নিজস্ব সংবাদদাতা: কয়লা পাচার কান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো ইডি(Enforcement Directorate)র তলব এড়িয়ে গেলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়! ১লা সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আজ, বুধবারই ইডির মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল অভিষেক জায়ার। কিন্তু নিজের আইনজীবীর সঙ্গে কথাবার্তা বলার পরই তিনি ইডিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিলেন যে, দিল্লি যাওয়া তারপক্ষে সম্ভব নয়। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকেই কী দিল্লির তলব এড়িয়ে গেলেন রুজিরা?
যদিও রুজিরা তাঁর চিঠিতে জানিয়েছেন, ইডিকে তিনি সমস্ত রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত কিন্তু দিল্লি যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। ইডির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সুমত প্রকাশ জৈনকে ৩১ আগস্ট পাঠানো চিঠিতে রুজিরা জানিয়েছেন, ‘আমি দুই শিশুর মা। প্যান্ডেমিক আবহে একা দিল্লি যাওয়া আমার দুই শিশু সন্তান ও আমাকে যথেষ্ট ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। আপনারা আমার কলকাতার বাড়িতে এসে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করুন। সেটা আমার জন্য সুবিধাজনক। কলকাতায় আপনাদের অফিসও আছে। আমার মনে হয়, যে বিষয়ে আপনারা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান সেটি পশ্চিমবঙ্গের বিষয়।’ নিজের চিঠিতে অভিষেক পত্নী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে সর্বতোভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে আগামী ঠিক ৫ দিনের মাথায় একই মামলায় একই ভাবেই দিল্লিতে তলব করা হয়েছে খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রুজিরার এই চিঠির পর স্বাভাবিকভাবেই মনে করা হচ্ছে তিনিও হয়ত ইডির দিল্লি অফিসে হাজিরা দেওয়ার তলব এড়িয়ে যাবেন। অনেকেরই অনুমান ইডির ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি ৬ তারিখ দিল্লি যাবেননা। তৃনমূলের তরফে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে ইডি, সিবিআই ইত্যাদি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে ব্যবহার করে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বিজেপি নিয়ন্ত্রনাধীন কেন্দ্র সরকার।
বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ‘কয়লা কাণ্ড’ নিয়ে অভিষেকের বাড়িতেও যান ইডি আধিকারিকরা। ইডি একদফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে রুজিরাকে। তৃনমূল সুপ্রিমো স্বয়ং বারংবার অভিযোগ করেছেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এসব করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার থেকে শুরু করে ২১শে জুলাইয়ের ভার্চুয়াল সভায় এই দাবি বারবার করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে ভাষণ দিতে গিয়েও অভিষেক এই প্রসঙ্গে নিজের ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। তৃণমূলের তরফে অভিযোগ, বিনয় মিশ্র সহ অন্যান্যদের জেরা করার সময় বল প্রয়োগ করে তাঁদের দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলিয়ে নিয়েছে।
শুধুমাত্র তৃনমূল কংগ্রেসই নয়, আরও অনেক রাজনৈতিক দলও বিজেপি নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্র সরকারের এই ‘প্রতিহিংসা’ নিয়ে সরব। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি.চিদাম্বরমকে যে ভাবে মাসের পর মাস জেলে রেখে হেনস্থা করা হয়েছিল তা নিয়ে সরব হয়েছিল কংগ্রেসও। তাছাড়া রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এলেই কেন সিবিআই বা ইডি এত তৎপর হয়ে ওঠে সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপি অবশ্য বিষয়টিকে বরাবরই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির নিজস্ব ব্যাপার বলে এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছে। ইডির একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, কয়লাকান্ডে নির্দিষ্ট সূত্র এসেছে তাদের হাতে। বিশেষ করে ইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া বাঁকুড়া থানার প্রাক্তন ইন্সপেক্টর ইনচার্জকে জেরা করে এমন কিছু তথ্য মিলেছে যার জন্য সস্ত্রীক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরী।