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চান। মেয়েটি যা যা বলে তা ফেসবুকে লাইভ করেন মেয়েটির নাম পরিচয় গোপন রেখেই। সবং পুলিশ ওই ফেসবুক লাইভ দেখার পরই সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মেয়েটির বক্তব্য অনুযায়ী ওই তিনজনকে বুধবারই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সত্যতা বুঝতে পারে। এরপর গ্রেপ্তার করে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কারন পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ তখনও অবধি দায়ের করা হয়নি।
তৃনমূল কংগ্রেসের দেভোগ অঞ্চলের যুব সভাপতি টোটন দাস জানান, “ঘটনাটি জানার পরই আমি নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে দেখা করি এবং তাঁকে থানায় অভিযোগ দায়ের করার জন্য বলি। কারন এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের না হলে অভিযুক্তরা যথার্থ সাজা পাবেনা এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে হয়ত অন্য কারও সঙ্গে। কিন্তু নাবালিকার বাবা জানান মেয়েটি সুস্থ না হয়ে ওঠা অবধি তিনি থানায় যেতে পারবেননা কারন এই অবস্থায় তাঁর মেয়েকে দেখার কেউ নেই। শুক্রবার অবশ্য মেয়ের বাবা জানান তিনি এবার অভিযোগ দায়ের করতে পারেন কারন তাঁর মেয়ের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল।”
শুক্রবার ওই তিনজনের বিরুদ্ধে সবং থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মেয়ের বাবা। সঙ্গে তাঁদের আদিবাসী জনজাতি সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগনা মহালের কয়েকজন সদস্য হাজির ছিলেন। অভিযোগ দায়ের করার পর দোষিদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা যেন পুলিশ করে তারজন্য থানার সামনে স্লোগান সাউটিং করেন ওই সদস্যরা। পুলিশ জানিয়েছে, ‘ তারা আগেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছিল ঠিকই কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পরিবারের পক্ষে দায়ের না হওয়ায় উপযুক্ত ধারায় মামলা দায়ের করতে পারছিলনা।’
অভিযোগ দায়ের হবার পরই ধৃতদের বিরুদ্ধে পকসো আইন বা শিশুদের যৌন নির্যাতন প্রতিরক্ষা আইনের ধারা সহ একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।’ এরফলে এই মামলা নির্দিষ্ট আদালতে দ্রুততার সঙ্গে পরিচালনা করা যাবে এবং সাধারণভাবে অভিযুক্তদের হাজতে রেখেই সমগ্র শুনানি পর্ব চলবে। অর্থাৎ মামলার রায় না বের হওয়া অবধি জেলেই থাকতে হবে অভিযুক্তদের। জানা গেছে ওই তিন অভিযুক্ত হল বিশ্বনাথ সিং, বিশ্বনাথ পাত্র, গৌতম কুইলা। এরা ওই স্থানীয় এলাকারই বাসিন্দা। অভিযোগ দায়ের করার পরই ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে ওই নাবালিকার।