
নিজস্ব সংবাদদাতা: কালীপূজার পর দেওয়ালির দিন শব্দতান্ডব চলছে খড়গপুর শহর জুড়ে। আদালতের রায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই দেদার বাজি উল্লাস চলছে ইন্দা, খরিদা, গোলবাজার, মালঞ্চ, নিমপুরা, তালবাগিচা, রবীন্দ্রপল্লী, প্রেমবাজারে। সন্ধ্যা শুরু হতে না হতেই যে শব্দবাজির তান্ডব শুরু হয়েছে রাত ৯টা পেরিয়েও তা অব্যাহত। রাস্তার পশুরা কোথায় লুকাবে যেমন খুঁজে পাচ্ছেনা তেমনি গৃহপালিত কুকুরদের বেড়ালদেরও অবস্থা খারাপ। ঘরের কোন, খাটের তলা খুঁজে বেড়াচ্ছে করুন মুখে। আর এরই মধ্যে খোঁজ মিলল এক অসহায়, মারাত্মক আহত কুকুরের যার একটি পা থাইয়ের কাছ থেকে সম্পূর্ণ উড়ে গিয়েছে, উড়ে গিয়েছে ল্যাজের অর্ধেক।
যন্ত্রনাকাতর কুকুরটিকে উদ্ধার করে তার শুশ্রূষা শুরু করেছেন স্ট্রিট পজ বা STREET PAWS নামে একটি পশুপ্রেমী সংগঠন। স্ট্রিট পজ নামক খড়গপুরের ওই সংগঠনটির কর্মকর্তা কমলজিৎ সিং জানিয়েছেন, ‘ঘটনাটি ঘটেছে খরিদা গুরদুয়ারের সামনের এলাকায়। সম্ভবতঃ ৩দিন আগে এই বর্বরতা হয়েছে। ছেলে কুকুরটির বাঁ পা থাই থেকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, উড়ে গেছে ল্যাজের ৭৫ ভাগ। বাঁ চোখের নিচে গভীর ক্ষত রয়েছে।’
কমলজিৎ আরও বলেন, ‘কুকুরটিকে মারাত্মক জখম অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ওখানকার কিছু যুবক আমাকে খবর দেন। কালীপুজোর দিন ওকে আমরা ট্রেস করতে পারি। ওর ল্যাজে পোকা হয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার ওকে কিছুটা ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু অপারেশন ছাড়া ওকে বাঁচানো সম্ভব নয় বলে আমাদের একজন ভেটনারের সাহায্য নিতে হয়। শুক্রবার দুপুরে অপারেশন করা হয়েছে কুকুরটির।’
এই অপারেশন করেছেন খড়গপুরের একজন পরিচিত ভেটনার অসীম দে। KGP Bengal কে অসীম জানান, ‘ প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে জোরালো বাজিতেই উড়ে গিয়েছে পা টি। যেভাবে হাড় আলাদা হয়ে গিয়েছিল, শিরা উপশিরা, টিস্যু গুলি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে বিস্ফোরণ ছাড়া এভাবে চামড়া ছিঁড়ে যেতে পারেনা। তার ওপর যন্ত্রনায় প্রায় মৃত্যুর মুখে চলে গিয়েছিল। কমলজিৎদের সঙ্গে নিয়ে আজ দুপুরে গুরদুয়ারের পেছনে একটি পাড়ায় কুকুরটির অপারেশন করা হয়েছে। আ্যনাস্থেসিয়ার প্রভাব কাটিয়ে আপাততঃ স্থিতিশীল রয়েছে। রবিবার থেকে আমরা আ্যন্টিবায়োটিক চালু করব। আশা করছি কুকুরটি বেঁচে যাবে।’
স্থানীয় কিছু যুবক জানিয়েছেন, কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে জানিনা কিন্তু কুকুরটির জখম দেখে আমাদের মনে হচ্ছে হয় ওর পায়ের সঙ্গে বাজি বেঁধে দেওয়া হয়েছিল অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় কিংবা তার আস্তানায় বাজিটি এমন ভাবে ফাটানো হয়েছে যাতে ও পালানোর সুযোগই পায়নি।
ওই যুবকরা আরও বলেছেন, আমাদের খুবই লজ্জা লাগছে যে আমাদের এলাকায় এটা হয়েছে। কমলজিৎ, অসীম এবং ওই যুবকরা বারবার শহরবাসীর উদ্দেশ্যে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, আনন্দ করুন কিন্তু আমাদের আনন্দের শিকার যেন নিরীহ পশুরা না হয়। এই লজ্জা সমগ্র খড়গপুরবাসীর লজ্জা।