নিজস্ব সংবাদদাতা: বছরের প্রথম দিনেই জন বিক্ষোভে উত্তাল পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর শহর। পথ অবরোধ ও ফাঁড়ি ঘেরাও করে চলেছে ব্যাপক বিক্ষোভ। প্রায় ৭০০/৭৫০ নারী পুরুষ ফাঁড়ি ঘিরে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

ফাঁড়ির (Police Outpost) ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের শাস্তির দাবি জানিয়ে বিকাল ৪টা থেকে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ফাঁড়ির সামনে থাকা কিছু জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে বলেও জানা গিয়েছে। বিক্ষোভের জেরে ফাঁড়ির ভেতরে আটকে পড়েছেন পুলিশ কর্মীরা। ঘটনাস্থলে রাত্রে গিয়ে পৌঁছান খড়গপুর শহর বিধায়ক (MLA Kharagpur) হিরণ চট্টোপাধ্যায় (Hiran Chatterjee)।
পুলিশের দাবি, শুক্রবার অনেক এক যুবক কৌশল্যা ফাঁড়ির সামনে নাকা চেকিং পয়েন্টে রাতে মত্ত অবস্থায় অপ্রকৃতস্থ আচরণ করছিল। পুলিশ তাকে আটকাতে গেলে পুলিশকেও আজেবাজে কথা বলে। এরপরই তাকে সামান্য মারধর করে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাও করায় পুলিশ।
ফাঁড়িতে বসে আলোচনার পর সমস্যা মিটেও যায়। যুবককে মাংস ভাত খাওয়ানো হয় ফাঁড়িতে। এরপর বিকাল বেলায় ফের ওই ঘটনা নিয়ে কিছু মানুষ জন প্রথমে ফাঁড়িতে বিক্ষোভ দেখায় এবং কৌশল্যা-নারায়নগড় রাজ্য সড়ক অবরোধ শুরু করে। পুলিশের অনুরোধে অবরোধ প্রত্যাহার করা হলেও বর্তমানে ফাঁড়ি ঘিরে রয়েছে জনতা।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছেন শুক্রবার রাতে কৌশল্যা ফাঁড়ির সামনে নাকা চেকিং চলছিল পুলিশের। সেই সময় পার্শ্ববর্তী বারোবেটিয়া এলাকার এক যুবক ওই চেকিংস্থল হেঁটে যাচ্ছিলেন। পুলিশ ওই যুবককে আটকায়। সে নাকা চেকিংয়ের ছবি তুলছে এই অপরাধে তাঁকে ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়।
মারের চোটে ওই যুবকের পিঠে, পাছায় কালশিটে দাগ পড়ে গিয়েছে। এরপর কোনও রকম চিকিৎসা না করিয়ে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই যুবককে নিয়ে শনিবার সকালে ফাঁড়িতে গিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর পর পুলিশ ওই যুবককে নিয়ে হাসপাতালে যায় এবং চিকিৎসা করিয়ে আনে।
পুলিশের হাতে নিগৃহীত যুবকের নাম অভিজিৎ পড়িয়া। তাঁর বাড়ি বারবেটিয়ার একেবারে শেষ প্রান্তে বলে জানা গেছে। অভিজিৎ গ্যাসকাটিংয়ের কাজ করেন। অভিজিৎ নিজে বলেছেন, ‘ বছরের শেষদিন রাত সাড়ে ১০টার পরে আমি কৌশল্যা থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। ওই সময় প্রতিদিনের মতই নাকা চেকিং করছিল পুলিশ। এদিক ওদিক বেশকিছু গাড়িও দাঁড়িয়েছিল।
এটা প্রতিদিনের ঘটনা বলে আমি কোনও দিকে না তাকিয়েই সোজা পেরিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার হাতে স্মার্টফোন ছিল। জায়গাটা পেরুনোর পরই হঠাৎ পুলিশ আমাকে ডাকে এবং দাবি করে আমি নাকি নাকা চেকিংয়ের ছবি তুলেছি। আমি ঘটনা অস্বীকার করলে এক পুলিশ কর্মী আমার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি নেয় এবং ঘেঁটে দেখার পর কিছু না পেয়ে ফোনটি আছড়ে ভেঙে ফেলে।’
অভিজিৎ আরও দাবি করেছেন, ‘এরপরেই পুলিশকর্মীরা আমাকে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এবং ফাইবার ব্যাটন দিয়ে বেধড়ক মারতে থাকে। অন্ততঃ ৪০বার আমাকে মারা হয়েছে। মারের চোটে আমার জ্ঞান হারাই আমি। ওই সময় আমার চোখে লেবুর রস দিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয় যে আমি সত্যি সত্যি জ্ঞান হারিয়েছি নাকি অভিনয় করছি।
জ্ঞান ফেরার পর আমি টের পাই যে আমার চোখে লেবুর রস দেওয়া হয়েছিল। আজ সকালে আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে নিয়ে ফাঁড়িতে এলে পুলিশ আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। যে পুলিশ রাতে মত্তের মত আচরন করেছিল সেই পুলিশকে দেখা যায় অস্বাভাবিক ভালো আচরণ করতে।’
ফাঁড়ি ঘেরাওকারী এক ব্যক্তি বলেন , অভিজিৎ যদি মদ্যপ বা মাতাল হত তাহলে আমরা এত মানুষ পুলিশের গুণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আসতামনা। দ্বিতীয়ত: কেউ মাতাল হলে পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করাতে পারত। এমন নির্মমভাবে প্রায় পিঠ ফাটিয়ে দেওয়ার মত মারার অধিকার কে দিল? কেন ওই মোবাইল ফোন ভাঙা হল? ছবি তুললেই বা কাউকে হেনস্থা করা হবে কেন? নাকার নামে পুলিশের তোলাবাজি ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়েই কী পুলিশের এরকম আচরণ? পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রনকৌশল তৈরি করছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর কথা উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের।
রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছান খড়গপুর শহরের বিধায়ক তথা অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়। নিগৃহীত যুবকের সাথে কথা বলেন তিনি। হিরণ প্রশ্ন তোলেন , ‘এই ফাঁড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই কেন? ফাঁড়িতে কে কী করছে? কারা আসছে যাচ্ছে তার রেকর্ড থাকবে কী করে? পুলিশের ফাঁড়িতেই যদি সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকে তবে শহরের বাকি অংশে কেমন অবস্থা সহজেই বোঝা যাচ্ছে।’