শশাঙ্ক প্রধান: শেষ অবধি শেষরক্ষা হলনা, জাতি বিদ্বেষ মূলক মন্তব্য করার অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং কলেজের বাংলার অধ্যাপক নির্মল বেরাকে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া অবধি তিনি কলেজে যেতে পারবেননা। শুক্রবার অর্থাৎ ১৭ই ডিসেম্বর সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ তপন দত্ত একটি চিঠি দিয়েছেন অধ্যাপক বেরাকে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে ওই মহাবিদ্যালয়েরই ‘বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা পাপিয়া মন্ডির অভিযোগের ভিত্তিতে আপনার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত শুরু হয়েছে।

উল্লেখ্য অধ্যাপক নির্মল বেরার বিরুদ্ধে অধ্যাপিকা পাপিয়া মান্ডি অভিযোগ করেছিলেন, করোনাকালে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সময় আদিবাসী শব্দটির সংজ্ঞা নিরুপন করতে গিয়ে অধ্যাপক বেরা বলেছিলেন, ‘আদিবাসী হল তারাই যারা একসময় গাছের ডালে ডালে ঝুলে বেড়াত।’ অধ্যাপিকা মান্ডি বলেছিলেন, আমি যখন ওই অনলাইন ক্লাসে আদিবাসী শব্দের অর্থ ‘আদিম অধিবাসী’ বলেছিলাম তখন অনলাইন ক্লাসেই অধ্যাপক বেরা ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে আমাকে বলেন, ‘তুমি ভুল শেখাচ্ছ পড়ুয়াদের। আদিবাসী অর্থ যারা গাছের ডালে ডালে ঝুলে বেড়াত।’ অধ্যাপিকা মান্ডি বলেন, ওই নিম্নরুচির মন্তব্য ছিল আমাকে উদ্দেশ্য করেই কারন আমি আদিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত। অত্যন্ত অপমানিত হয়েছিলাম সেদিন। শুধু তাই নয়, ওই অধ্যাপক এর আগেও আমার প্রতি জাতিবিদ্বেষ মূলক ঘৃণা উগরে দিয়েছেন। আমাকে দিয়ে স্টাফরুমের জানলা দরজার পর্দা লাগানোর চেষ্টা করেছেন।’
গত ১৯ অক্টোবর অধ্যাপক নির্মল বেরা এবং কলেজ অধ্যক্ষ তপন দত্তের বিরুদ্ধে সবং থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অধ্যাপিকা পাপিয়া মান্ডি। ওই অভিযোগে তিনি বলেন, অধ্যাপক বেরাকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন কলেজ অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ নিজেও জাতি বিদ্বেষের পক্ষেই কারন তাঁর কাছে অভিযোগ জানানো স্বত্ত্বেও তিনি অধ্যাপক বেরার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি উল্টে পুরস্কার স্বরূপ শ্রী বেরাকে স্টাফ কাউন্সিলের সম্পাদক করা হয়েছে। পুলিশ একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিককে দিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে। যদিও সেই তদন্ত গড়িমসি করা হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে আসরে নামে আদিবাসী সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগনা মহল। নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার পর গত ১৩ই ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সবং কলেজ এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় স্তব্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। এরপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ওই দিন আদিবাসী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার। তিনি আশ্বস্ত করেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে। সংগঠনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় ৭দিন অপেক্ষা করবেন তাঁরা। নচেৎ ২১শে ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধ। এরমধ্যেই ১৭ তারিখ অধ্যাপক নির্মল বেরাকে বরখাস্ত করা হল।
নির্মল বেরার বরখাস্ত হওয়ার খবরে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপিকা পাপিয়া মান্ডি। তিনি বলেন, ‘ আমি কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছি যে আমার দীর্ঘ লড়াই এবং আমাদের আদিবাসী সমাজের সহযোগিতায় একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমি আইনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। আইন তার পথে চলছে। আমি আইনে আস্থা রাখছি।’ তাঁর অভিযোগ ছিল অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও সে বিষয়ে তিনি কী ভাবছেন জানতে চাওয়া হলে অধ্যাপিকা মান্ডি বলেন, ‘সে বিষয়েও আমি আইনের দ্বারস্থ হয়েছি। আশাকরি সেখানেও সুবিচার পাব।’ বিষয়টি অধ্যাপক নির্মল বেরার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।