Saturday, July 27, 2024

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল-১৪৭।। চিন্ময় দাশ

- Advertisement -spot_imgspot_img

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল
চিন্ময় দাশ
রঘুনাথ মন্দির,কঁয়তা- দে বংশ (খড়গপুর গ্রামীন) নিজের ভাগ্য নিজের হাতে গড়ে নেবেন— এই অভীপ্সায়, এক উদ্যমী পুরুষ সোজা গিয়ে হাজির হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ নবাবের দরবারে। সেখান থেকে ফিরেছিলেন গঙ্গা আর দামোদর—দুই নদী অতিক্রম করে। হাতে নবাবের শীল মোহর যুক্ত পাঞ্জা।
সেসময় মেদিনীপুর জেলা সরকার জলেশ্বরের অধীন। খান্দার পরগণার কঁয়তা (বর্তমান খড়গপুর থানার অন্তর্গত) নামের এক গ্রামে এসে থেমেছিল তাঁর উড়ান। এখানেই জমিদারী প্রতিষ্ঠাকরে, স্থায়ী বসবাস শুরু করেছিলেন তিনি।
সেই উদ্যমী পুরুষকারের নাম ছিল—ভূপাল চন্দ্র দে। ভূপাল চন্দ্রের জমিদারী প্রতিষ্ঠার সঠিক সাল-তারিখ তাঁর বংশধরগণেরও জানা নাই। তবে, তাঁর জমিদারী মহাল ছড়িয়ে ছিল কঁয়তা, দুজিপুর, ঝিলিঙ্গা, মহিষগোট, পলসা, চহত, মণিনাথপুর, সাঙ্গাড়, ঠাকুরচক ইত্যাদি মৌজায়।
মেদিনীপুর জেলা জুড়ে সেসময় গোড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের গভীর স্রোত প্রবহমান। ভূপাল চন্দ্রও সেই স্রোতে ভেসেছিলেন। ভগবান বিষ্ণুকে আরাধ্য করেছিলেন। পূজার্চনার প্রচলন করেছিলেন ‘রঘুনাথ’ নামের শালগ্রাম শিলা প্রতিষ্ঠা করে। রঘুনাথকেই কুলদেবতা মেনেছিল দে বংশ।
প্রতিষ্ঠা-লিপি অনুসারে, ১৭২৬ শকাব্দ বা ইং ১৮০৪ সালে, রঘুনাথের মন্দিরটি স্থাপিত হয়েছিল। বছর পাঁচেক পূর্বে সংস্কারকাজ হয়েছে মন্দিরের। সেসময় বহু রূপান্তর ঘটে গিয়েছে সৌধটির।
যাই হোক, ইটের তৈরি দক্ষিণমুখী পঞ্চরত্ন রীতির মন্দির। পাদপীঠ অংশটি স্বল্পোচ্চ।
সামনে ‘দরুণ-রীতি’র খিলানের তিন-দুয়ারী অলিন্দ। গর্ভগৃহটি একদ্বারী। সেটির সিলিং হয়েছে চারটি পাশ-খিলানের মাথায় গম্বুজ স্থাপন করে।
মন্দিরের মাথায় রত্নগুলি শিখর রীতির। প্রতিটি রত্নে রথ-বিভাজন করা। কেন্দ্রীয় রত্নে পঞ্চ-রথ। কোণের রত্নগুলিতে ত্রি-রথ বিভাজন করা।
সামনের দেওয়ালে টেরাকোটা অলঙ্করণ এই মন্দিরের গৌরব। কার্ণিশের নীচ বরাবর দুই সারি। তিনটি দ্বারপথের মাথায় তিনটি বড় প্রস্থে কয়েকটি প্যানেলে ফলকগুলি রচিত হয়েছে।
মুখ্য ফলকগুলিতে মোটিফ হিসাবে আছেঃ রামায়ণ থেকে জটায়ুর যুদ্ধ, রাম-রাবণের যুদ্ধ। কৃষ্ণকথা থেকে গোপিনীদের যমুনা পার, শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা গোপিনীদের বস্ত্রহরণ। পুরাণ থেকে নিজ নিজ বাহনে আরুঢ় ব্রহ্মা- বিষ্ণু-মহেশ্বর, পুত্রকন্যা সহ দশভূজা দুর্গা ইত্যাদি আরও অনেক ফলক। সংস্কার কাজে মন্দিরের গড়নে কিছু রূপান্তর ঘটেছে। মন্দিরের পশ্চিমের দেওয়ালে একটি ‘মিথুন ফলক’ ছিল। সেটি মুছে ফেলা হয়েছে। তবে, অন্যান্য টেরাকোটা ফলকগুলি যত্ন করে রক্ষা করেছেন সেবাইত বংশ।
সাক্ষাৎকারঃ সর্বশ্রী বীরেন্দ্র নাথ দে, বিনয় রঞ্জন দে, বিজয় দে, অম্বিকা প্রসাদ দে, আশীষ দে, বরুণ দে, রাজীব দে, বিশ্বজিত দে—কঁয়তা। শ্রী তথাগত দে—বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন, বোলপুর।
সমীক্ষা-সঙ্গীঃ শ্রী সুব্রত দাস—দুজিপুর।
পথ-নির্দেশঃ খড়্গপুর থেকে জামনাগামী রাস্তার দুজিপুর থেকে দক্ষিণে এবং খড়গপুর-বালেশ্বর হাইওয়ের মকরামপুর থেকে মদনমোহন চক হয়ে উত্তরে– কঁয়তা গ্রাম।

- Advertisement -
Latest news
Related news