নিজস্ব সংবাদদাতা: স্কুল সার্ভিস কমিশন সুপারিশ করেই নি অথচ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তাঁদের নিয়োগ করেছে আর অর্থ দপ্তর তাদের বেতনও চালু করে দিয়েছে! রাজ্যের স্কুলগুলিতে নিয়োগ নিয়ে কী পরিমাণ দুর্নীতি চলছে তারই চিত্র এবার পরিষ্কার হয়ে গেল হাইকোর্টের মামলায়।

এদিকে কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানিতে একের পর এক কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর ল্যাজেগোবরে অবস্থা রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের। আইনের প্যাঁচে পড়ে আদালতকে তারা জানিয়ে দিয়েছে তাঁদের তরফ থেকে কোনও সুপারিশ করা হয়নি। যদিও মধ্য শিক্ষা পর্ষদের পাল্টা যুক্তি, কমিশনের সুপারিশেই নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী স্কুলের শিক্ষক থেকে করনিক অথবা পিওন সমস্ত নিয়োগের পরীক্ষা নেয় স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং তাঁদের সুপারিশ ক্রমেই নিয়োগ দেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অথবা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। বেতনের অর্থ সংস্থান করে অর্থ দপ্তর।
একটি মামলায় ২৫জন গ্রূপ ডি কর্মীর নিয়োগ বেআইনি ভাবে হয়েছে বলে দাবি করে হাইকোর্টে মামলা হয়। বুধবার এই মামলার এক শুনানিতে আদালত তীব্র ভর্ৎসনা করেন কমিশনের সচিবকে। কমিশনকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি সিবিআই দিয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্ত করানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বিচারপতি। এরপরই কমিশন জানিয়ে দেন এই নিয়োগ তাঁদের সুপারিশে নয়। প্রশ্ন উঠেছে তাঁরা যদি সুপারিশ না করেন তা’হলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিয়োগ করল কী ভাবে? তাহলে কী দুর্নীতি পর্ষদে?
স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি-মামলায় বুধবার হাইকোর্টে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন প্যানেলের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও নিয়োগ হল কী ভাবে ? এদিন ভরা এজলাসে দাঁড় করিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-র সচিবের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তোলে কলকাতা হাইকোর্ট। তারপরই এই নিয়োগ সংক্রান্ত ২৫ জন কর্মীর বেতন বন্ধ করার নির্দেশও দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ডিআই-কে এই নির্দেশ কার্যকর করার কথা জানান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এরপরই বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, ২৫জন নয় বেআইনি নিয়োগ হয়েছে আরও ৫০০ জনের।
দীর্ঘ শুনানি শেষে নিয়োগকারীদের নথি অবিলম্বে সংরক্ষণের পাশাপাশি ওই ২৫জনের বেতনও বন্ধ করার নির্দেশ দেন আদালত। শুধু তাই নয়, নিয়োগে পত্রে যাঁদের আদেশে অনুমোদন করা হয়েছিল সেই ২৫ এবং ৫০০জনের নাম, ঠিকানা জমা দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। অর্থাৎ মামলায় যুক্ত হল ৫০০ জন। এই সমস্ত নিয়োগে বেনিয়ম হয়েছে।
এদিন শুনানিতে আদালত পর্যবেক্ষণে জানান, ভবিষ্যতে এর দায় ভার নিতে হবে SSC-কেই। অন্যদিকে এই মামলাতে
বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশনকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত এদিন নির্দেশে আরও জানায় যে, আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে ৫০০জনের তালিকা (যাঁদের নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে) বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন কাছে জমা দিতে হবে।
সেই তালিকা অনুযায়ী বোর্ড অফ সেকেন্ডারি সভাপতিকে সোমবার সাড়ে তিনটের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে। পাশাপাশি ২৫+ ৫০০ নিয়োগকারী নিযুক্ত গ্রূপ ডি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত কাগজ পত্র মুখ বন্ধ খামে জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খাম বন্দি সমস্ত নথি সিল করে রাখতো হবে। আগামীদিনে তদন্তের জন্য কাজে লাগবে বলেও নির্দেশে জানান বিচারপতি।
এই মামলার শুনানিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়, কী ভাবে ওই ২৫ জনের নিয়োগ হল, তার ব্যাখ্যা নেই তাদের কাছে। এমনকি নিয়োগ নিয়ে তদন্তের দাবিও জানায় কমিশন। এরপরই গত ২ বছর ধরে চাকরি করে আসা ২৫ জনের বেতন বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এবার এই মামলায় ৫০০ জন যুক্ত হওয়ায় নয়া মোড় নিল। বিকাশবাবু জানিয়েছেন, এটা বড়সড় দুর্নীতি তাই ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজন।