নিজস্ব সংবাদদাতা : ২দিন পের হয়নি হলদিয়া কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে দল বহিস্কার করেছে দলেরই দুই শীর্ষ নেতাকে। তারপরও টনক নড়েনি হলদিয়ার তৃনমূল কংগ্রেস কর্মীদের। একটি শিলান্যাস ফলকে কেন তাদের নেতার নাম নেই সেই অভিযোগ তুলে শিলান্যাস মঞ্চ ও নামফলক ভাঙচুর করলেন একদল তৃনমূলকর্মী।

শুক্রবার হলদিয়া টাউনশিপে প্রস্তাবিত আধুনিক সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এমনই বেনজির বিশৃঙ্খলা ঘটালেন একশ্রেণীর তৃনমূল কর্মী যাতে রীতিমত আতঙ্কিত শিল্প মহল। তাঁদের বক্তব্য এই দলের কর্মীদের ওপর আদৌ নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ আছে তো?
জানা গেছে এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনেই একটি আধুনিক মানের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে হলদিয়ার দুটি শিল্প সংস্থা।
প্রায় ৮কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের পুরো টাকাটাই জোগাবে ইন্ডিয়ান অয়েল, হলদিয়া রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ। কাজটি হবে হলদিয়া পুরসভার তত্বাবধানে। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে হার্ড স্ট্যান্ড ও সীমা নিকাশি নির্মাণ, যাত্রীবাহী শেড ও বাস বে, স্টল বিল্ডিং, বিশ্রাম কক্ষ, টিকিট কাউন্টার, পানীয় জল, স্যানিটেশন ইত্যাদি। শুক্রবার বিকেলে সেই প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠান নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সকালেই ঘটে যায় ধুন্দুমার কান্ড। ভিত্তিপ্রস্তর ফলকে কেন কাউন্সিলর দেবপ্রসাদ মন্ডলের নাম নেই তাই নিয়ে ভাঙচুর করেন মন্ডলের অনুগামীরা। পরে নিজেদের ভুল শুধরে নেওয়ার কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন আইওসি কর্তৃপক্ষ।
বিকালে অবশ্য যথারীতি অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত ছিলেন হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান সুধাংশু মন্ডল, স্থানীয় কাউন্সিলার দেবপ্রসাদ মন্ডল, আইওসি হলদিয়া রিফাইনারির চেয়ারম্যান পার্থ ঘোষ প্রমুখরা। পুরসভার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, হলদিয়া সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড থেকে রোজ ৪০টি রুটে প্রায় ২০০ সরকারি বেসরকারি বাস ছাড়ে। এতদিন স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড এবং উপযোগী পরিকাঠামো না থাকায় ক্ষোভ ছিল নিত্যযাত্রী থেকে বাস কর্মচারী সকলের। স্বাভাবিকভাবে আধুনিক বাস টার্মিনাসটি তৈরি হলে নাগরিকদের অনেকটা সুবিধা হবে।
পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, বাস টার্মিনাস গড়ার পরিকল্পনা বহু পুরোনো হলেও ওই এলাকা বন্দর কর্তৃপক্ষের। জমিতে নির্মাণকাজের কোনও অনুমতি পুরসভাকে দিচ্ছিল না বন্দর কর্তৃপক্ষ। জমিজটেই আটকে ছিল বাসস্ট্যান্ড তৈরির কাজ। ২০১৮ সালে ৪ কোটি টাকার বিনিময়ে দীর্ঘমেয়াদি লিজ চুক্তির ভিত্তিতে বাসস্ট্যান্ডের জন্য প্রয়োজনীয় দু’একর জমি পুরসভাকে হস্তান্তর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এবার বাধা হয় পুরসভার আর্থিক সঙ্গতি। শেষমেশ সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় এগিয়ে আসে ওই দুটি শিল্পসংস্থা।
ভাঙচুরের ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করে এক শিল্প কর্তা জানিয়েছেন, ‘ ভেবেছিলাম এক্সাইড কারখানায় বিশৃঙ্খলার পর দুই নেতাকে বহিস্কারের পর ওনাদের দলের কর্মীরা কিছুটা বুঝবেন যে সরকার কী চাইছে। কিন্তু আজকের ঘটনা সেই ধারণা বদলে দিল। শিলান্যাস ফলকে জনে জনে নাম দেওয়া যায়? তাও বলছি যদি ভুল হয়েই থাকে আমাদের জানানো যেত। তা না করে এই ভাঙচুর আসলে আমাদের মানে হলদিয়ার শিল্প সংস্থাগুলিকে সেই ভয় দেখিয়ে চাপে রাখার কৌশল নয় কী?’