নিজস্ব সংবাদদাতা: বিধানসভা নির্বাচন হয়ে গেছে ৭ মাসেরও বেশি সময় আগে। মন্ত্রীসভা গঠনের পর শেষ হয়ে গেছে সমস্ত উপনির্বাচন কিন্তু মিটছেনা রাজনৈতিক হিংসা। এবার আরও এক নির্বাচনী হিংসার বলি হলেন এক বিজেপি নেতা। তেমনটাই অভিযোগ ওই নেতার পরিবারের। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের ভবগানপুর থানা এলাকায়। অভিযোগ এক জায়গা থেকে ভাইফোঁটার নিমন্ত্রণ রক্ষা করে ফেরার পথে ভগবানপুর থানার মহম্মদপুরে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুন করা হয়েছে মাত্র ৩৬ বছর বয়সী এক বিজেপি নেতাকে।

ঘটনাটি ঘটেছে ভাইফোঁটার রাতে নিহতের বাড়ি থেকে সামান্য কিছুটা দুরেই। পুলিশ জানিয়েছে শনিবার রাতে মহম্মদপুরের নদী পাড় থেকে ওই ব্যাক্তির ক্ষত বিক্ষত দেহ উদ্ধার। তাঁর শরীরে যেমন কোপানোর চিহ্ন ছিল তেমনই শরীরময় কালশিটে দাগ লক্ষ্য করা গেছে। যা থেকে অনুমান কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ওই যুবককে। মহম্মদপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দেড়িয়াদিঘিতে একদা দোর্দন্ডপ্রতাপ তৃনমূল নেতা নিহত নান্টু প্রধানের কলেজের কাছে কেলেঘাই নদীপাড় থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় চন্দন মাইতি ওরফে শম্ভুকে। আহত মহম্মদপুর শক্তিকেন্দ্রের প্রমুখ চন্দনকে। উদ্ধারের পর তাঁকে ভগবানপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়ে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ভোর রাতে মৃত্যু হয়।
পূর্ব মেদিনীপুর বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনে ভগবানপুর বিজেপির হাতে আসার পর থেকেই ভগবানপুরের বিভিন্ন জায়গায় তাদের নেতা কর্মীদের খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। চন্দনকে এর আগেও একাধিকবার খুনের উদ্দেশ্য নিয়ে হামলার মুখে পড়তে হয়েছিল। এই ঘটনা তৃনমূলের দুষ্কৃতিরাই ঘটিয়েছে বলে তাদের দাবি। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েকের অভিযোগ, বিজেপি করার অপরাধে এই খুন। দলীয় কর্মী খুনের প্রতিবাদে বিজেপি-র তরফে সোমবার সকাল৬ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভগবানপুর বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনায় তৃনমূলের দিকেই আগুন তুলেছেন নিহতের পরিবারও। চন্দনের বাবা প্রভাত মাইতি বলেছেন, ‘আমার ছেলে বিজেপি করত বলেই তাঁকে পিটিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। তৃনমূল ছাড়া আর কে এই কাজ করবে?’ চন্দনের খুড়তুতো ভাই গোপাল বলেন, ‘ ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে এক বন্ধুর বাড়িতে নেমন্তন্ন ছিল। খাওয়া দাওয়া করে ফিরছিল সে। রাস্তা থেকেই তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। তৃনমূলের দুষ্কৃতিদের কাজ এটা। এর আগে দু’দুবার প্রাণঘাতী হামলা হয়েছিল ওর ওপর। সেই দু’বার বেঁচে গেলেও এবার আর পারলনা। রীতিমতো খোঁজ খবর নিয়ে আঁটঘাট বেঁধেই এই কাজ করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে একাধারে পেটানো ও কোপানো হয়েছে।’
যদিও খুনের সঙ্গে তৃনমূল জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন স্থানীয় তৃনমূল নেতৃত্ব। ভগবানপুর ব্লকতৃণমূলের সভাপতি অভিজিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘ ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ নেই বলেই আমরা খবর পাচ্ছি। স্থানীয়ভাবে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছি ওখানে একটি গ্রামীন সমস্যা ছিল সেখান থেকেই ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরেই এই ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশ তদন্ত করলেই পুরোটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমরাও চাই প্রকৃত দোষির সাজা হোক। বিজেপি নিজের স্বভাবজাত চরিত্র থেকেই বিষয়টির মধ্যে তৃনমূলকে যুক্ত করে দিতে চাইছে।’ এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশি টহল চলছে। ওই বিজেপি নেতার স্ত্রী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন এবং তাঁদের একটি মাত্র নাবালক সন্তান রয়েছে।