Saturday, July 27, 2024

Temple Tell: জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল- ১৩৯ ।। চিন্ময় দাশ

- Advertisement -spot_imgspot_img

জীর্ণ মন্দিরের জার্ণাল— ১৩৯                                                                                           চিন্ময় দাশ                      সীতারাম মন্দির, আমোদপুর (খড়গপুর)

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্বে নিম্নবাংলায় বৃহত্তম জমিদারীটি ছিল বর্ধমান রাজংশের। সেই জেলার খণ্ডঘোষের পাল পদবীর একটি বনেদিবংশ ছিল বর্ধমানের একজন পত্তনিদার। সেই বংশের জনৈক বাঞ্ছারাম পাল মেদিনীপুর জেলার ঢেকিয়াবাজার পরগণায় চলে এসেছিলেন।
এখানে একটি জমিদারী গড়ে উঠেছিল তাঁর হাতে। তিন ভাবে জমি পেয়েছিলেন তিনি। ১. পালবংশের জমিদারীর মেদিনীপুর মহালের ভার পেয়েছিলেন।
২. নাড়াজোল রাজারা ছিলেন সেকালে মেদিনীপুর জেলার একটি বিখ্যাত রাজবংশ। বাঞ্ছারাম জমিদারী বাড়িয়েছিলেন নাড়াজোল রাজার কাছ থেকে কিছু সম্পত্তি বন্দোবস্ত নিয়ে।
৩. এছাড়া, নাড়াজোল রাজার অধীনে ঢেকিয়াবাজার পরগণার পত্তনিদার ছিলেন বসন্তপুরের অধিবাসী হৃদয়নাথ রাউৎ। সেই বংশের সারদা চরণ রাউৎ-এর কাছ থেকেও কিছু জমি বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন বাঞ্ছারাম।
এভাবে মোটামুটি বড় মাপেরই একটি জমিদারী গড়ে উঠেছিল বাঞ্ছারামের হাতে। সেসময়, মেদিনীপুর জেলা জুড়ে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রবল জোয়ার বয়ে চলেছে। বাঞ্ছারামও অবগাহন করেছিলেন সেই স্রোতে। ভগবান বিষ্ণুকে আরাধ্য করেছিলেন। ‘সীতারাম’ নামিত একটি শালগ্রাম প্রতিষ্ঠা করে, একটি মন্দির গড়েছিলেন বাস্তুর ভিতরেই।


ইটের তৈরি দক্ষিণমুখী মন্দিরটি পঞ্চ-রত্ন রীতিতে নির্মিত হয়েছে। পাদপীঠ বেশ উঁচু। সামনে খিলান-রীতির তিনটি দ্বারযুক্ত ছোট একটি অলিন্দ। পিছনের এক-দ্বারী গর্ভগৃহটির বায়ুকোণে একটি সিঁড়িও রচিত আছে।
অলিন্দের সিলিং হয়েছে ‘টানা-খিলান’ করে। গর্ভগৃহে বড় আকারের দুই স্তর খিলানের মাথায় গম্বুজের সিলিং।
কলিঙ্গশৈলীর প্রভাবে রত্নগুলির বেদী, বাঢ় ও গণ্ডী জুড়ে রথভাগ করা হয়েছে। কোণের রত্নগুলিতে ত্রি-রথ এবং কেন্দ্রীয় রত্নে পঞ্চ-রথ বিভাজন। প্রতিটি রথের গণ্ডী অংশে ভূমির সমান্তরালে পীঢ়-রীতিতে থাক কাটা। এগুলির কারণে, বেশ সুষমাময় হয়ে উঠেছে মন্দিরটি।
পাঁচটি রত্নের শীর্ষক অংশে আমলক, কলস ও বিষ্ণুচক্র রচিত।

সামনের দেওয়ালের টেরাকোটা ফলকগুলি হোল এই মন্দিরের গৌরব। ফলক সজ্জা করা হয়েছে দুই কোণাচ অংশে দুটি খাড়া সারিতে, কার্ণিশের নীচে সমান্তরাল দুটি সারিতে এবং তিনটি দ্বারপথের মাথায় তিনটি বড় প্রস্থে।
ফলকের মোটিফ নেওয়া হয়েছে রামায়ণ, কৃষ্ণলীলা, পুরাণ কাহিনী ইতাদি থেকে। সামাজিক বিষয়ও স্থান পেয়েছে সেখানে। রামায়ণ কাহিনী থেকে সূর্পনখার নাসিকা ছেদন, মায়ামৃগ বধ, জটায়ু পক্ষীর রাবণের রথ আক্রমণ ইত্যাদি। কৃষ্ণকথা থেকে কালীয় দমন, গোপিনীদের বস্ত্রহরণ ইত্যাদি রূপায়িত হয়েছে। কালীয় নাগকে প্রাণে না মেরে ফেলার জন্য, তাঁর পত্নীগণ কৃষ্ণের কাছে করুণ প্রার্থনা করেছিল। দুই নাগিনীও মুর্ত হয়েছে কালীয় দমন ফলকটিতে। হর-পার্বতী, গণেশ-জননী, দশভূজা—একটি ব্লকে তিন রূপে রূপায়িত হয়েছেন দেবী দুর্গা। কার্ণিশের নীচে গৌরাঙ্গ ও নিত্যানন্দ-এর পৃথক ফলক দুটি বেশ উল্লেখযোগ্য।
মন্দিরের সংস্কার হলেও, ফলক রক্ষায় পালবংশ যে বিশেষ যত্নবান ছিলেন, সেটি বেশ অনুধাবন করা যায়।
মন্দিরের লাগোয়া পশ্চিমে একটি আট-চালা শিবমন্দির আছে। পালবংশের কাশীনাথ পাল কাশী থেকে শিবলিঙ্গ এনে এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
সাক্ষাৎকারঃ সর্বশ্রী গৌতম পাল, প্রিয়ব্রত পাল, নীলাদ্রি পাল—আমোদপুর।
পথনির্দেশঃ মুম্বাই রোডের বসন্তপুর থেকে উত্তর-পূর্বমুখী রাস্তায় ৭ কিমি দূরে আমোদপুর গ্রাম।

- Advertisement -
Latest news
Related news