নিজস্ব সংবাদদাতা: গত ১দশক জুড়ে ঢালাও হয়েছে মদ বিক্রির লাইসেন্স। শহর বা মফঃস্বল তো দুরের কথা প্রান্তিক গ্রামেও মদ ব্যবসায়ীরা খুলে বসেছেন এফ.এল শপ। দেশি কিংবা বিলাতি মদ এখন ‘হাত বাড়ালেই বন্ধু’র মত। এমন কী লকডাউন চলাকালীন দোকান খোলাতে অগ্রাধিকার পেয়েছে মদের দোকান। সব মিলিয়ে সরকার যে মদ বিক্রি বাবদ সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
সেই রাজস্ব আদায় কি পরিমান বেড়েছে তা জানা গেছে আবগারি দপ্তরের একটি রিপোর্টে। দেখা যাচ্ছে
২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্য আবগারি দপ্তরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১২ হাজার কোটি টাকা। যা কিনা সাড়ে ৩মাস আগেই অর্থাৎ ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই সেই লক্ষ্য মাত্রা পূরণ করে ফেলেছে। অর্থাৎ অনিবার্য ভাবেই এবার লক্ষ্যমাত্রার অনেক বেশি আয় করতে চলেছে রাজ্য।
গত ৫ বছর ধরে বাংলার মদের বাজারে বিপুল পরিবর্তন এসেছে বিশেষ করে যখন থেকে মদ বিপণনের রাশ ধরতে শুরু করে রাজ্য সরকার পোষিত সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশন (বেভকো)। ২০১৭ সাল থেকে এই সংস্থা দেশি এবং বিলেতি মদের প্রধান ডিস্ট্রিবিউটার হয়ে যায়। আর কামাল সে বছরই। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে দফতরের রাজস্ব আয় হয় ৯৩৪০.০৫ কোটি টাকা। এর পরের বছর ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে সেটাই বেড়ে হয় ১০,৫৯০.৭২ কোটি টাকা। সে বার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০,৫০৩.৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রা টপকাতে থাকে।
পরের আর্থিক বর্ষ করোনাকালের মধ্যে দিয়ে যাওয়ায় আয় কমে যায় বেশ কিছুটা কিন্তু এখন আবার ফুলে ফেঁপে উঠছে মদের কাটতি। অবশ্য করোনাকালে মদ বিক্রিতে অনলাইন শপিংয়ের ব্যবস্থা করোনার মধ্যেও মদের কাটতি অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে মদের বিক্রি বাড়াতে আবগারি দপ্তরের নিত্যনতুন পদ্ধতি সরকারের ঘরে রাজস্ব তুলে দিয়েছে বেশি বেশি করে।
আবগারি কর্তাদের দাবি করেছেন, দেশি মদের বিক্রি উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে। সস্তায় বৈধ দেশি মদ পেয়ে অনেকেই চোলাইয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পানীয় থেকে সরে আসছেন। নতুন নতুন ব্রান্ডের দেশি মদ বাজারে আসছে। সর্বনিম্ন ২৩টাকায় মিলছে ৩০০ মিলিলিটার দেশি মদ। ফলে চোলাই, পচাই ছেড়ে একটা বড় অংশের মানুষ বৈধ নিরাপদ মদ পাচ্ছেন। অন্যদিকে গ্রামে গঞ্জে মদের দোকান হয়ে যাওয়ায় নেশাসক্ত মানুষকে চোরা পথে সরবরাহ হয়ে আসা চোলাইয়ের কবলে পড়তে হচ্ছেনা।
আবগারি কর্তাদের মতে, মদ বিক্রির বেশিটাই হচ্ছে বৈধ পথে। আর তাতেই রাজ্যের কোষাগারে টাকা ঢুকছে। যদিও এই যুক্তি মানতে রাজি নন অনেকেই। তাঁদের মতে গ্রামগঞ্জে দেশি বিলেতি মদের দোকান খোলায় সরকারের মদ বিক্রির রাজস্ব বেড়েছে কারন মানুষ হাতের কাছে মদের দোকান পাচ্ছে। কিন্তু তাতে চোলাইয়ের বিক্রি কমে যায়নি। বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি করে চোলাইয়ের কারবার বেড়েছে।