নিজস্ব সংবাদদাতা: সকাল ৯টা পর্যন্ত ঝকঝকে আকাশ দ্রুত বদলে যাচ্ছে কম আলোর আকাশে।খড়গপুর মেদিনীপুর আর ঝাড়গ্রামের আকাশের দখল নিচ্ছে কালো মেঘ। অনেকটাই দম মেরে আছে বাতাস, উধাও হয়ে গেছে ঠান্ডা আমেজ। সব মিলিয়ে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। স্পষ্ট করে বললে হয়ত আর ১২ ঘণ্টা। তার মধ্যেই বঙ্গোপসাগর উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’।

পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের গ্রামীন অংশে পাকা ধান কেটে ঘরে ওঠানোর তোড়জোড় চলছে। যা করতে হবে শুক্রবারের মধ্যেই। তাই ধান কাটার মজুরের অভাব দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মেশিন নামিয়েছেন ধান কাটতে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপ শনিবার সকালে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে উত্তর–অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশা উপকূলের মাঝামাঝি কোনও জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে। ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগের ঝড় এবং দমকা হাওয়া। এরপর উত্তর এবং উত্তর–পূর্ব অভিমুখে বাঁক নিতে পারে ‘জাওয়াদ’। ধান আর সবজির দফারফা হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকরা।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের অদূরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ বলয় বৃহস্পতিবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছিল। গত ছ’ঘণ্টায় তা গড়ে ৩২ কিলোমিটার গতিবেগে পূর্ব উপকূলের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে গভীর নিম্নচাপটির অবস্থান ছিল বঙ্গোপসাগরের গভীরে। অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে ৫৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্বে, ওড়িশার গোপালপুর সৈকত থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্বে এবং ওড়িশার পারাদ্বীপ বন্দর থেকে ৭৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমে।
আরও পড়ুন: ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে রুখতে কার্যকরী
‘জাওয়াদ’ এর জেরে আগামী শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া এবং বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। দুই উপকূলবর্তী জেলা পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঝড়েরও সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে ৩০–৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে পশ্চিম মেদিনীপুরে। উপকূলের বাকি জেলায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা। শনিবার হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং ঝাড়গ্রামেও বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে ৩০–৪০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হওয়া।
রবিবার বৃষ্টি আরও বাড়বে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলবে। তবে কলকাতা–সহ হাওড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। রবিবার ৪০–৫০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া। এই পরিস্থিতিতে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া সমস্ত ট্রলার, বোট এবং নৌকাগুলিকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। মৎস্যজীবীদের দ্রুত তীরে ফিরতে বলা হয়েছে। ঝড়বৃষ্টিতে চাষের যাতে ক্ষতি না হয় সেই কারণে রবি শস্য দ্রুত তুলে নেওয়ার জন্যও প্রচার চালানো হচ্ছে। উপকূলবর্তী ব্লক এবং পুরসভাগুলিতে মোটরচালিত করাত, দড়ি, গামবুট, হেলমেট, টর্চ ইত্যাদি সামগ্রী বিলি করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF)।