![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/09/PicsArt_09-06-02.57.32.jpg)
নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর শহরে মাদকচক্র কতটা শক্তিশালী এবং প্রসারিত তার মর্মান্তিক স্বাক্ষী থাকল খড়গপুর পৌর এলাকার একটি পরিবার। যেখানে মাদক নিয়ে বচসার ভাইয়ের হাতে প্রাণ গেল দাদার। দুই সন্তান নিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল একটি পরিবার। রবিবার ছুটির দিনে স্রেফ মাদক সেবন নিয়ে অশান্তির জেরেই ভাই একটি চলন্ত বাইক দিয়ে সরাসরি ধাক্কা মারে দাদাকে যার পরিণতিতে মৃত্যু হয় দাদার। খড়গপুর পৌরসভার ৩৩নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত রবীন্দ্রপল্লী এলাকায় এমনই ভয়ঙ্কর অথচ দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেল।
পুলিশ জানিয়েছে মৃত দাদার নাম ভক্ত রাও। বয়স ৪৫ বছরের কাছাকাছি। ভক্ত এবং তাঁর স্ত্রী মিলে আইআইটি খড়গপুর টেক মার্কেটে একটি ইডলি ধোসার ছোট্ট দোকান রয়েছে যা স্বামী-স্ত্রী মিলে চালাতো।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/09/PicsArt_09-06-03.03.03.jpg)
ভক্তর ছোট ভাই সুমিত আলাদা থাকত পাশেই। প্রতিবেশীরা জানিয়েছে সুমিত নিজে যেমন মাদক সেবন করত তেমন এলাকায় ব্রাউনসুগার, গাঁজা ইত্যাদি বিক্রিও করত গোপনে। বাড়িতে মাঝেমধ্যে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা বসত।
এদিকে আলাদা ঘর হলেও একই প্রাঙ্গনের মধ্যে এই আড্ডা মানতে পারতনা ভক্ত। কারন তাঁর বড় মেয়েটি সবে ১৮ছড়িয়েছে। তাছাড়া নেশা করার পর সুমিত বাড়িতে অশান্তি করত এই নিয়েও পরিবারে অশান্তি হত। গত ২দিন ধরে সেই অশান্তি বাড়ছিল। যা চরমে ওঠে রবিবার। পুলিশ জানিয়েছে রবিবার সকাল থেকে দু’দফায় ঝামেলা হয় ভক্ত ও সুমিতের মধ্যে। সকালের পর দুপুরেও সেই একই বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি, বচসা হয়। ভক্ত ছোটভাইকে একটি থাপ্পড় মারে এবং সতর্ক করে দেয় এবার মাদক সেবন করে বাড়িতে আসলে কিংবা বাড়িতে বন্ধুদের নিয়ে মাদকের আসর বসালে কড়া ব্যবস্থা নেবে সে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/09/PicsArt_09-06-03.00.23.jpg)
সুমিত চড় খাওয়ার পরই গজরাতে গজরাতে বেরিয়ে যায়। জানিয়ে যায় এই ঘটনার বদলা সে নেবেই। বিকালে নিজের বাড়ির সামনে কংক্রিটের রাস্তার ওপর দাঁড়িয়েছিল ভক্ত। সামনেই মহানালার ওপরে কংক্রিটের স্ল্যাব, বাড়িতে ঢোকার জন্য। ওই সময় সুমিত একটি বাইক চালিয়ে আসে এবং বাড়িতে ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ভক্তকে সজোরে ধাক্কা মারে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেই ধাক্কার অভিঘাত এতটাই ছিল যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভক্ত প্রায় ১০ফুট দূরত্বে উড়ে গিয়ে পড়ে। মাথা সরাসরি পড়ে মহানালার কংক্রিট প্রান্তে। কান দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে।
ঘটনার পরই নেশা ছুটে যায় সুমিতের। প্রতিবেশী ও পরিবারের লোকেদের সাথে দ্রুত ভক্তকে সেও নিয়ে যায় খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু কান দিয়ে কার্যত স্রোতের মত বয়ে যাওয়া রক্ত বন্ধ করতে পারেননি চিকিৎসকরা। দ্রুত তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় পরিবারকে। সেইমত আ্যম্বুলেনস জোগাড় করে ভক্তকে নিয়ে ছোটা হয় মেদিনীপুর কিন্তু পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফিরিয়ে আনা হয় খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালেই।
এদিকে ভক্তর মৃত্যুর খবর পেয়েই ক্রোধে ফেটে পড়েন রবীন্দ্রপল্লীর মানুষ। সুমিতকে ধরে শুরু হয় চড় থাপ্পড় ও জেরা। সে কোথায় বাইক পেল এবং কোত্থেকে মাদক আসত জানতে চাওয়া হয়। সুমিতের কাছে জানার পরই কিছু যুবক রাতেই তল্লাশি চালায় রবীন্দ্রপল্লী আরামবাটির মধ্যবর্তী কংসবতী ক্যানেলের পাশের জঙ্গলে। হদিস পাওয়া যায় মাদকচক্রের এক পান্ডা ও আরও তিনজনের। রাত ১টা নাগাদ ধরা হয় মাদকচক্রের পান্ডা সেক আনোয়ারকে কিন্তু বাকি ৩জন পালায়। উদ্ধার হয় আনোয়ারের সেই বাইক যা দিয়ে সুমিত ধাক্কা মারে ভক্তকে। সুমিত এবং আনোয়ারকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। পুলিশ দু’জনকেই গ্রেপ্তার করে।
রবীন্দ্রপল্লীর যুবক তথা সিপিআই নেতা আয়ুব আলি জানিয়েছেন, “সেক আনোয়ার আরামবাটি থেকেই বিভিন্ন এলাকায় মাদক কারবার চালাতো বলেই আমরা জানতে পেরেছি। খড়গপুর পৌরসভার ডাম্পিং ইয়ার্ড সংলগ্ন জঙ্গলটিই ছিল তাঁদের ঘাঁটি। এখান থেকেই ব্রাউনসুগার, গাঁজা, চরস ইত্যাদি সরবরাহ হত। রবীন্দ্রপল্লীতে আরও কয়েকটি মাথা আছে মাদকচক্রের। মাদকের জন্য একের পর এক পরিবার ধ্বংস হচ্ছে। যুবকরা নেশায় বুঁদ হয়ে থাকছে। আমরা পুলিশকে সব জানিয়েছি। পুলিশ যদি বাকি মাদককারবারিদের ধরে ভালো নাহলে আমরাই এবার উদ্যোগ নেব।”