Saturday, July 27, 2024

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-১২২ ।। চিন্ময় দাশ   

- Advertisement -spot_imgspot_img

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল
                                     চিন্ময় দাশ            সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দির, নেগুয়া (এগরা)

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

বাংলা সাহিত্যের উজ্বল সম্পদ ‘কপালকুণ্ডলা’। আজকের এগরা থানার নেগুয়া গ্রামে বসে, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই অমর উপন্যাসটি রচনা করেছিলেন। সেসময় নেগুয়া ছিল একটি মহকুমার সদর। বঙ্কিমচন্দ্র সেখানে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নিযুক্ত হয়ে এসেছিলেন।
যশোহর শহরে পোস্টিং থাকাকালীন, বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম স্ত্রী রাজলক্ষ্মী দেবী মারা যান। সেসময় প্রমোশন দিয়ে, মেদিনীপুরে পাঠানো হয় তাঁকে। জেলা কালেক্টর মিষ্টার এফ আর ককারেল-এর কাছে, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টরের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে, উটের গাড়িতে চেপে, এগরা হয়ে নেগুয়ায় আসেন বঙ্কিমচন্দ্র।

কাঁথি মহকুমার গঠন হয়েছিল তখনকার কাঁথি, এগরা, রামনগর, দাঁতন, মোহনপুর, আর বর্তমান ওডিশার ভোগরাই পরগণার কিছু অংশ নিয়ে। মহকুমা সদর এবং দপ্তর গড়া হয়েছিল, কাঁথি থেকে অনেকটাই দূরে, শীপুর পরগণার এই নেগুয়া গ্রামে।
কাঁথি থেকে এতটা দূরের নেগুয়াতে প্রশাসনিক দপ্তর গড়তে হয়েছিল ‘হার্মাদ’ নামে পরিচিত পর্তুগীজ জলদস্যু বাহিনী, আর ‘বর্গী’ নামের মারাঠা স্থলদস্যু দের লাগাতার উৎপাতের কারণে।
যাইহোক, নেগুয়ার অফিসে বঙ্কিমচন্দ্রের কার্যকাল ১৮৬০ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি থেকে ২২শে নভেম্বর। এই স্বল্পকালের মধ্যেই, তিনটি উল্লেখ করবার মত ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।

১ নেগুয়াগড়ে তখন প্রবল প্রতাপান্বিত জমিদার হরনারায়ণ চৌধুরীর শাসনকাল। একবার নিমন্ত্রন পেয়ে, ভরা শ্রাবণের বর্ষারাতে, জমিদারর বাগানবাড়িতে যেতে হয়েছিল বঙ্কিমচন্দকে। সেরাতেই জানালার বাইরে, মূহুর্তের জন্য, শ্বেতবসনা এক তরুণীকে দেখতে পান তিনি।
২ সমুদ্র লাগোয়া চাঁদপুর বাংলোর বাইরে দেখেছিলেন রক্তবস্ত্র পরিহিত, দাড়ি-গোঁফে মুখমণ্ডল ঢাকা, ভীষণ-দর্শন এক কাপালিককে।
৩ একবার একটি মামলার তদন্তে সমুদ্র তীরের দরিয়াপুর গ্রামে যেতে হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্রকে। সেখানে উদ্দাম উর্মিমালা শোভিত বিশাল সমুদ্র, ঘণ ঝাউ জঙ্গলে ঢাকা সুদূর বিস্তারী জনহীন বালিয়াড়ী এবং একদল কাপালিকের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল তাঁর।

কাপালিকদের কাছে জেনেছিলেন, ভিনধর্মী পাঠানদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে, ইষ্টদেবী কালিকাকে নিয়ে এই নির্জন এলাকায় পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।
এই তিন ঘটনার পটভূমিকার উপর উপন্যাসের কাহিনী গড়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র।
মহকুমার সদর দপ্তর আজ এখন কাঁথিতে। শীপুর পরগণার নেগুয়া গ্রামের গায়ে আজ আর মহকুমার তকমা নাই। নাই সেই বাংলোবাড়িটিও, যেখানে সাহিত্য সম্রাট বাস করতেন।
নাই কাছারিবাড়ি, থানাবাড়ি, পাইক-বরকন্দাজদের ঘরবসত, মাইলসূচক সেকালের কাষ্ঠফলকগুলি। কিছুই আজ আর নাই।

তবে, আছে সাহিত্য সম্রাটের নামটি নিয়ে এলাকাবাসীর সগর্ব স্মৃতিচারণ। আছে প্রাচীন ঐতিহ্যে মোড়া নেগুয়া নামের গ্রামটিও।
আর আছে একটি মন্দির, যেটি তৈরি হয়েছিল বঙ্কিম চন্দ্র নেগুয়ায় আসবারও কিছু বছর আগে। তাঁর সেদিনের বাংলোর অদূরেই মন্দিরটি অবস্থিত। প্রস্তর-স্বাক্ষর সেই প্রাচীন মন্দিরের সালতামামী আজকের জার্নালে।

নেগুয়া গ্রামে অদূরের ওডিশা রাজ্য থেকে আসা, ‘দাস মহাপাত্র’ পদবীর, দুটি বনেদি ‘করন’ বংশের বাস ছিল। জমিদারী ছিল হরনারায়ণ দাস মহাপাত্রের বংশের। রাজ সরকার থেকে ‘চৌধুরী’ খেতাব পেয়েছিল এই বংশ। বলা হয়, হরনারায়ণই তাঁদের জমিদারবাড়ীর কাছেই সিদ্ধেশ্বর শিবের একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
পরবর্তীকালে, জমিদারের বহু সম্পত্তি বিক্রি হয়ে গেলে, অপর করনবংশের রঘুনাথ দাস মহাপাত্র নেগুয়া-র চৌধুরীদের এবং বেতা-র জমিদার পাহাড়ীদের সম্পত্তি কিনে, নিজে একটি জমিদারী গড়েছিলেন। সিদ্ধেশর শিবের এই মন্দিরটি তখন তাঁর অধিকারে এসেছিল। আজও তাঁর বংশধরগণ একটি ট্রাস্ট গঠন করে, দেবতার সেবাপূজা এবং মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছেন।

ইটের তৈরি পূর্বমুখী মন্দিরটি শিখর-দেউল রীতিতে নির্মিত হয়েছে। পাদপীঠ সামান্য উঁচু। বিমান বা মূল মন্দিরটিতে সপ্তরথ বিভাজন করা।
সামনে চার-দ্বারী জগমোহনটির গঠনশৈলী একটু বিশিষ্ট রীতির। দালান-রীতির কক্ষ। কলিঙ্গধারা অনুসরণ করে, সেই কক্ষের মাথায় পীঢ়-রীতির থাক-কাটা ছাউনি। জগমোহনের কার্নিশটি ভূমির সমান্তরালে সরলরৈখিক।

দুটি সৌধেরই শীর্ষক অংশ বেশ সুদর্শন। জগমোহনের শীর্ষক অংশে, বেঁকির দু’পাশে, দুটি ব্যাদিত-বদন লম্ফমান সিংহ ছাড়া, অন্য কোনও অলঙ্করণ নাই।
সাক্ষাৎকারঃ সর্বশ্রী রবি নারায়ণ দাশ (পুরোহিত), বিশ্বনাথ দাস মহাপাত্র—নেগুয়া। অবনী মোহন দাস মহাপাত্র—মেদিনীপুর শহর।                     পথনির্দেশঃ মেদিনীপুর-খড়গপুর রাস্তায় এগরা থেকে পানিপারুল হয়ে রামনগরমুখী রাস্তায় নেগুয়া গ্রাম।

- Advertisement -
Latest news
Related news