নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর যখন ডুবতে থাকে তখন পৌর প্রশাসন নাক ডাকিয়ে ঘুমায় আর ঘুম ভাঙলে কালো ত্রিপল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ফটোসেশন করার জন্য। রবিবার খড়গপুর শহরের গন কনভেনশনে এমনই বলতে শোনা গেল উপস্থিত শ্রোতা, দর্শকদের।

শহরের নাগরিকরা জানিয়েছেন, এমন অপদার্থ পৌর প্রশাসন খড়গপুর শহর আগে কখনও দেখেনি। উল্লেখ্য এই মরশুমে অন্ততঃ তিনবার বৃষ্টির জলে প্লাবিত হয়েছে খড়গপুর শহর। এই প্রথম খড়গপুর শহরে বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয়েছে এক শিশু সহ ২জনের কিন্তু তারপরও হেলদোল নেই খড়গপুর পৌর প্রশাসনের। উল্টে কোমরজলে দাঁড়িয়ে ত্রিপল বিলির ফটোশেসন করতে দেখা গিয়েছে পৌর প্রশাসককে। কনভেনশনের বক্তারা বলেছেন এই পৌরপ্রশাসন নাগরিকদের সুখস্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে শুধু উদাসীনই নয়, অপদার্থও বটে। শহরের জলনিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে নির্লিপ্ত রয়েছে পৌর পরিচালকমন্ডলী।
আমরা বামপন্থী খড়গপুর শহরের অন্যতম নেতৃত্ব মনোজ ধর বলেন, ‘গত ৫বছরে খড়গপুর পৌরসভা প্রায় ১০০কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে উন্নয়ন খাতে। এই টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে। কিন্তু কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হয়নি যাতে সামগ্রিকভাবে পৌর এলাকার উন্নয়ন হতে পারে। শহরের মধ্যে থাকা হাইড্রেনগুলি নিয়মিত পরিষ্কার না করায় পর্যাপ্ত জল বের হতে পারছেনা বর্ষার সময় যে কারনে এলাকার পর এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে।’ শ্রী ধর আরও জানিয়েছেন, শহরের মধ্যে তৈরি হওয়া হাইড্রেন বা মহানালা গুলি অসম্পূর্ণ। সেগুলিকে রেলের নিকাশি ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি।
আমরা বামপন্থী খড়গপুরের আরও এক নেতৃত্ব অনিল দাস বলেন, ‘এই পুরপ্রশাসন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ও অপদার্থ। প্রতিবছর বর্ষা এলেই মাস্টার প্ল্যানের গল্প শোনায় কিন্তু বাস্তব ঘটনা হল আদৌ কোনও মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেনি এরা। বছরের পর বছর ধরে বৃষ্টি হলেই অর্ধেক খড়গপুর শহর জলে ডুবে যাচ্ছে। কোথাও তিনদিন ধরে জল জমে থাকছে আবার কোথাও তিনমাস। যেমন খড়গপুরের ৯নম্বর ওয়ার্ড, ইন্দা আনন্দনগর। আমরা এই পৌরপ্ৰশাসনের ওপর আস্থা রাখতে পারছিনা। তাই জেলাশাসকের দ্বারস্থ হতে শহর জুড়ে গনস্বাক্ষর অভিযান শুরু করছি।’ কনভেনশন থেকে উঠে এসেছে এবছর নতুন করে প্লাবিত হওয়া বুলবুলচটি, মীরপুর ও খড়গপুর মহকুমা আদালত চত্বরের কথা।
খড়গপুর শহরে একের পর এক নয়ানজুলি বন্ধ হয়ে যাওয়া, রেলের নালাগুলিতে পলি না তোলার মত বিষয়গুলি উঠে এসেছে আলোচনায়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও কারখানাগুলির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হাওড়া মুম্বাই জাতীয় সড়কের তলা দিয়ে এক সময় খড়গপুরের শহরের বর্ষায় জল নেমে যেত কাঁসাই নদীর দিকে জাতীয় সড়কের তলা দিয়ে যাওয়া সেই নালার মুখে রেশমি মেটেলিক কর্তৃপক্ষ প্রাচীর তুলে দেওয়ার ফলে খড়গপুরের উত্তর অংশ জলে ডুবে যাচ্ছে। কনভেনশনের বক্তারা বলেন, এই বিষয়গুলি দেখা উচিৎ ছিল পৌর কর্তৃপক্ষের। খড়গপুরকে ঘিরে থাকা কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি কারখানা, মেদিনীপুর খড়গপুর উন্নয়নপর্ষদ ইত্যাদির সমন্বয়ে খড়গপুরের উন্নয়ন করা যেত কিন্তু বর্তমান পৌর কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে উদাসীন। তাই জেলাশাসকের কাছেই বিষয়গুলি প্রস্তাবাকারে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।